• আজ- রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৭ অপরাহ্ন

খুকুমণি ও ঘুঘু পাখি

গোলাপ মাহমুদ সৌরভ / ২৩৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

add 1
  • গোলাপ মাহমুদ সৌরভ

খুকুমণি একজন ছোট্ট মেয়ে। বয়স সবেমাত্র চার বছর। বাবা-মা’র একমাত্র আদরের মেয়ে। বাবা মা দুজনেই চাকরি করেন। বাড়িতে কাজের মেয়ে রমিলা খুকুমণি কে দেখাশোনা করে। রমিলা কাজের মেয়ে হলেও খুকুমণি কে খুবই আদর স্নেহ করে অত্যন্ত একজন ভালো মনের মানুষ রমিলা। বাবা-মা মেয়েকে বেশি একটা সময় দিতে পারেনা প্রতিদিনই কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর রমিলা কে ডেকে বলে, শুনো রমিলা তুমি আমাদের পরিবারে কাজের মেয়ে নও তুমি আমার মেয়ের একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক। তোমাকে আমরা অনেক সম্মান করি এবং ভালো মানুষ বলে জানি,এটা আমাদের বিশ্বাস তুমি কখনো আমাদের খুকুমণি কে অযত্ন করবা না, সংসারের কাজকর্ম যতটুকু পারো করবা তাতে তোমার প্রতি আমাদের কোন রাগ কিংবা অভিযোগ নাই শুধু মাত্র আমাদের খুকুমণি কে একটু ভালো ভাবে দেখে রাখবা তার সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটাইবা যেন আমার খুকুমণি সবসময় হাসি খুশি থাকে, ঠিক আছে? জ্বি স্যার, আমি খুকুমণি কে আমার ছোট বোনর মতো দেখাশোনা করি তার জন্য আপনাদের কোন চিন্তা করতে হইবো না আর খুকুমণি আমার সব কথা শুনে রমিলা বললো। তোমার কথা শুনে খুব খুশি হলাম রমিলা, আমরা স্কুলে গেলাম তুমি তাকে দেখে রেখো। জ্বি স্যার। রমিলা প্রতিদিন খুকুমণি কে খাইয়ে দেয় তারপর খুকুমণি কে বারান্দায় বসিয়ে রেখে বাড়ির সব কাজকর্ম করে। খুকুমণি ভদ্র নম্র এবং শান্তস্বভাবের একটি মেয়ে। তার মাঝে চঞ্চলতা নেই যেখানে বসিয়ে রাখে সেখানেই নিরবে বসে থাকে। একদিন খুকুমণি চেয়ারে বসে আছে, বাড়ির উঠোনে কাঁঠাল গাছের ডালে একটি ঘুঘু পাখি বসে আছে। ঘুঘু পাখি টাকে দেকে খুকুমণি চেয়ে থাকে পাখি টাও খুকুমণি কে দেখে গাছের ডালে নেচে নেচে খুকু খুকু বলে ডাকে। যখনই ঘুঘু পাখি খুকু খুকু বলে ডাকে তখনই খুকুমণি হাসে। একদিন রমিলা লক্ষ্য করে খুকুমণি নিজে নিজে হাসে কার সাথেইবা হাসে কেন হাসে বুঝতে পারেনা। এমন করে কয়েকদিন পর ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো খুকুমণি অপলক তাকিয়ে থাকে কাঁঠাল গাছের দিকে। রমিলা খুকুমণি কে বললো কার সাথে হাসো তুমি প্রতিদিন? খুকুমণি আঙ্গুল দিয়ে ঘুঘু পাখি টাকে দেখালো, আর প্রশ্ন করলো দিদিমণি এটা কি পাখি? এটা ঘুঘু পাখি। তুমি এটাকে চিনো? হ্যা, ঘুঘু পাখি খুব ভালো আমার সাথে খেলা করে। তাই নাকি, কি খেলা করে বলতো। আমাকে খুকু বলে ডাকে আবার আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাই, তুমি তোমার বন্ধু কে কাছে ডাকতো আসে কিনা আমি দেখি। দিদিমণি তুমি দেখবে? হ্যা, রমিলা বললো। দাঁড়াও আমি ডাকছি দেখো আমার বন্ধু আসবে:

আয়রে আয় ঘুঘু পাখি
ডাকে তোরে খুকুমণি,
তুই যে আমার ভালো বন্ধু
দেখতে চায় দিদিমণি।

ঘুঘু পাখি ডাকি তোমায়
এসো আমার বাড়ি,
খেতে দেবো বসতে দেবো
না আসলে আড়ি।

ঘুঘু পাখি যে বড্ড ভালো
খুকুর কথা শুনে,
গল্প হবে আর আড্ডা হবে
বন্ধু বন্ধুর সনে।

খুকুমণির কথা শুনে ঘুঘু পাখি নিচে নেমে এলো। রমিলা দেখে অবাক হলো এটা কি করে সম্ভব পাখি মানুষের কথা শুনে তাও আবার একটা ছোট্ট মেয়ের কথা। রমিলা বললো, ঘুঘু পাখি সত্যি তুমি খুব ভালো, আজ থেকে তুমি প্রতিদিন খুকুমণির কাছে আসবে, তোমার ভালোবাসা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম আজ আমিও তোমার বন্ধু, আরো কাছে আসো, তোমার কোন ভয় নেই ঘুঘু পাখি। ঘুঘু পাখি উড়ে এসে খুকুমণির কাঁধের উপর বসলো। খুকুমণি ঘুঘু পাখির শরীরে হাত ভুলিয়ে আদর করতে লাগলো, ঘুঘু পাখি ও বন্ধুর হাতের স্পর্শ পেয়ে ভালোবাসা অনুভব করতে লাগলো। এভাবে প্রতিদিন ঘুঘু পাখি আসে। একদিন শুক্রবার সকাল বেলা খুকুমণি ঘুম থেকে ওঠতে দেরি হয় দক্ষিণার জানালাটাও বন্ধ। কাঁঠাল গাছে বসে খুকু খুকু বলে ডাকছে। হঠাৎ খুকুমণির বাবার ঘুম ভেঙে যায় আর লক্ষ্য করতে থাকে এমন মধুর সুরে খুকু খুকু বলে ডাকে কেডা। ডাকটা যেন খুব মিষ্টি লাগছে। রহিম সাহেব তার স্ত্রী কে ডেকে বললো এই যে শুনছো, এমন সুন্দর করে খুকু বলে ডাকে কেডা? তাইতো কে ডাকে। দুজনেই বিছানা ছেড়ে বাহিরে এলো চারদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখছে না। হঠাৎ চোখ পড়লো কাঁঠাল গাছের দিকে শুনতে পেলো আওয়াজ টা ওখান থেকেই আসছে। রহিম সাহেব ও তার স্ত্রী দেখতে পেলো গাছের ডালে বসে একটা ঘুঘু পাখি খুকু খুকু বলে ডাকছে। রহিম সাহেব বললেন, আশ্চর্য একটা ঘুঘু পাখি এমন সুন্দর করে মানুষের নাম ধরে ডাকে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রহিম সাহেব ও তার স্ত্রী খুকু ডাক শুনছেন। কতক্ষণ পর রমিলা এসে বললো কি দেখছেন স্যার? আসো রমিলা দেখো ঘুঘু পাখি কি চমৎকার ভাবে খুকু বলে ডাকে। জ্বি স্যার, আপনি আরো অবাক হবেন কিছুক্ষণ পর। কি বলছো তুমি? হ্যা স্যার ঠিক বলছি। দাঁড়ান আমি খুকুমণি কে ডেকে আনি। খুকুমণি বাহিরে আসতেই ঘুঘু পাখি উড়ে এসে খুকুমণির কাঁধের উপর বসলো। ঘুঘু পাখির ভাষা খুকুমণি বুঝে খুকুমণির ভাষাও ঘুঘু পাখি বুঝতে পারে। পাখি ও মানুষের ভালোবাসা সত্যিই অদ্ভুত। যা এ গল্পে খুকুমণি ও ঘুঘু পাখির ভালোবাসা দেখে বুঝা যায়, কখনো কখনো মানুষ ও পাখির মধ্যে ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। খুকুমণির একাকিত্ব বোধ ঘুঘু পাখি আচ করতে পেরেছিল প্রায় সময় খুকুমণি আনমনা হয়ে বসে থাকতো এখন আর মন খারাপ করে থাকতে হয়না খুকুমণি ও ঘুঘু পাখি গল্প, আড্ডা ছলে দুষ্টুমি করে খুব আনন্দ করে সময় পার হয়। যখনই খুকুমণি ঘুমিয়ে থাকে তখনই ঘুঘু পাখি এসে জানালার গ্রীলে বসে থাকে। এমন বিরল ভালোবাসা হোক শিশুদের জ্ঞান বিকাশের সহায়ক। পাখি ও মানুষের ভালোবাসা হোক আত্ম মানবতার সেতুবন্ধন।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (সন্ধ্যা ৭:৪৭)
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৯ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ৭ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT