দেশে চলছে ভয়াবহ তাপদাহ। আর এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বাংলাদেশে তীব্র তাপদাহের মধ্যেও সারা দেশে দীর্ঘসময় জুড়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। ফলে অনেক এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। একদিনে যেমন গরমের কারণে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ঘরে থাকা যাচ্ছে না, তেমনি ফসলের ক্ষেতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। সরকারি হিসাবে বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যদিও বাস্তবে এই ঘাটতি আরও বেশি বলে মনে হচ্ছে। রাজধানীয় ঢাকায় তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেশি থাকলেও এখানেও লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু জেলা এবং গ্রামীণ এলাকাগুলোয় দিনের বড় একটা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য নানা কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জ্বালানির উৎসের বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনায় না নিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। গত তিন মাসে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আরও বাড়তে পারে বলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিদ্যুৎ আসে দেশে উৎপাদিত গ্যাস ও কয়লা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়া ও ডলার-সংকটের কারণে স্পট মার্কেট থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ রাখে বাংলাদেশ। বর্তমানে দাম কমলেও ডলার-সংকটের কারণে চাহিদামাফিক জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতের এই বিপর্যয়ের জন্য সরকারের পরনির্ভরশীল জ্বালানিনীতি দায়ী। দেশের স্থল ও সমুদ্র উপকূলে নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণের চেষ্টা নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল, সরকার তা আমদানি করে মুনাফা করেছে। এখন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে। গত বছর সংকট কাটাতে রেশনিং পদ্ধতি চালু করেছিল। এবারে পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। পরিবেশবিদদের আপত্তি উপেক্ষা করে রামপালে যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, তা দফায় দফায় বন্ধ থাকায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অধ্যাপক বদরুল ইমাম জানান, ‘’যার ওপর ভর করে এই গ্রীষ্ম কাটাবো বলে আমরা আশা করছিলাম, সেই রামপালের অর্ধেকটা বসে আছে। বিদ্যুৎ নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনেছি, কিন্তু আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে ধারা, সেখানে খুব বেশি উন্নতি কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। লোডশেডিং থেকে বের হতে পারছি না।‘’ সব মিলিয়েই বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের শিগগিরই কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সরকার একটু সচেষ্ট হলে চুরি-অপচয় নিশ্চয়ই কমাতে পারে। সরবরাহ লাইনকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে পারে। শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হওয়ার চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং কমানোর চেষ্টা করতে হবে।‘ এছাড়াও আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাসের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। দেখা যায়, বাসাবাড়ি, অফিসে লোক না থাকলেও বাতি, ফ্যান, এসি চালু থাকে। এইসব বদঅভ্যাস ছাড়তে হবে। ‘আমরা মিতব্যয়ী হলে এখন যে শর্টেজ আছে, সেই জায়গা থেকে চাহিদা কমাতে পারলে শর্টেজটা অনেক কমে যাবে, যা আমাদের সহনশীল অবস্থায় আনবে। আমরা আপাতত এই পলিসি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com