ক দিন ধরেই সামি ওর ডায়রি টা খুজে পাচ্ছিল না। ইতি উতি সব খানে খুজেছে। কোত্থাও খুজে পাওয়া গেল না ডায়রীটা। সামি যখন ক্লাস নাইনে পড়ত তখন ওর টিউটর নাজিব ভাইয়া ওকে গিফট করেছিলেন ওর জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাবার জন্যে। বলেছিলেন এভাবে এসএসসি আর এইচএসসি তেও গোল্ডেন পাওয়া চাই। তোকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ভরসা। নাজিব ভাইয়া বিসিএস দিয়ে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন সিলেটের এমসি কলেজে। মাঝে সাঝে ফোনে কথা হয়।হোয়াটস এপে ও টুকটাক আলাপ হয়।উনার দেয়া চামড়া বাধাই করা সুন্দর ডায়রি টা রয়ে গেছে উনার স্মৃতি হিসেবে। সামি কে উনি পড়িয়েছেন সেই ক্লাস উয়ান থেকেই। ডায়রি টা সুন্দর লক করার সিস্টেম ছিল। ওতে একটা সুন্দর জেল পেন আর একটা ক্যালকুলেটর ও ছিল। এই ডায়রি তে ও লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লিখত। অনেক কবিতা লিখেছে। কাউকে দেখাতো না। চুপি চুপি ছদ্ম নামে প্রথম আলোর বন্ধু সভায় ও কবিতা পাঠিয়েছে। সব কটা কবিতা ই ছাপা হয়েছে।নিজের কবিতা ছাপাত অক্ষরে দেখে সামির যে কী আনন্দ। কিন্তু এই আনন্দ কে ও সব সময় নিজের ভেতরেই রেখে দিত। কাউকে বলতো না এমন কি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড অপু কে ও না। পত্রিকার কাটিংগুলো সে লুকিয়ে রেখেছে ফাইলে।কাউকে দেখায়নি।
ডায়রিটা হারিয়ে ও ভীষণ মন মরা হয়ে আছে। মাথায় ঘুরছে কবিতার লাইন অথচ ডায়রিটা না থাকার জন্যে লিখতেও পারছেনা। হাত নিশ পিশ করছে।অথচ ওই ডায়রি টা ছাড়া অন্য কোথাও লিখতেও পারছেনা। ডায়রি টার মধ্যেই সে তার মনের সব কথা লিখে রাখত।
কোথায় যে গেল ডায়রি টা??
আমি তো সব সময় টেবিলের ড্রয়ারেই রাখি।
মা একদিন জিজ্ঞেস করল
কী রে তুই এমন মন মরা হয়ে থাকিস কেন রে??
নাজিব ভাইয়া যে ডায়রি টা দিয়েছিল সেটা পাচ্ছি না।
দ্যাখ খুজে কই রেখেছিস। তুই যা অগোছালো না।
মাঝ রাতে একদিন মা ডেকে তুললো।
তোর বাবা ডাকছে।
বাবা কে ভীষন ভয় পায় নাজিব।বেশ রাশ ভারী মানুষ।
ধীর পায়ে বাবার ঘরে এলো।
বাবা ডেকেছিলে?
দ্যাখ তো ঘড়িতে ক টা বাজে?
বারো টা বাবা।
আজ তোর আঠারো তম জন্মদিন।
হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ মাই সান।
মা কেক নিয়ে ঘরে ঢুকলেন।
সামি কেক কাটল। একটা দিল মায়ের মুখে আরেকটা টুকরা বাবার। উনারা নিজেরা একটু খেয়ে পুরো টাই সামি কে খাইয়ে দিলেন।
এবার বাবা বললেন তোর কী যেন হারিয়েছে রে যে জন্যে মন খারাপ করে থাকিস??
সসংকোচে বলল একটা ডায়রী।
সেটা কি এটা??
বাবা তার কাবার্ড থেকে বের করলেন একটা ডায়রি।
আরে এটাই তো। কিন্তু মনে মনে অবাক হল বাবার কাছে এলো কি করে? বাবা আবার ডায়রি খুলেছেন নাকি?? ভাবতেই মনে মনে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিল।
মা বলল তুই আজ আঠারো বছরে পা রাখলি।তুই আজ থেকে সাবালক। এজন্যে তোর বাবা তোর জন্যে একটা স্পেশাল গিফট রেখেছে। বলে র্যাপিং পেপারে মোড়া একটা প্যাকেট দিল। যা ঘরে নিয়ে খুলে দ্যাখ।
ঘরে এসে খুলে র্যাপিং পেপার ছিড়ে ফেলল। সুন্দর একটা বক্স। এর মধ্যে একটা বই। বই টার নাম দেখে চমকে গেল স্বপ্ন ডানা
আরে এটা তো ওর নিজের কবিতা। কবির নাম টা দেখেও চমকে উঠল
এ তো ওর নিজের নাম। বাবা ওর সবগুলো কবিতা দিয়ে বই ছাপিয়েছেন।