• আজ- রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ অপরাহ্ন

পুনরাবৃত্তি

ফাহিয়া হক ইন্নি / ৪১৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

add 1
  • ফাহিয়া হক ইন্নি

জীবন গতিশীল, কারো জন্য কারো পথচলা থেমে থাকে না। আর থেমে যাওয়া মানেই তো মৃত্যু। পূর্ণতা অপূর্ণতা চাওয়া পাওয়া মিলে ভালোই একটা পথচলা হয় জীবনের। ভালোবাসা সবার জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ প্রায়। ভেবে নেওয়া হয় কম বেশি সবাই ই ভালোবাসতে জানে, কিন্তু বিষয়টা পুরোপুরি না হলেও কিছুটা ভুল, আমার জীবনে যা এসেছিলো তা ছিলো সব ভালো লাগা। সাময়িক ভালোলাগা। ভালো লাগা না হলে হয়তো আমার জীবনটাও অন্যরকম হতো আর দশটা মেয়ের মতো। আমারও একটা সংসার থাকতো। ভার্সিটির প্রথম বর্ষ আর ভালোলাগাটা এখান থেকেই শুধু। মানুষের সৌন্দর্যের প্রতি কখনোই কোনো আগ্রহ ছিলো না।আমাকে যেটা আকর্ষিত করতো তা ছিলো জনপ্রিয়তা। আর সময়ের সাথে সাথেই আমি প্রেমে পড়েছিলাম এক লেখকের। প্রায় বছর দশেক আগে মোটামুটি ভালো জনপ্রিয় ছিলো ও কম বেশি সবাই ই চিনতো এই তরুন লেখককে। লেখালেখি ঈর্ষণীয় কত মেয়ের ক্রাশ ছিলো সে, অনেকের ভালোবাসা আর আমার ভালো লাগা, আবেগের বশে ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে ম্যাসেজও করেছিলাম।কিন্তু এতো ব্যস্ত ব্যাক্তিটির তখন আমার রিকুয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করার সময় হয়ে উঠি নি। দেখতে দেখতে ভার্সিটির কয়েক মাস কাটে।নতুন মাস বাংলায় ফাল্গুন ইংরেজিতে তখন ফেব্রুয়ারী “ভাষার মাস সাথে ভালোবাসার মাস বলেও পরিচিত।শহিদের কথা না ভাবলেও বইমেলার কথা কম বেশি কেউই ভুলি না। জমজমা পরিবেশ সবাই বইমেলা যাচ্ছে আর আমি তো বইমেলায় গিয়েই প্রথমে তাকে খুঁজছিলাম আর একদিন ভাগ্যক্রমে দেখা হলো ভাষার ও ভালোবাসার মাসে। ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি হতে খুব কমই দেখা যায় না। তবে সেদিন হয়েছিলো, দারুন বৃষ্টি ছাতা দিয়েও দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। আর এই তখনই আমি আমি দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে বৃষ্টি উপভোগ করছিলাম তখনই দেখলাম সামনের স্টোর থেকে সাদা পাঞ্জাবি পড়া একজন সুস্বাস্থ্যবান ব্যক্তি আমার দিকে এগিয়ে আসছে ছাতা হাতে ছিলো বলে তার মুখটা আমি তখন দেখিনি। কাছে এসেই ধমক দিয়ে বললো এই অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজছো কেন?এত বড় মেয়ে হয়েও মাথায় তেমন কোনো বুদ্ধিসুদ্ধি হয়নি দেখছি।আমি তখন তার মুখেরপানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। এক হাতে ছাতা আরেক হাত দিয়ে আমাকে ধরে টেনে নিয়ে গেলে বইয়ের স্ট্রোরে কাছে, আর আমি পরে ছিলাম আমার কল্পনার রাজ্যে। আমার স্বপ্নের রাজকুমারের সাথে এভাবে দেখা হবে কোনোদিনও ভাবি নি। স্টোরে বসার ব্যবস্থা করে দিয়ে রুমাল এগিয়ে দেয়। আমি সম্পূর্ণ ঘটনা বার বার কল্পনা করছিলাম। এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন? এই হিসেব মেলাচ্ছিলাম। হঠাৎই সে আমার কাছে এসে নাম জানতে চাইলো, নাম বলতেই আমার নামের প্রশংসা করলো সে। গল্প হলো কোথায় থাকি ?

কিসে পড়ি? কোন বিষয়? এগুলো নিয়েই। আর গল্পে গল্পে বলেই ফেল্লাম সে আমার ক্রাশ।বললাম তাকে ফেসবুকে মেসেজও করেছিলাম। এই কথা শুনে তৎক্ষণাত মেসেজ চেক করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা কি ভেবে যেন অ্যাক্সেপ্টও করে নেয়। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থেমে গেলে আমিও চলে আসলাম। এরপর থেকে আমাকে নিয়ে লেখা হলো অনেক গল্প, কবিতা। কিন্তু কেউই জানতে পারলো না তার গল্প কবিতা চিঠির নীলা নামক মেয়েটি ছিলাম আমি। আমরা আবার দেখা করি আর দেখা করার খবরটা ঠিকানাটাও দেওয়া হয় চিঠিতে। প্রায় দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক আমাদের। সে কখনোই আমারে বিয়ের জন্য জোর করে নি। সব সময় আমাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতো। আমিও বুঝতে পারি না এমন একটা ব্যাক্তি আমার মতো একটা সাধারণ মেয়েকে কিভাবে এতো ভালো বাসত। খুব ভালোই ছিলাম আমরা। হঠাৎ ভার্সিটিতে অল্প বয়সী নতুন শিক্ষক আসলো। গবেষণা করে জানতে পারলাম নতুন শিক্ষকদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস থেকে শুরু করে সবদিক থেকেই অনেক ভালো পজিশন। দেখতেও ভালো স্মার্ট। আমার ভালো লাগা বদলালো । খুব অল্প সময়েই নতুন স্যারের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলি। যেহেতু নিলয়ের সাথে যে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে এটা কেউই জানতো না তাই নতুন স্যারের সম্পর্কেও আমি খুব সহজেই জড়িয়ে পরেছিলাম। আর নিলয়ও এ ব্যাপারটা জানতো না। আমি একসাথে দুজনের সাথেই সম্পর্কে ছিলাম। একটা সময় পর রণি আমাকে বিয়ের কথা বলে। সেও আমাকে অনেক ভালোবাসতো। আমিও ভেবে দেখলাম। লেখককে বিয়ে করে আমি তেমন কিছুই পাবো না এর চেয়ে রণিকেই বিয়ে করে নিবো।বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলি আর অন্যদিকে নিলয়কে জানিয়ে দেই বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। একথা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে প্রথম বারের মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় করে একটা ছেলের এমন অসহায় অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। আমি চলে আসি আর তাকে বলি আমার বিয়েতে কোনো জামেলা না করতে। গায়ে হলুদের সন্ধ্যায় খবর আসলো রণির চাচাতো ভাই আত্মহত্যা করেছে । হলুদের অনুষ্ঠান ফেলে সবাই সেখানেই ছুটে যায়। আর সেদিন আমি জানতে পারলাম রণি আর নিলয় আপন চাচাতো ভাই। আমার মাথাও তখন আকাশ ভেঙ্গে পরে। কিন্তু কেউই নিলয়ের আত্মহত্যার কারণ জানতে পারে নি এই ভেবে আমি স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলি। নিলয় আর আমার প্রেমের সম্পর্ক কেউ না জানার কারণ ছিলো আমি ই তাকে বলেছিলাম প্রকাশ্যে আমি তার অনেক বড় ফ্যান আর প্রেমিকাটা সিক্রেট। কখনোই মেসেজে আমরা কথা বলি নি কারণ নিলয়ের ইচ্ছা ছিলো চিঠির মাধ্যমে আলাপ করবে। তবে চিঠি সে ই লিখতে আমি কখনোই তাকে চিঠি দেই নি আমার কথাগুলো সরাসরি ই বলতাম । আফসোস হয়েছিলো কিন্তু অনুতপ্ততা কখনো আমার মধ্যে ছিলো না। বিয়ের দিন খবর আসলো রণি হার্ট এ্যাটাক করেছে আমাদের বাসার সবাই রণিদের বাড়ি গেলে দেখি রণি কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়েছে সবাই আমাকে রণিদের বাসায় রেখেই হাসপাতালে গেলো। আমি তখন রনির রুমে গিয়ে তার সবকিছু দেখছিলাম।

হঠাৎ বিছানার উপরে রাখা একটা প্যাকেটে চোখ পরলে দেখি নিলয়ের কাছ থেকে আসা পার্সেল দেখেই বুঝলাম রণি এটা খুলে দেখেছে। আমিও দেখতেই হাত থেকে নিচে পরে গেলো বক্সাটা যেটা তুলতে নিচে ঝুকতেই দেখলাম একটা কাগজে অনেক কিছু লেখা কাগজটা হয়তো কারো চোখেই পরে নি আমি নিয়ে পড়তেই দেখলাম নিলয় আমাদের সম্পর্ক আর তার মৃত্যুর কারণ আমাকে ভালো রাখার দায়িত্ব সহ অনেক কিছুই রণিকে জানিয়ে গিয়েছে আর তখনই বুঝলাম নিলয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো রনি। যারা একজন আরেক জনের জন্য জীবনও দিতে পারে, আর এই বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা নিলয় আমাকে আগেও বলেছিলো দেখা করাতে চাইছিলো কিন্তু আমাকে দেওয়া কথা রাখতে সে আর দেখা করায় নি। এবার আমার কাছে রণির হ্যার্ট এ্যাটাকের কারণটা স্পষ্ট হলো। উপলব্ধি করতে পারছিলাম গতকাল নিলয়ের মৃত্যুটা রণি মেনে নিতে পারলেও যখন জানতে পারলো তার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রাণের প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি।কাগজটা আমি সাথে সাথেই পানিতে ভিজিয়ে ছিড়ে ফেলেছিলাম। কারণ নিলয়ের মৃত্যুর জন্য আমি ই দায়ী তা যেন কেউ না জানে। আর তখনই হাসপাতাল থেকে খবর আসলো রণিও পরলোকগমন করেছে। দুই পরিবার কান্নায় ভেঙ্গে পরলো। সবাই ভাবছিলেন আমি হয়তো সবচেয়ে বেশি শোকাহত হয়েছি। কিন্তু কেন যেন আমার চোখ থেকে কারো জন্য এক বিন্দু পরিমাণও অশ্রু ঝড়লো না। কারণ দুজনেই আমার ভালো লাগা ছিলো ভালোবাসা না। তখন আমার বয়স বিশ ছিলো। এখন আমার বয়স ত্রিশে পরেছে।তখন আমি এসব ব্যাপারে অনুতপ্ত না হলেও এখন অনুতপ্ততার যন্ত্রণা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে মারছে। চাইলেও কাউকে কিছু বলতে পারছি না ফলে মানসিক চাপটা দ্বিগুন হয়েছে।বিয়ে হয়েছিলো, সংসারও হয়েছিলো, একটা মেয়েও আছে আমার চার বছরের কিন্তু সব থেকেও কিছুই আমার নেই। কিছুদিন আগেই ডিভোর্স হয়েছে আমাদের। সংসারের ইতিটানি। এসব মানসিক যন্ত্রনা আমাকে সংসারে অমনোযোগী করে তুলেছিলো। আর পারছিলাম না সহ্য করতে। বারবার মনে পরতো সেই সব দিনের কথা। দুইদুইটা ছেলেকে মেরে ফেলার পর কি ভালো থাকা যায়। তারপর একদিন কিছু ঘুমের ঔষধ খেয়েই আমি তৃত্বীয়বারের মতো খুন করি এবার আর অন্য কাউকে না আমি নিজেকে খুন করি। সবাই ভাবে মেয়েটার ভাগ্যটাই খারাপ কিন্তু আমার ভাগ্য তো আমি নিজের হাতেই লিখেছিলাম। আজ দশবছর আমার আত্মা আজো এ বাসার বাহিরে যেতে পারে নি। নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়ে নিলি মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। আর ও যে রুমটায় থাকে সেটাতে একসময় আমি থাকতাম কিন্তু এখন এ বাড়িতে আমার কোনো চিহ্নই নেই। এখনো আমি এই রুমেই থাকি কিন্তু কেউই দেখতে পায় না।তবে আমি আজ নিলিকে দেখা দেব বেশ কয়েকদিন ধরে লক্ষ করে দেখলাম মেয়েটিও আমার পথ অনুসরণ করছে। ভালো লাগা আর ভালোবাসার পার্থক্য করতে পারছে না। বলেছিলাম সবাই ভালোবাসতে পারে না কারণ ভালোবাসা হয় নি:স্বার্থ। যে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখবে তারটা ভালো লাগা যা সময়ের সাথে বদলাতে পারে কিন্তু ভালোবাসা সময়ের সাপেক্ষে বৃদ্ধি পায়।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (সন্ধ্যা ৭:১২)
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৯ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ৭ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT