ঢাকার একমাত্র প্রভাবশালী ব্যাক্তি শান্ত সাহেব। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক নামকরা খ্যাতি তাঁর। পরিবারে তাঁর সদস্য সংখ্যা তিনজন। শান্ত সাহেব তাঁর স্ত্রী কাঁকন ও একমাত্র মেয়ে কথা। যা একক সুখী পরিবার বললে চলে। খুব সুন্দর জীবনযাপন করতে চায় শান্ত সাহেব কিন্তু তাঁর স্ত্রী একটু বদমেজাজি শান্ত সাহেবের সব কাজেতে বাঁধা দেয়। দেয়না স্বাধীন ভাবে চলাচল করতে। দেয়না সুখে শান্তিতে থাকতে। মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দেওয়া লাগবে শান্ত সাহেব মেয়ের জামাই খুঁজছেন। ঘটক আসছে বাড়ি নানান ছবি দেখাচ্ছেন শান্ত সাহেব ও তাঁর আদরের মেয়ে কথার পছন্দ হচ্ছে না। বরং একের পর এক ছেলে দেখে যাচ্ছেন। ঘর পছন্দ হলে ছেলে পছন্দ হচ্ছে না। আর ছেলে পছন্দ হলে ঘর পছন্দ হচ্ছে না। একসময় ঘটক বিরক্ত হয়ে গেলেন। শেষ সময়ে ঘটক আজমল সাহেব এক ভালো পরিবারের ছেলের খবর পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পরদিন সকালবেলায় শান্ত সাহেবের বাসা আজমল সাহেব চলে আসলেন। সাথে ছেলের ছবি ও সকল তথ্যাদি সহ। হঠাৎ করে এত সকালবেলা ঘটককে বাসায় দেখে শান্ত সাহেব চমকে উঠলেন। শান্ত সাহেব বললেন আজমল সাহেব কোনো ভালো খবর আছে না-কি? আজমল সাহেব বললেন বেশ তাজা ভালো খবর আছে। এবার যে ছেলের ছবি এনেছি তা চোখ ফিরানোর মতো নয়। পছন্দ হবেই হবে। শান্ত সাহেব বিরবির করে বললেন ঘটক আজমল সাহেব আপনাদের কথা তো বিশ্বাস করতে খুবই ভয় হয়। যাই হউক এবারের ছবিটি দেখি। দেন দেখি ছবিটি ঘটক আজমল সাহেবের হাত থেকে ছবিটি নিয়ে দেখার পর বলে উঠলেন মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। আমার মেয়ের সাথে দারুণ মানাবে। এতোদিন উনি কোথায় ছিলেন।
বেশ পছন্দ হলো বাবা মেয়ে দু'জনের। ঘটক আজমল সাহেবকে শান্ত সাহেব বললেন ছেলের বাবাকে যেয়ে বলবেন আগামী শুক্রবার যেন আমার বাসায় আসেন দাওয়াত রইলো। এসে আমার মেয়ে কথা কেও দেখে যাবেন। ঘটক আজমল সাহেব শান্ত সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে চললেন ছেলের বাবা কাজল সাহেবের বাসায়। বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাজল সাহেবের বাসায় পৌছালেন ঘটক আজমল সাহেব। সেথায় যেয়েও মেয়ের ছবি দেখালেন কাজল সাহেবের পছন্দ হলো। যাই হউক শান্ত সাহেব আপনাদের আগামী শুক্রবার তাঁর বাসায় দাওয়াত করেছেন। কাজল সাহেব আজমল সাহেবকে বললেন শান্ত সাহেবকে যেয় বলবেন আমরা আসছি তার বাসায় আাগামী শুক্রবার। শুক্রবার ছেলের বাবা কাজল সাহেব তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে কনক ও ঘটক আজমল সাহেবকে নিয়ে সকাল বেলায় শান্ত সাহেবের বাসায় আসলেন। বসে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলেন নাস্তা করলেন। নাস্তা শেষে কাজল সাহেব বললেন শান্ত সাহেব আপনার মেয়েকে নিয়ে আসেন একবার দেখি। সেদিন আবার হঠাৎ করে কথার ছোট বেলার বান্ধুবী আভা এসেছিল। আভা কথাকে সাজিয়ে গুজিয়ে নিয়ে আসলেন। কথা এসে সালাম দিয়ে মায়ের পাশে বসলেন। তখন কাজল সাহেব তাঁর ছেলে কনককে বললেন বাবা তোমার পছন্দ হয়েছে। কনক মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন হয়েছে। মেয়ের বাবা বললেন আলহামদুলিল্লাহ। ভাই সাহেব সুন্দর দিন তারিখ দেখে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি। কাজল সাহেব বললেন ঠিক বলেছেন ভাই সাহেব। যাই হউক আগামী সপ্তাহে না হয় আগামী মাসে সময় করা যায়। কাজল সাহেব বললেন এত কম সময়ে তো করা যাবে না। পরের মাসের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার দিনটা ধার্য্য করি কি বলেন আপনি? শান্ত সাহেব উত্তরে বললেন আলহামদুলিল্লাহ। সব কিছু ঠিক করে কাজল সাহেব চলে আসলেন। চলে আসার কিছুক্ষণ পরে কথার মা কাঁকন শান্ত সাহেবকে বললেন তোমার এই ছেলেকে পছন্দ হয়েছে। হ্যা অবশ্যই ছেলে পছন্দ না হলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি। কাঁকন বললেন ছেলের বয়স বেশি মনে হয়। শান্ত সাহেব বললেন সবখানে সবকিছুতে বাঁধা দিও না তো। এই বলে শান্ত সাহেব উঠে চলে গেলেন। এখন কাঁকন তাঁর মেয়ে কথাকে বিভিন্নভাবে বোঝাচ্ছেন যেন ঐ ছেলেকে বিয়ে না করে। কাঁকনের ইচ্ছে তাঁর বোনের ছেলের সাথে কথার বিয়ে দিবে। সেথায় কথা ও শান্ত সাহেবের কোনো মত ছিল না। শেষ পর্যায়ে কাজল সাহেবের ছেলে কনকের সাথে কথা বিয়ে হয়ে গেলো। সুন্দর ভাবে সংসার করছিলেন। কিন্তু কথার মা কাঁকন কথাকে নিজ বাড়ি থেকে পরিচালনা করছিলেন। কথা তাঁর মায়ের কথা মতো সবকিছু করে যাচ্ছিলেন। কথার মা যেমন কথার বাবাকে জালায় তেমনি কথা তাঁর মায়ের কথামতো কনককে জালায়। সব কাজেতে বাঁধা দেয়। দেয়না স্বাধীন ভাবে চলাচল করতে। দেয়না সুখে শান্তিতে থাকতে। বাসা আসলে শুধু জালা আর জালা। হঠাৎ একদিন কথা কনকের বাড়িতে শান্ত সাহেব ও তাঁর স্ত্রী কাঁকন আসলেন। কথা কনক তাদেরকে দেখে বেশ খুশি হলেন। একদিন থাকলেন সেই সময়ের মধ্যে কাঁকনের কথায় কনক ও কথার ঝগড়া শুরু হলো। শান্ত সাহেব কিছু বুঝতে পারছেন না। শান্ত সাহেব রাগ দেখিয়ে ঝগড়া বিবাদ বন্ধ করলেন। শেষ পর্যায়ে মা মেয়ে এক পক্ষ হয়ে শ্বশুর জামাইয়ের সাথে ঝগড়া বিবাদ শুরু করলেন। ঝগড়া করতে করতে শ্বশুর জামাইকে কাঁকন ও তাঁর মেয়ে বাসা থেকে বের করে দিলেন। বললেন যাও যেথা মন চায় যাও তোমরা। শ্বশুর জামাই পড়লেন খুব বিপদে সন্ধ্যা বেলায় যাবে কোথায়? শেষ পর্যন্ত জামাই কনক বললেন বাবা চলেন আমরা টাবু টাঙিয়ে কোথাও আজকের রাতটা পার করি। শান্ত সাহেব বললেন এখন আবার টাবু পাবো কোথা হঠাৎ করে বাসা থেকে বের হলাম। কনক বললেন চলেন বাবা দোকানে কিনে নিয়ে আসি।পকেটে তেমন একটা টাকা পয়সা নাই। জামাই কনক বললেন যা আছে তাই দিয়ে চলবে চলেন আপনি? এ কথা বলে দুটো টাবু কিনে নিয়ে আসলেন। শান্ত সাহেব বললেন জামাই কনক টাবু আনা হলো এখন টাঙিয়ে থাকবে কোথায়। কনক বলে উঠলেন বাবা এই ফ্লাট টা তো দখল করে নিয়েছে কথা ও আম্মা। ছাদ তো দখল করে নাই। চলেন বাবা আমরা ছাদে যেয়ে টাবু টাঙিয়ে আজ না হয় রাত পার করি। শান্ত সাহেব বললেন তাহলে এটাই করি। কিন্তু জামাই আমার যে পরিমাণ পেটের মধ্যে ইদুর দৌড়াচ্ছে তা বলার মতো না। জামাই কনক বললেন বাবা প্রচুর ক্ষুদা লাগছে আপনার না-কি? শান্ত সাহেব বললেন প্রচুর ক্ষুদা লেগেছে পকেটে তো টাকাও নাই। যাই হোক বাবা একটু কষ্ট করেন। টাবু টাঙানো শেষ হলে খাবারের ব্যবস্থা করছি। এই বলে জামাই কনক শ্বশুরকে সান্ত্বনা দিলেন। এক সময় টাবু টাঙিানো শেষ হয়ে গেলো চারিদিকে চাঁদের আলোয় ভরে গেলো। বেশ সুন্দর দেখা গেলো। তবে সমস্যা হচ্ছে এখনো দু একটা খাবার মুখ দিয়ে পেটে যায়নি। শ্বশুরকে কনক বললেন দেখছেন বাবা আমার আপনার প্রতি তাদের কোনো মায়া মমতা নাই। আমরা না খেয়ে বাসার বাইরে যাযাবরের মতো পড়ে আছি তার পরেও কোনো খোঁজ খবর নাই। শ্বশুর জামাই কনককে বললেন তোমার শ্বাশুড়ি আমাকে তো ত্রিশ বছর জ্বালিয়ে পার করছে৷শেষ পর্যন্ত বুড়ো বয়সে জ্বালাচ্ছে। তাঁর দেখে শিখেছে আমার মেয়ে। এখন জ্বালাচ্ছে তোমাকে, কি আর করার মশার জ্বালা তাঁর মাঝে তো ক্ষুদার জ্বালা আর সহ্য হয় না। কি আর করার বাবা আজ ঘুমিয়ে পড়ি কোনোমতে কালকে দেখা যাবে। কি করা যায়? শ্বশুর কিছুক্ষণ পর পর ডেকে জামাইকে বললেন জামাই তুমি ঘুমাই পড়ছো না-কি আমার তো ঘুম আসছে না ক্ষুদার জ্বালায়। যাই হউক মায়ের কাছে পড়লে মেয়ে মায়ের পক্ষে হয়ে পড়ে আর একা থাকলে ভালোই থাকে। রাতে কথার মা কথাকে ডাক দিয়ে বললেন কথা আয় খেতে আয়। কথা বললেন মা আমার ক্ষুদা নাই। আমি খাবো না তুমি খেয়ে নাও। কথা আর রাতের খাবার গ্রহন করলেন না। কাকন খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এই সময়ে কিছু খাবার নিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন। একসময় খুঁজে পেলেন তাঁর বাবা শান্ত সাহেব ও জামাই কনককে। কথা ছাদে এসে দেখলেন তাঁরা দু'জনে টাবু টাঙিয়ে রাত যাপন করছেন। আগে ভালো করে দেখলেন কে কোথা আছে। দেখার পরে কথা কনকের টাবুর পাশে যেয়ে ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ করে ডাক দিলেন। কনক লাফিয়ে উঠে বললেন কে এতো রাতে আমার টাবুতে। কথা বললেন আমি কথা আস্তে আওয়াজ করো। টাবুর দরজা খুলে দাও খাবার নিয়ে এসেছি। টাবুর দরজা খুলে দেওয়া মাত্র কথা খাবার নিয়ে টাবুর ভিতরে প্রবেশ করলেন। আরে খাবার নিয়ে আসছি। কনক বললেন যাই হউক এইবার ভালোর ভালো একটা কাজ করছো। দেখি কি আনছো পেটের ক্ষুদা আর সহ্য হচ্ছে না। খাবারের প্যাকেট খোলা মাত্র দেখলো প্যাকেট ভরা বিরিয়ানি। আহা কি দারুণ গন্ধ গন্ধ শুকে মনে হয় পেটটা ভরে গেল। কথা বললেন এতো কথা বাদ দিয়ে খাওয়া শুরু করেন। কিছু খাবার মুখে দেওয়া মাত্র শ্বশুর পরের টাবু থেকে ডাক দিয়ে বললেন জামাই ঘুমাই পড়ছো না-কি? কোথায় থেকে যেন দারুণ বিরিয়ানির গন্ধ আসছে। তুমি তা বুঝতে পারছো। জামাই বললেন কোথায় বাবা এইতো দারুণ গন্ধ আসছে। যাই হউক বাবা আমিও এখন গন্ধ পেলাম। বাবা আপনি বাইরে আসেন একসাথে না হয় বিরিয়ানি একটু ভাগ করে খাই। টাবুর ভিতর থেকে লাফ দিয়ে বের হয়ে আসলেন শ্বশুর। জামাই বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে এসে হাতে দিয়ে বললেন বাবা আম্মার আমাদের প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও আপনার মেয়ের ভালোবাসা আছে। এই দেখেন আমাদের জন্য কষ্ট করে চোরের মতো খাবার নিয়ে আসছে। শান্ত সাহেব বললেন এই না হয় আমার মেয়ে মায়ের ভালোবাসা নাই তবে কি হয়েছে। মেয়ের তো আছে। খাবার খেয়ে আরামে রাত পার করলেন শান্ত সাহেব ও জামাই কনক। মায়ের কারণে মেয়ের সুন্দর গড়া সংসার ভেঙে যায় কারণ মা তাঁর নিজ বাড়ি থেকে মেয়েকে পরিচালনা করেন। এই কারণে কতজনের সংসার ভেঙে ও যায়। তাই আমরা এই গল্প থেকে বুঝতে পারলাম যে কখনো মায়ের খারাপ কথায় স্বামীর সংসারে অশান্তি ডেকে আনা যাবে না। বরং ভালো খারাপ দুটো দিক দেখে তা ঠিক করতে হবে। গপ্পটি কাহারো উদ্দেশ্য করে লেখা নয়। বরং কাল্পনিক তাই যার যে নাম দেওয়া হয়েছে। সেটা তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com