সেই ছেলেবেলার ঘুড়ি আজও মনে পড়ে। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে বই খাতা কোন রকম ঘরে টেবিলের উপরে ছুঁড়ে ফেলে স্কুল ড্রেস না খুলেই বসে পড়তাম ঘুড়ি বানানোর নেশা। মা আমার জন্য ঘরে নারকেল পাতার শোলার ঝাড়ু রাখতে পারতেন না আমি রোজ রোজ শোলার কাটির উপর সুতা পেচিয়ে বড় পলিথিন কেটে ঘুড়ি বানাতাম। মা যখন দেখতো আমি ঘুড়ি বানাতাম তখন হাতে একটা লাঠি নিয়ে আমাকে দৌড়ানি দিতেন আমি আমার জিনিসপত্র গুলো হাতে নিয়ে দৌড়ে কোন এক নির্জন জায়গায় বসে আপন মনে ঘুড়ি বানাতাম। একবার বানাতাম তা মনের মতো সুন্দর না হলে আবার নতুন করে বানাতাম তারপর খোলাম খোলা মাঠে গিয়ে নাটাই দিয়ে ঘুড়ি উড়াইতাম। আমার মতো গ্রামের আরো আঁট দশজন ছেলেরা ঘুড়ি উড়াতে খলা পাড়ের মাঠে আসতো। সবাই হাসি আনন্দে ঘুড়ি উড়াইতাম। আর দেখতাম কার ঘুড়ি সবচেয়ে বেশি উপরে উঠতো। এটা যেন একটা ছেলেবেলার ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো আর হাতে নাটাই দিয়ে আরেকজনের নাটাই কেটে ঘুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার একটা খেলা হতো। প্রচন্ড রোদে শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যেতো তার জন্য মনে কোন টেনশন হতো না শুধু ঘুড়ি নিয়ে একটা ব্যস্ত সময় পার করতাম। কখনো কখনো দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হতো কিন্তু ঘুড়ি উড়ানো শেষ হতোনা।
এদিকে মা সারা বাড়ি খুঁজে বেড়াতো আমাকে। আমি ঘুড়ির নেশায় পড়ে দুপুরের খাবারের কথা ভুলে যেতাম। যখন বিকেল বেলা ঘুড়ি উড়ানো শেষ হতো তারপর পেটে ক্ষুদা মনে হতো চুপিচুপি বাড়ি যেতাম দেখতাম মা কোথায় আছে যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে মাইর দেবে এই ভয়ে কখনো উঠানের পাশে খড়কুটোর পেছনে লুকিয়ে থাকতাম। মা হলো হলো এমন একজন মানুষ যে কখনো সন্তানের সাথে রাগ করে বেশি ক্ষন থাকতে পারেনা। একটু পরেই আবার আদর করে ঘরে নিয়ে নিজের হাতে নলা দিয়ে খাইয়ে দেয়। মা শব্দটা হলো আদর স্নেহ মায়া মমতার নাম। তারপর খাওয়া শেষ হলে মা বলতেন খোকা এবার একটু পড়তে বস সারাদিন হান্ডুহান্ডু করে ঘুরে বেড়িয়েছিস একটুখানি পরেই মাগরিবের আজান হবে পড়তে বসবি। আমি মাথা নেড়ে বলতাম ঠিক আছে মা। ঠিক আছে বলে পড়তে বসতাম কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে ছোট ছোট ভাইবোন নিয়ে আবার বাড়ির উঠোনে কানামাছি খেলতাম সাথে চাচাতো ভাই বোনেরাও ছিলো। আকাশে তারাভরা রাত সুন্দর চাঁদের আলো বাঁশ বনে জোনাকিপোকার আলো। আরেকদিকে মা চাচিরা বসে সবাই সবার সাংসারিক গল্প এবং রুপকথার গল্পে মেতে উঠতেন তাছাড়া মিষ্টি বাতাস এসে গায়ে লাগতো। গল্প আর হাসি আনন্দে সময় পার হতো। আবার যখন রাত্রি পেরিয়ে সকাল হতো ঘুম থেকে ওঠে হাত মুখ না ধুইয়ে মা না বলে ঘুড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যেতাম চুপচাপ। মাঠে ঘুড়ি আর খেলাধুলা করে বাড়িতে আসতাম। তাড়াহুড়ো করে অল্প কয়েকটা খেয়ে আবার বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতাম ঠিক মতো শাটের বোতাম লাগাতামনা। স্কুলে যাওয়ার সময় দেখতাম অন্য পাড়ার ছেলেরা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি উড়ায় তখন তাদের ঘুড়ি উড়ানো দেখতে দাঁড়িয়ে যেতাম হাতে বই খাতা নিয়ে তাদের ঘুড়ি উড়ানো দেখতাম তাদের ঘুড়ি উড়ানো দেখে মনে আনন্দ পেতাম কখনো কখনো তাদের সাথে ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে গল্প করতাম কে ক্যামনে ঘুড়ি বানায়। ঘুড়ি উড়ানো দেখে কখন যে ক্লাশের সময় চলে যেতো তাও ভুলে যেতাম মাঠে বসে স্কুলের সময় পার করে আবার যখন স্কুল ছুটি হতো সকলের সাথে একসাথে বাড়ি যেতাম। ঘুড়ির নেশায় কখনো কখনো এ ভাবে স্কুল ফাঁকি দিতাম। বাড়িতে গিয়ে আবার ঘুড়ি বানাতাম আর উড়ানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম। কতই না মধুর হতো আবার যদি সেই ঘুড়ি উড়ানোর সেই ছেলেবেলা ফিরে পেতাম তাহলে ঘুড়ি নিয়ে মাঠে যেতাম।