আমাদের একালায় একটা নদী আছে। নদীর নাম- ধনাগোদা। এই নদীতে প্রায়ই চেনা-অচেনা বহু মাছের দেখা মেলে ৷ কিন্তু মাছের জন্য এ নদী বিখ্যাত হয়নি। বিখ্যাত হয়েছে একটা বিশেষ কারণে৷ মারাত্মক কারণ। সাধারণত জলস্রোত যেদিক বয়ে যায় মাছও সেদিক-ই যায়। তবে এ নদীর বেলা সম্পূর্ণ আলাদা৷ এ নদীতে বেশি সংখ্যক মাছ যেদিক চলে যায় জলস্রোত ও সেদিক বয়ে যায়। তবে সে এটুকুতেই সমাপ্ত নয়৷ এ নদীর মাছ ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পরা, বেশি সংখ্যক মাছের পেছনে জলস্রোত বয়ে যাওয়া ছাড়াও এই নদীর মাছ আর পানির সঙ্গে মিশে আছে দু'কবির কবিতা ও সংগ্রাম।
উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম ; নদীর দিক চারটা। নদীর মাছও চারোদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। কিছু থাকে উত্তরে, কিছু দক্ষিণে, কিছু পূর্বে আর কিছু পশ্চিমে৷ আবার কিছু মাছ আছে তারা চারোপাশ ঘুরে৷ আমি এ সব মাছের নাম দিয়েছি ' চৌরঙা মাছ '। চৌরঙা মাছও সংখ্যায় কম নয়। প্রধানত বেশি সংখ্যক মাছ-ই থাকে পশ্চিম আর উত্তর দিকে৷ চৌরঙা মাছ যখন উত্তরে অবস্থান নেয় তখন জলস্রোত বয়ে যায় উত্তরে, তারা যখন পশ্চিমে অবস্থান নেয় তখন জলস্রোত বয়ে যায় পশ্চিমে৷ পশ্চিম আর উত্তর দিকের জলস্রোত নিয়েই দু' কবির মনে কলহের বসা বাঁধে। তাদের মধ্যে এক কবির নাম ফুয়েদুল্লাহ ধ্রুব , আরেক কবির নাম সাহেদুল্লাহ খান।
রেলস্টেশনের সামনে দীর্ঘ একটা দেয়ালে বড় করে আকাঁ একটা ছবি৷ তার পাশেই একটা কবিতা লেখা৷ ধনাগোদা নদীর জলস্রোত যখন বয়ে যায় পশ্চিমে তখন স্টেশনের সামনের দেয়ালের ছবিটাতে দেখা যায় কবি সাহেদুল্লাহ খানকে৷ ছবির পাশের কবিতায় কবির নাম লেখা থাকে সাহেদুল্লাহ খান। আবার জলস্রোত যখন বয়ে যায় উত্তরে তখন স্টেশনের সামনের দেয়ালের ছবিটাতে দেখা যায় কবি ফুয়েদুল্লাহ ধ্রুবকে ৷ ছবির পাশের কবিতায় কবির নাম লেখা থাকে ফুয়েদুল্লাহ ধ্রুব। স্টেশনের সামনের এই দেয়ালের লেখা কবিতা আর আঁকা ছবি নিয়েই দু' কবির সংগ্রাম৷ নদীর মাছের কথা তাদের দু'জনেরই খুব ভালো করে জানা৷ তারা চৌরঙা মাছের কথাও জানে৷ চৌরঙা মাছ-ই হলো দু'কবির প্রধান হাতিয়ার। কারণ চৌরঙা মাছগুলো যেদিক অবস্থান নিবে সেদিক-ই জলস্রোত বইবে।
চৌরঙা মাছকে পশ্চিম পাড়ে রাখার জন্য কবি সাহেদুল্লাহ খান দিন-রাত পশ্চিমের পাড়ে বসে মাছকে খাবার দিয়ে যায়। অন্যদিকে চৌরঙা মাছকে উত্তর পাড়ে রাখতে কবি ফুয়েদুল্লাহ ধ্রুব দিন-রাত উত্তরের পাড়ে বসে খাবার দিয়ে যায়৷ চৌরঙা মাছ যেদিকে খাবার বেশি দেখে সেদিক-ই দৌঁড় মারে৷ চৌরঙা মাছ যখন পশ্চিমে দৌঁড় দেয় উত্তর পাড়ের কবি তখন খাবার ছিটানো আরো বাড়িয়ে দেয়। আবার চৌরঙা মাছ যখন উত্তরে দৌঁড় দেয় পশ্চিম পাড়ের কবি তখন খাবার ছিটানো বাড়িয়ে দেয়৷ চৌরঙা মাছ উত্তর-পশ্চিম এ উতালপাতাল ছুটে দিন দিন খাবার খেয়ে যেতে থাকে। আর দু'কবি স্টেশনের সামনে দেয়ালে আঁকা ছবি আর কবিতার জন্য দিনের পর দিন খাবার বিলিয়ে যেতে থাকে ; স্টেশনের কবিতা আর ছবি নিয়ে সংগ্রাম করতে করতেই জীবন নামক বাকি নদী পারি দিতে থাকে। তাদের মাথায় আর কোনো কবিতা আসেনি। যা এসেছে তা হলো, চৌরঙা মাছ, জলস্রোত, রেলস্টেশনের কবিতা, সেখানকার ছবি।
চার দিকের পাড় বেঁধে থাকা সেই স্থানীয় মাছ গুলোর চাইতে চৌরঙা মাছগুলো আকারে অনেকটা বড় হয়ে গেছে। একদিন চৌরঙা মাছগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে পাড়ে উঠে দু'কবিকে আস্ত গিলে ফেলে৷ যা দু'কবি কখনো কল্পনাও করেনি। স্টেশনের সামনের দেয়ালে এখন তাদের দু'কবির এক কবির ছবি ও নেই৷ সেখানে আর আগের কবিতাটাও নেই৷ তবে দেয়ালটা কিন্তু খালি পরে রয়নি৷ দেয়ালটাতে বিশাল একটা চৌরঙা মাছের ছবি আঁকা৷ নতুন একটা কবিতা লেখা৷ আমি দেখছি সে কবিতার কবির নামে লেখা- চৌরঙা মাছ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com