জিহাদের বয়স এবছর আটে পড়েছে। সে এখন প্রাইমারিতে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়ন করছে। তার ছোট্ট একটা বোন আছে নাম জিমি। জিমির বয়স মাত্র একবছর। স্কুল, পড়ালেখা, খেলা আর ছোট্ট বোন জিমিকে নিয়ে সারাদিন হৈ-হুল্লোড় হাসাহাসি আনন্দ-উল্লাস আর দুষ্টুমি করে বেশ সময় কেটে যায় জিহাদের। আর তার সঙ্গী আছে বেশ কিছু পাখপাখালি। জিহাদ আবার ভীষণ পাখি প্রিয়। খুব ভালোবাসে পাখিদের। ময়না শালিক, বুলবুলি, দোয়েল, পেঁচা টুনটুনি বউকথা কও হলুদ পাখি, ঘুঘু আর চড়ুই। এসব পাখিরাই যেনো নিত্যদিন জিহাদের মনে আনন্দ যোগানোর সাথী। বলা যায় পাখি বলতে জিহাদ অজ্ঞান। প্রতিটা দিন ভোরে জিহাদের ঘুম ভাঙ্গে দোয়েলের মিষ্টি মধুর সুর শুনে। ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা পাখির কিচিরমিচির শব্দে সারা বাড়ি জুড়ে যেনো এক অন্য রকম কলরবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জিহাদদের বসতবাড়ি আর বাড়ির চারপাশে ছোট্ট বড় বিভিন্ন বৃক্ষে এসব পাখিরা বাসা বেঁধে থাকে। জিহাদদের বাড়ির পরিবেশটা দেখতে লাগে ঠিক যেনো ছায়া মোড়ানো ছোট-খাটো একটা সবুজের অরণ্য ভূমি। প্রতিবছর জিহাদের আব্বু নানান রকম প্রজাতির ফল ও ওষুধি গাছ বাজার থেকে কিনে বাড়িতে আর বাড়ির আশেপাশ রোপণ করে। একদিন জিহাদ জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা আব্বু তুমি এত গাছ লাগাও কেনো?
উত্তরে জিহাদের আব্বু জীবন বললো এসব গাছ যে আমাদের পরম বন্ধু বাবা। জিহাদ বললো গাছ আমাদের বন্ধু কিভাবে আব্বু? তুমি জানো..গাছ ছায়া দিয়ে আমাদের বাড়িটা সূর্যের কিরণের গরম উষ্ণতা থেকে ঠান্ডা রাখে।আবার এই গাছ তোমার আমার ত্যাগ করা দূষিত কার্বোনড্রাই অক্সসাইড গ্রহণ করে নির্মল বিশুদ্ধ অক্সিজেন দেয়। যা-শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা গ্রহণ করে বেঁচে থাকি। জিহাদ উৎসুক দৃষ্টিতে তার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো..আর...আর কি উপকার করে আব্বু গাছ আমাদের? জীবন বললো, গাছের উপকারের কি শেষ আছে বাবা... গাছের শুকনো পাতা শাখা দিয়ে আমাদের রান্নাবান্না করার জন্য যে খড়ির দরকার হয় সেই জ্বালানির অভাবটা মেটে।তাছাড়া নানান অসুখবিসুখ অভাবের দিনে দু:সময় দূর্দিনে একটা গাছ বিক্রি করলেও যে টাকা পাওয়া যায় তাতে প্রয়োজন মেটে। তাছাড়া এসব গাছপালা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। এই যে তুমি স্কুল থেকে এসে খাবার না পেলে ফল পেড়ে খাও কি খাওনা.জিহাদ একটু লজ্জা পেয়ে হেসে উঠে বলল হুম। তাতে তোমার ক্ষুধা নিবারণ হয় দেহে নতুন শক্তি আসে..আসেনা বলো? জিহাদ বললো হুম আসে। তারপর ধরো বাড়ির আশেপাশে যাদের ফলের গাছ নেই তারাও তো আমাদের গাছের দুই একটা ফল খেতে পারে। তারপর তোমার ঐসব পাখি গুলো নানান ফল খেয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। গরীব-দুঃখীদের পাখিদের আমাদের খাদ্য অর্থ সম্পদ আর ফল সবকিছুতে তাদের পূর্ণ হক আছে। এ যাবতীয় সব কিছুই মহান আল্লার নেয়ামত। গরীব-দুঃখী কিম্বা পাখিরা যতো খাবে কমবে না বরং আল্লাহ আরে বাড়িয়ে দিবেন। সেটা তো ঠিক, কিন্তু আব্বু তোঁতা পাখি গুলো খুব দুষ্টু। ওরা আমার পাকা ডাঁসা ডাঁসা পেঁয়ারা গুলো সব খেয়ে যায়। জীবন একটু হেসে উঠে বললো ওরাও যে তোমার মতোই ডাঁসা পেঁয়ারা খেতে পছন্দ করে বাবা। জিহাদের আম্মু রেবেকা বললো শুনলে তো বাবা জিহাদ...তোমার আব্বুর মুখে এসব গাছ আমাদের কত প্রয়োজনীয়..?
জিহাদ বললো হুম আম্মু গাছ আমাদের অনেক উপকারী। আমিও বড় হয়ে আব্বুর মত গাছ লাগাবো ভালো হবেনা আম্ম?হুম খুব ভালো হবে এইতো আমাদের সোনা ছেলে। জিহাদ বললো জানো আব্বু আমাদের নিম গাছে ঘুঘু পাখিদের ছানা ফুটেছে। বাহ্ বেশ তো তাহলে তো তোমার আরো নতুন সঙ্গী বাড়লো। জিহাদ হেসে বললো হুম, জানো আব্বু ঘুঘু পাখির ঘুঘু ঘুঘু ডাক শুনতে আমার না খুব ভালো লাগে। আমিও তোমার মত খেতে বসলে খাবার ছড়িয়ে দিই ওদের আব্বু। ওরা সব গাছ থেকে উড়ে আসে খেতে। জীবন শুনে বললো খুব ভালো বাবা। এটা অত্যন্ত পূর্ণের কাজ। অসহায় জীবদের প্রতি মায়া দেখালে মহান স্রষ্টা খুশি হন। ঐ দিন সন্ধ্যা নামতেই আকাশের পশ্চিম কোণে মেঘ জমে তুমুল ঝড় উঠলো।বহু বাড়ি ঘর গাছপালা ভেঙ্গে পড়লো। ভোরবেলা জিহাদের ঘুম ভাঙ্গতেই দৌড়ে গেল নিম গাছের তলে। যেয়ে দ্যাখে বাসা ভেঙ্গে পড়ে আছে।ঘুঘুর ছানা দুটো ঝড়বৃষ্টিতে ভিজে মারা গেছে। ছানা দুটো হাতে নিয়ে ভীষণ কান্না ধরলো জিহাদ। সে কান্না আর থামে না। জিহাদের আব্বু আম্মু শান্ত করার জন্য বোঝালো আর কেঁদো না। দেখবে কিছুদিন পর ঘুঘুরা আবার বাসা বেঁধে ডিম পেড়ে ছানা তুলবে। তারপর জিহাদের সেই কান্না থামে... সত্যিই কিছুদিন যেতে না যেতেই ঘুঘু পাখিরা ডিম পেড়ে আবার ছানা তুললো। তা দেখে জিহাদের মুখে আবার হাসি ফিরে এলো..।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com