আনন্দের রতিক্রিয়া শেষে পিউ আবিরকে প্রায় অনুরোধের সুরেই বললো, 'শোন কাল অফিস থেকে ফেরার পথে 'কালি ও পেন্সিল' পত্রিকাটা নিয়ে এসো তো, কাল বলেছিলাম তুমি ভুলে গেছো', 'আসলে আজকাল যা কাজের চাপ মনে থাকে না, আর ওত দাম দিয়ে এই টানাটানির সময় ওসব ছাইপাশ কিনতে আমার ইচ্ছে করে না' বলেই পাশ ফিরে ঘুমলো আবির। কথাটা অনেকটা পছন্দের খাবার খেতে গিয়ে যখন কেউ দেখে তরকারি ঠিক স্বাদমতো হয়নি অথবা প্রচন্ড ঝালে ব্রহ্মতালু ফেটে যাবার উপক্রম তখন যেমন অনুভূতি ঠিক তেমন অনুভূতি হল পিউ এর। আবির মানে তার প্রাক্তন প্রেমিক আর বর্তমান স্বামী বেসরকারী একটি ব্যাংকে পুষ্টিকর বেতনের চাকুরে। পিউ যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী তখন আবির স্নাতক এর দ্বিতীয় কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কি এক যাদুর কাঠির কারসাজিতে অমোঘ পাঁচ বছরের প্রেমের পর অনেক পারিবারিক নাটকের চরাই উতরাই শেষে দুহাত চার হাত হওয়া।তারপর, তারপর বিয়ের দুবছর পেরোনো আর পিউ এর সংসার দেখা আর চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া একসাথে চলা।ছানাপোনা নেওয়ার চাপ তো সময়ের সাথে সমানুভূতি হারে বেড়েই চলেছে।
এত কিছু হবার পর কোন দিন জল গড়িয়ে না খাওয়া পিউ মুখে হাসির ঝালর লাগিয়ে পড়াশোনা সাথে সাথে সংসার দেখে যাচ্ছে। অবশ্য চাকরি করার উটকো শখটা সে নিজেই বেছে নিয়েছে। শাশুড়ী মা, আবির এদের সবাই মত দিয়েছে ঐ এক শর্তের মাধ্যমে।আর সেটা হলো আগে ঘর দেখো তারপর না হয় তুমি দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়ো। তো এত কিছুর মধ্যে ও পিউ এর আরেকটা বাতিক রয়েছে আর সেটি হলো গল্প উপন্যাস পড়া ও লেখা।তো কিছু দিন হল সে উক্ত দামী পত্রিকায় নিজের একটা লেখা পাঠিয়েছে। এখন ঐ পত্রিকায় তার লেখা সত্যি ছেপেছে কিনা তা জানার জন্য যদি আবিরের আশিটি টাকা নষ্ট হয় তবে সত্যিই প্রেমিক হিসেবে আবির কার্তিক মাসের বিকেলের মতোই মুছে গেছে । এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো পিউ।
পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙেই দেখে আটটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি আবিরের খাবার তৈরি করে দেওয়া ও তাকে বিদায় শেষে সংসার সামলে পড়তে বসতে বেশ দেরী হয়ে গেল পিউ এর। সামলে সিভিল সার্ভিসের লিখিত পরীক্ষা, একদম ভালো করে পড়তে পারছে না পিউ। অংকের কি একটা সমাধান এর একটা বই সেই কবে থেকে ফারিহা আপুর কাছে আছে। অনেক দিন থেকেই চাইবো চাইবো করে চাওয়া হচ্ছে না তার। আজ চাইতে হবে এই মনে করে হোয়াটআপস এ ঢুকতেই দেখলো জহির ভাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। 'পিউ তোমার 'কালি ও পেন্সিল ' এ লেখা ছোট গল্প টা পড়লাম, বেশ ভালো হয়েছে '। ম্যাসেজ টা পড়েই কোথায় যেন ঝর্ণার আওয়াজ পেলো পিউ। যাক তাহলে লেখাটা ছেপেছে। 'আপনি পড়লেন? ' জিজ্ঞেস করলো পিউ।
'হুম পড়লাম, তবে শেষের দিকে তোমার ঐ মনের মধ্যে হাজারো প্রজাপতি উড়ে বেড়ানো মেটাফোরটা না ব্যবহার করলে ও চলতো, বড্ড সেকেলে 'আচ্ছা এবার থেকে কোন লেখা লিখলে বরং আপনাকে একবার দেখিয়ে নেব, ডাক্তারি তো যেন পড়েন নি উনি, যেন আমার সাথে ইংরেজিতে অনার্স করেছেন,' বলেই কতগুলো কপট রাগের ইমোজি দিল পিউ আমার ধৈর্যশীল পাঠকরা হয়তো ভাবছেন এইবার আমি কোন পরকীয়া প্রেমের গল্প ফাদবো। আসলে সেটা না। শত সংগ্রামী পিউ দের এটা অনেকটা দক্ষিনের জানালা খোলা বা বাগানে ফুল ফোটার মত একটা আনকোরা মুহূর্ত যা ক্ষনিকের প্রগলভতায় শেষ হয়ে যাবে তারপর সন্ধের সময় হয়তো বা আবির বৌ এর জন্য পত্রিকা আনতে ভুলেও যাবে আবার পিউ সাংসারিক গেরোকলে লেগে যাবে কিন্তু বিবাহিত জহির এর সামান্য প্রশংসা বা সমালোচনা বা এই নিয়ম ভাঙা কথা বার্তা এইসব পিউ দের অনেকটাই সামান্য ছাইপাশ লেখাগুলোকে মহাকালের সাহিত্যে পরিণত করবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com