{আমি নিলি আর এই লেখাটা হয়তো আমার সুইসাইড নোট}
আমি জানি না তবে আমার জীবন ধ্বংসের কারণটি কি আমার কল্পনা নয়তো আমার কবিতা। এদের মধ্যেই কোনো একটা হবে তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমি কখনোই আমার অনুভূতি বা ভালোলাগো কাউকে প্রকাশ করতে পারিনি। আমার অনুভূতি ভালোলাগা ভালোবাসা সবটা প্রকাশ পেয়েছে আমার কল্পনায় আর ডায়েরির পাতায়, কল্পনা থেকে শব্দ জড়ো করে বুনেছি ছন্দ, কিছু চরণ একত্র হয়ে সৃষ্টি করেছে কবিত নামক বিশেষ অবাস্তব বস্তুর। প্রেম, প্রণয় না হলেও আমার জীবনে এসেছিলো দারুন বিপর্যয়। এটা আমি তখন অনুভব করতে না পারলেও তখন খুব করে বুঝতে অনুভব করি এখন । অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো মস্তিষ্কে অবাধ বিচরণ করে ফলে সেগুলো থেকে দূরে থাকা যায় না। আর আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি এসব হুট হাট ভালো লাগা আকর্ষণ আর সেই মানুষগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে কবিতা লিখেছি। বাস্তবে স্পর্শ না করলেও কল্পনায় স্পর্শ করেছি বহুবার।আমার কবিতার শব্দ, ছন্দও স্পর্শ করেছে আমার ভালো লাগার মানুষকে। আমি ক্লাস এইটে থাকতে অনুপম নামক এক ম্যাক্রো ফটোগ্রাফারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি। এই আকর্ষণের মূল কারণ ছিলো পোকামাকড়। পোকামাকড় আমার খুব পছন্দ আর সে দারুন লিখতো কবিতা, গল্প, উপন্যাস। সবকিছু জেনে আমার আকর্ষণ দৃঢ হয়। আমিও তাকে নিয়ে লিখি। সময়ের সাপেক্ষে জানতে পারি তার প্রেমিকা আছে আমার হৃদয়ে চিড় না ধরলেও কিছুদিনের মধ্যে তাদের চার বছরের সম্পর্কটা ভেঙ্গে যায়। আর কোনোভাবে সেই শূণ্যস্থানটাতে আমি চলে যাই। বেশ কয়েকবার দেখা হলে কবিতার স্পর্শ অচিরে বাস্তবে রূপ নেয়, এটা আমার জেনে শুনে করা ভুল ছিলো না এটা ছিলো অন্যতম একটা পাপ। বলা হয় নি আমি বেশ কয়েকজনকে নিয়ে ই লিখেছিলাম। ব্যাংকে যাওয়া আসার ফলে আমার দেখা হতো এক মাত্রা অতিরিক্ত সুদর্শন সহকারী ইনচার্জের সাথে। ছেলেদের এতো রূপের অধিকারী হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয় না ।কারণ প্রথম দেখায় ই আমি তার থেকে চোখ সরাতে পারি নি। মনে মনে ভাবছিলাম সে যদি আমার প্রেমিক হয় আমাকে প্রেম প্রস্তাব করে তাহলে কেমন হয় ,আমার কল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে বেশি সময় নিলো না এবারও, যদিও অনুপ আমার জীবনে ছিলো। আমি এই সুদর্শন লোকটাকে নিয়েও লিখেছি। আমাদের দেখা হয়েছে অনেকবার। আমার সবটা ভালোলাগা আর বয়সের দোষ হলেও আমার ভালোলাগার প্রতিটা লোকের বয়সটা ছিলো ২৫ এর উপরে । এই বয়সে যৌনতা খুবই বাজে ভাবে মানুষকে গ্রাস করে। ১৬ বছর বয়সী আমি শুধু আমার ভালো লাগার পিছনে ছুটেছি। আমার ভালো লাগা, কল্পনা, কবিতা এই দুইজনে সীমাবদ্ধ না থাকার কারণে আমার ঠোঁট একাধিক লোকের ঠোঁটকে স্পর্শ করেছে।একাধিক লোকের হাতে ঘর্ষিত হয়েছে আমার বুক। এসব ভালো না লাগলেও মানুষ গুলোকে তো আমার ভালো লাগতো তাই বিরক্তি নিয়েই দেখা করতাম। তখন উপলব্ধি না করলেও ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমি সবটা উপলব্ধি করি ।কতটা পাপ কাজে নিম্নজ্জিত হয়েছি আমি তা অনুভব করে নিজের প্রতি এক দারুন ঘৃণার জন্ম হয় আমার। দেখা করা কেন কথা বলাও বন্ধ করে দেই সবার সাথে। তারপরও আমি কোথাও খুঁজে পরাচ্ছিলাম না মানসিক শান্তি। নিজেকে মহা পাপী মনে হতে লাগলো ।কাউকে নিয়ে কল্পনা বা কবিতা কিছুই লিখবো না। কারণ কল্পনায় কলম ছুয়িঁয়ে কবিতায় পরিণত করার পর ওইটা যদি বাস্তবে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তাহলে সেখাই কলম রেখে দেওয়া উচিত। কল্পনা কল্পনাতেই সুন্দর । বাস্তবে পরিণত হলে তা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে আর জীবনকে বিষিয়ে তুলবে তা তো নি:সন্দেহে বলা যায়। এজন্যই কল্পনা করি না আর কলম ফেলে দিয়েছি বহুদূর। বাস্তব হয়ে ফিরবে না ঘর, থাকুক শূন্যতায় ভরে আমার শহর। কল্পনা গুলোর সাথে হয়েছে চুক্তি, শব্দগুলোকে আর দেওয়া যাবে না মুক্তি। লেখা হবে না আর কোনো কবিতা, খালি পরে থাকবে খাতার প্রতিটি তা’। খনিকের এই জীবনে সময় খুবই অল্প, আর কত লিখবো আজগুবি গল্প। তারপরও আমি সন্তুষ্ট না। নিজেকে কেমন চরিত্রহীন মনে হয়।আয়নায় চোখ রাখতে পারি না। কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলতেও না। আমার পাপ গুলো আমার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খায় দিনে অসংখ্য বার। আমি আর পারছি না এভাবে জীবন কাটাতে। নিজের প্রতি ঘৃণা জিনিসটা অনেক খারাপ। আমার ইচ্ছা নেই পৃথিবীতে বাঁচার। আর এখানেই কলম রাখছি। দয়া করে আমাকে মাফ করো আব্বু আম্মু। আমি এই কারণেই এতোদিন তোমাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারি নি। আজ না হোক কালতো সবটা জানতে পারবে তাই আমি ই না হয় জানিয়ে গেলাম। এসব কিছু আমি বেঁচে থাকলে কাউকে বলতে পারতাম না। বলতাম ই বা কোন মুখে।সবটা তো আমি জেনে বুঝে ই করেছি । পারলে ক্ষমা করো। আমার সত্যিই অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবে চরিত্রহীন হয়ে পৃথিবীতে বাঁচাটা আমার জন্য কষ্টকর হবে। ভোর হয়ে আসছে দেরী করবো না । জানি এসব কিছু জানার পর তোমরাও আমাকে ঘৃণা করবে। আমি ঘৃণার ই যোগ্য। পারলে ক্ষমা করো। বিদায়…