সাহিত্যপাতা: অভিনেতা, নাট্যসংগঠক ও লেখক অহীন্দ্র চৌধুরী। তিনি ১৮৯৫ সালের ১২ আগস্ট পশ্চিম বঙ্গের কলকাতা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় নটসূর্য অহিন্দ্র চৌধুরী মৃত্যু বরণ করেন। তিনি লন্ডন মিশনারি স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। কিন্তু অল্প বয়সেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে তিনি থিয়েটার ও যাত্রাভিনয়ে যোগ দিয়ে এখানে সেখানে শখের থিয়েটার দলে অভিনয় করে বেড়াতেন।
১৯৫৪ সালে অহীন্দ্র চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীত-নাটক আকাদেমির অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘গিরিশ লেকচারার’ মনোনীত করে। তার প্রদত্ত বক্তৃতামালা বাংলা নাট্য বিবর্তনে গিরিশচন্দ্র শিরোনামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তার অপর গ্রন্থ নিজেরে হারায়ে খুঁজি আত্মজীবনীমূলক রচনা। অভিনয়ে অসামান্য দক্ষতার জন্য ১৯৫৮ সালে সঙ্গীত-নাটক আকাদেমি কর্তৃক তিনি পুরস্কৃত হন এবং নাট্য শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্টার থিয়েটার পদক’ (১৯৭২) লাভ করেন। এছাড়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রাপ্ত হন।
১৯২৩ সালে কর্ণার্জুন নাটকে তার প্রথম অভিনয়। এছাড়া শ্রীরামচন্দ্র, অশোক, চক্রব্যূহ, সাহজাহান, মহারাজ নন্দকুমার, চন্দ্রগুপ্ত, মিশরকুমারী ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। চন্দ্রগুপ্ত নাটকে যে অভিনেতা রণপরিচালক সেনানায়ক সেলুকাসের ভূমিকায় আশ্চর্যভাবে বিশ্বাসযোগ্য, তিনিই আবার 'শাহজাহান' নাটকে বৃদ্ধ সম্রাটের অবিকল প্রতিমূর্তি। আবার চিরকুমার সভায় রসিকের ভূমিকায় যখন নেমেছেন, তখন রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পিত চরিত্রটি নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তার শেষ অভিনীত নাটক সাহজাহান মঞ্চস্থ হয় ১৯৫৭ সালে মিনার্ভা থিয়েটার মঞ্চে। এই নাটকে তিনি নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন। মঞ্চের পাশাপাশি অহীন্দ্র চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন।
১৯২১ সালে ফটো প্লে সিন্ডিকেট নামে একটি প্রতিষ্ঠান যখন তারই লেখা সোল অব দি সস্নেভ বইখানি চিত্রায়িত করেন, তখন তিনি তাতে ধর্মদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সাধারণ লোকসমাজে এবং সমালোচকদের নজরেও বইখানি যথেষ্ট প্রশংসা পায়। ১৯২২ সালের মার্চ মাসে কর্নওয়ালিস থিয়েটারে ছবিটি মুক্তি লাভ করে। ছবিটিতে অহীন্দ্র চৌধুরীর অভিনয় বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। অহীন্দ্র চৌধুরী ১৯৩১-৫৪ সাল পর্যন্ত ১২৫টিরও বেশি সবাক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন।
অহীন্দ্রচৌধুরীর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি গুলো হচ্ছে- ১। সোল অব দি সস্নেভ (১৯২২), ২। বিষবৃক্ষ ( ১৯২২, নায়িকা - নিভাননী, প্রভা), ৩। প্রেমাঞ্জলি ( ১৯২৪), ৪। মিসর রানী (১৯২৫, নায়িকা- নিহার বালা), ৫। দুর্গেশ নন্দিনী (১৯২৭), ৬। শাস্তি কী শান্তি (১৯২৮, নায়িকা - প্রভাবতী, তারাসুন্দরী), ৭। রাজসিংহ (১৯৩০, নায়িকা- পেসেন্স কুপার ও ইন্দিরা), ৮। ঋষির প্রেম (১৯৩১, কর্নাটরাজ চরিত্রে), ৯। প্রহলাদ (১৯৩১, নায়িকা - নিহার বালা ও দেব বালা), ১০। বিষ্ণুমায়া (১৯৩২, কংস চরিত্রে, নায়িকা - শিশুবালা), ১১। চাঁদ সওদাগর (১৯৩৪, নাম ভূমিকায় তিনি, নায়িকা- নিহার বালা), ১২। রূপলেখা (১৯৩৪, সম্রাট অশোক চরিত্রে), ১৩। মহুয়া (১৯৩৪, হুমড়ো সরদার চরিত্রে), ১৪। দক্ষযজ্ঞ (১৯৩৪, দক্ষ চরিত্রে), ১৫। ভক্ত কী ভগবান (হিন্দি ছবি, ১৯৩৪, নায়িকা- দেব বালা), ১৬। কবীর (হিন্দি ও বাংলা ছবি, ১৯৩৫, নায়িকা- উমাশশী, তারা বাঈ), ১৭। বিদ্রোহী (১৯৩৫, নায়িকা- ডলি দত্ত, ইন্দু বালা), ১৮। কণ্ঠহার (১৯৩৫), ১৯। প্রফুল্ল (১৯৩৫, নায়িকা- শ্রীমতি প্রভা ও রানী বালা), ২০। বলিদান (হিন্দি, ১৯৩৫), ২১। তরুবালা (১৯৩৬), ২২। কৃষ্ণসুদামা (১৯৩৬), ২৩। পরপারে (১৯৩৬), ২৪। রজনী (১৯৩৬), ২৫। দেবী ফুল্লরা (১৯৩৮, নায়িকা- শিশু বালা) ইত্যাদি। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি শ্রাবণ সন্ধ্যা (১৯৭৪)।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com