প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। দিনেদিনে বেড়েই চলছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা। এই দুর্ঘটনাগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় অধিকাংশ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কারনে। তারপরও দেখা যায় রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)র নিবন্ধিত বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৬০টি। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখের বেশি গাড়ি ফিটনেস নেই। আরেক গবেষণা থেকে দেখা যায় ২৪ শতাংশ যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট সঠিক নেই অথবা গ্রহণযোগ্য নয়। ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই ৩৩ শতাংশ বাসের, ৫৬ শতাংশের স্পিড গভর্নর সিল নেই। ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে ফিটনেসবিহীন মোটরযান ধ্বংস বা চিরতরে ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে বিআরটিএ। সড়কে চলাচলের জন্য যেকোনও ভেহিক্যালের যান্ত্রিক ও কাঠামোগত ফিটনেস থাকতে হয়। কাঠামোগত দিকটি চোখে দেখে দেওয়া গেলেও যান্ত্রিক দিক পুরোপুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর নির্ভর করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে ফিটনেসবিহীন গাড়িকে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। ফলে ফিটনেসবিহীন গাড়িও পেয়ে যাচ্ছে ফিটনেসের সনদ। তাছাড়া দেখা যায় ফিটনেস সনদ হালনাগাদের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নিয়মিত করছে না বাস মালিকরা। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিকট শব্দ ও কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। ফলে মানুষের নানা অসুখবিসুখ হয়। তাছাড়া এসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে যেতে যাত্রীরাও চরম ভোগান্তি সম্মুখীন হয়। অনেকেই গাড়ির হেল্পার থেকে চালক হয়েছে। তাদের নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। কিন্তু তাদের হাতেও দেখা যায় অরিজিনাল লাইসেন্স। এসব কারণে অবাধে সড়কে ঝড়ছে প্রাণ। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে এই সমস্যা রোধ করা সম্ভব। কেবল কাগজপত্র আপডেট করলেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি ফিট হয়ে যায় না। গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস, সিট, বাম্পার, ব্রেক, লাইট, বডিসহ সবকিছু বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে, এই শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিআরটিএতে লাইসেন্স ও ফিটনেসসহ বিভিন্ন সেবায় যে ঘুষ দিতে হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা কমানো না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা এবং নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সরকারের পরিকল্পিত কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com