গত দু’বছরের ন্যায় এবারও আমাদের এলাকায় অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচলে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মনে মনে আনন্দিত হই এই ভেবে যে, আমাদের এলাকায় এরকম একটা বিশাল মেলার আয়োজন! কিন্তু যখন পকেটের কথা ভাবি, তখন সেই আনন্দে ভাটা পড়ে অনেকটাই। এদিকে ক্লাস নাইনে পড়ুয়া আমার মেয়ে দিশা বাণিজ্য মেলা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই আবদার করছে মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার ছেলে সিয়াম এ’বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। সে তার পড়া, কোচিং, মডেল টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত। তাই তার মেলার ব্যাপারে তেমন মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে।
দিশা আজ বিকেলে নাছোড়বান্দা, তাকে মেলায় নিয়ে যেতেই হবে।
আমি বললাম, আজ না মামণি। অন্যদিন যেয়ো।
দিশা বলল, তুমি গতকালও একই কথা বলেছিলে। চলো আজই যাই।
আমি বললাম, আজ একটু কাজ আছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে নিয়ে যাব। যাও তো এখন, বিরক্ত করো না।
দিশা মুখ বাঁকা করে চলে গেল আমার সামনে থেকে। তার রুমে গিয়ে কী যেন বিড়বিড় করছে, আর মন খারাপ করে বসে আছে।
দিশার মা বলল, আজই মেলায় নিয়ে যাও তোমার মেয়েকে। নইলে শান্তি দিবে না।
তুমিও দেখছি মেয়ের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছো। আচ্ছা, দিশাকে বলো রেডি হতে।
এদিকে বিকেলের সময় সিয়াম বিছানায় শুয়ে বইয়ে চোখ বুলাতে বুলাতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে।
আচ্ছা! সিয়ামকেও ঘুম থেকে উঠাও, যেতে চাইলে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলো।
সিয়াম চোখে-মুখে ঘুম নিয়ে বলল, আমার মেলায় যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে নেই।
আমি মুচকি হেসে বললাম, কিছুটা ইচ্ছে আছে তাহলে! চলো, মেলা থেকে ঘুরে আসি। ভালো লাগবে। দুই-এক ঘণ্টার জন্য পড়ার তেমন ক্ষতি হবে না। অন্য সময় পুষিয়ে নিও।
সিয়াম বলল, ঠিক আছে আব্বু। রেডি হচ্ছি।
সিয়ামের আম্মুকেও ডাকলাম, তুমি যাবে না?
বাড়ির বারান্দা থেকে আওয়াজ এলো, না। তোমরাই যাও। পারলে আমার জন্য একটা ভালো ডিজাইনের শাল/চাদর কিনে আনবে মেলা থেকে।
আমিও রেডি। সিয়াম ও দিশাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। সামনে একটু এগোতেই ব্যাটারিচালিত একটা অটোরিক্সা পেলাম। একশ’ টাকা ভাড়া ঠিক করে সোজা চলে এলাম বাণিজ্য মেলার প্রবেশ গেইটের কাছাকাছি। কাউন্টার থেকে তিনটি টিকিট কিনে তাড়াতাড়ি করে বঙ্গবন্ধু টানেল সদৃশ একটা মনোরম গেইট পার হয়ে মেলা চত্বরে ঢুকে পড়লাম। দিশা তো মহাখুশি। সামনেই পানির ফোয়ারা। সবকিছু অবলোকন করছে আর সিয়ামকে হাত নেড়ে দেখাচ্ছে। সিয়াম ও দিশা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে মেলা চত্বরের ভেতরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির আদলে তৈরি করা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত সেই বাড়িটি দেখে। আমিও তাদের সঙ্গে অবাক দৃষ্টিতে দেখেছি আর বিস্মিত হয়েছি।
মেলায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন/স্টল এবং বিভিন্ন প্রোডাক্টের প্রেজেন্টেশন দেখতে দেখতে কখন যে এক ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, তা টের পাইনি। ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষি তেমন চোখে পড়েনি। কারণ, বেশিরভাগ পণ্যেই দামাদামি করার সুযোগ কম।
ছোট্ট ছেলেমেয়েরা একপাশের মিনি বিনোদন পার্কের বিভিন্ন রাইডে হৈ-হুল্লোড়ে মাতিয়ে তুলেছে চারপাশ। রয়েছে নানা ধরণের খাবারের দোকানও।
সিয়াম ও দিশাকে জিজ্ঞেস করলাম, খাবে কিছু?
তারা দু’জনেই সমস্বরে উত্তর দিলো, ঘুরতে ঘুরতে বেশ টায়ার্ড হয়ে গেছি। চলো, একটা রেস্টুরেন্টে বসে কিছু খেয়ে নিই।
আমি বললাম, ঠিক আছে। তাই হোক।
খাওয়া শেষ করে এবার বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে টুকটাক কেনাকাটা সেরে নিলাম। শেষ পর্যায়ে গত বছরের ন্যায় এবারও নাবিস্কো বিস্কুটের স্টলে ঢুকে আকর্ষণীয় মোড়কের কিছু বিস্কুটও কিনলাম।
এখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা থেকে বাসায় ফেরার পালা। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের বের হতে দিশাকে জিজ্ঞেস করলাম, যা যা কিনে দিয়েছি তা পেয়ে তুমি খুশি তো?
দিশা মুচকি হেসে উত্তর দিলো, তুমি আমার বায়না রেখে মেলায় নিয়ে এসেছো। এতেই আমি মহাখুশি।