বর্ষার শেষ দিন। শেষ হলেও সবকিছু শেষ হয় না। যেমন রাজনীতির উথ্যান। বর্ষাও তেমন। সবুজ প্রকৃতির দেশে বর্ষা আসে শেষে। রাত এগারোটার মধ্যেই তারাগুলো নিভে গেলো। রাতের আকাশে যখন তারাগুলো নিভে যায়, মহাশূন্যের প্রথম আসমানের অস্তিত্বও দেখা যায় না। কোন কিছু দেখা না গেলেও এর যে অস্তিত্ব আছে তখন তা সত্যি মনে হয়। এইরকম তারাবিহীন রাতে আকাশের দিকে তাকালে কোথাও না কোথাও বজ্রপাতের শব্দ বিলীন হয়ে আলোর ঝলকানি উঁকি দিবে। ক্ষৃন আলো মূহুর্তেই বিলীন। এতো কম মুহূর্তের ব্যাপার মানুষ একমাত্র বর্জের আলোতেই মনে রাখে। বাতাস বইছে, বৃষ্টির প্রবল আশংকা, এমন সময় এক জোনাকিপোকা কিছুটা গতি কমিয়ে পশ্চিম বারান্দায় এসে পড়লো। রাতের আঁধারে জোনাকি পোকার মিট মিট আলো আমাদের অনেকের শৈশবেরই এক বিস্ময়কর স্মৃতি। মুহুর্তেই জোনাকি বারান্দা থেকে দরজার কপাটে বসলো।
প্রগাঢ় আলো কিছুটা হলুদ রঙ্গের তখনও স্পষ্ট। জোনাকি পোকার আলোর রহস্য হল একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। মূলত এদের দেহের পেছনের অংশে একটি বাক্সের মত অংশে এই বিক্রিয়াটি ঘটে থাকে। এখানে লুসিফেরিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ লুসিফেরাস নামক এনজাইমের উপস্থিতিতে অক্সিজেন ও শক্তি ব্যাবহার করে আলো উৎপন্ন করে থাকে। আর বিশেষ প্রক্রিয়ায় জোনাকি পোকা অক্সিজেনের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যা মূলত মিট মিট করে আলো জ্বালার পেছনে ভূমিকা রাখে। অক্সিজেন সরবরাহের উপর নির্ভর করে থাকে কখন আলো জ্বলবে এবং নিভবে। যখন এরা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তখন আলো নিভে যায় এবং অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হলে বিক্রিয়া শুরু হয়ে আলো জ্বলে উঠে। পরোখ করে দেখলাম পুরুষ প্রজাতির জোনাকি। কারন স্ত্রী প্রজাতির জোনাকি সাধারণত গাছের ডালে আর নির্জনতম স্থানে বসে আলো জ্বালায়। পুরুষ এবং স্ত্রী জোনাকি উভয়ই নিজেদের মধ্যে আকর্ষন সৃষ্টির জন্য এরকম আলো জ্বেলে থাকে।
ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত জোনাকি নিজের সহপাঠীদের হারিয়ে ছন্নছাড়া। এমন অবস্থায় মানুষের মাথাও কম কাজ করে, একে বলা হয় সাইকোলজিক্যাল (বিভ্রম)।
জোনাকির ভয় নিজের শহরে ফিরতে না পারার। খানিকক্ষণ দরজার কপাটের সাথে আলো বন্ধ করে বসে বইল। বাইরে বাতাসের গতি অতো বেশি না শান্ত নিশ্চল বাতাস দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রভাহিত হচ্ছে। রাত্রির অদ্ভুত শব্দের কাছে বাতাসের আওয়াজ বিলীন হয়ে গেলো। জোনাকিপোকা পথ হারিয়ে কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে, নরা চরা আর ছটফট করতে লাগলো। হতাশ কিংবা ডিপ্রেশনে থাকলে মানুষ অন্যমনস্ক হয়ে ঠোঁট গষে, নাক টিপে, মাথা চুলকায় আরো কতো কি! অন্যান্য প্রাণিদের ক্ষেত্রেও তাই।
ডরষফষরভব আরও বেশি বিচিত্র। রহস্যে গেরা।
জোনাকি পোকাটি দর্জার কপাট থেকে নিচে পরে সজাগ দৃষ্টি রেখে পালানোর পথ খুঁজছে। লাইটের আলোতে তারা আসতে চায় না। কৃত্রিম আলো তাদের অস্তিত্বের শত্রু। আজকাল মানুষ শহর থেকে গ্রামে আসে আডব্যাঞ্চারের জন্য। রাতের অন্ধকারে নি:শব্দে চলা জোনাকিদের দেখা সবচেয়ে বড়ো আডব্যাঞ্চার। গ্রামে রাস্তার মোরে ল্যাম্পপোস্ট, ঘরে বাইরে যান্ত্রিকতার সংঘাতময় আলো অন্ধকারকে কেড়ে নিয়েছে।
আমার দেখা কৃত্রিম আলো থেকে পালানোর একমাত্র প্রাণি জোনাকি। শহর থেকে বিলীন হয়ে যাওয়াই তার প্রমাণ। শহরের সপ্ন বেঁচে আছে জোনাকিরা নেই।
রাতে হঠাৎ বিজলির আলো চারদিকে ফর্সা হয়ে যে গাঢ় অন্ধকার হয় সেটা ভয়ংকর অন্ধকার। এমন অন্ধকারের ভেতর থেকে নিশব্দে বাতাস আসছে।
জোনাকি পোকাটি আবার উড়তে লাগলো, আলো দিতে লাগলো। মানুষ মনে হয় সপ্ন দেখে এভাবে জোনাকিপোকার মতো জেগে উঠে! দু:স্বপ্ন দেখার পরে মানুষের চেহারায় সুখী সুখী ভাব আসে, কারন ঘুম ভাজ্ঞার পরে আমরা বুঝতে পারি সবই ছিলো সপ্ন! চিন্তার কোন কারণ নেই। তখন সবাই বড় ধরনের স্বস্তি পায়।
আর সুখের কোন সপ্ন দেখলে উল্টোটা। সপ্ন ভাংলেই মনে হয় কি যেনো পেলাম না! দেখে মনে হলো জোনাকির সপ্নটা বাস্তব সপ্ন। সে তার হারানো সঙ্গীদের খুঁজে পাবার রাস্তা পেয়েছে। বাসতলির হারানো পথটা খুঁজে পেয়েছে। শন্যে ভাসতে লাগলো। নিবু নিবু আলো মুহূর্তটা অনেকদূর এগিয়ে গেলো। বৃষ্টির গুড়িগুড়ি ফোটা তাকে স্পর্শ করলো.. তার বিস্ময়কর আলো প্রউজ্জ্বলিত হতে লাগলো আনন্দ আর উল্লাসের মতো। একা মিছিল নিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো… কে জানে… নির্জনে!