বিষন্ন মন! আক্ষেপ নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। নির্দিষ্ট পরিস্থিতি পরিসংখ্যান করতে ভুলি নাই৷ চলে যাচ্ছি, তুফান আমাকে ঘিরে ধরেছে। তাকে অগ্রাহ্য করে যাওয়া পদক্ষেপ বের হবে৷ মোবাইল বের করলাম; স্কিন আলোকিত হওয়ার পর দেখি, মোবাইল এ পাসওয়ার্ড দেওয়া।পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি৷ কি করা যায় ভাবতে ভাবতে অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়েছি৷ দূরে দেখা যায় একটা গাছ। আর তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কোনো গাছ দেখতে পাইনি আমি৷ গাছের পাশে গিয়ে দেখলাম তার কয়েকটা পাতা জীবিত আর বাকি অর্ধেক মৃত। “আমি একা” গাছের নিচে বসলাম। অনেক্ক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম। দিন পেরিয়ে রাত আসলো। এলাকাটা নিস্তেজ। অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো গাছ সহ সমস্ত এলাকা। এখন একটু ভয়ে। গাছকে জড়িয়ে ধরলাম। গভীর রাত! পিপাসায় শরীরটা ভারি হয়ে আসতেছে।তখন এখন ভয়ংকর আওয়াজ আমার কানে আসতে লাগলো। যাইহোক মন এবার দৃঢ় রাখতে হবে৷ কিছুক্ষণ পর পর আওয়াজ টা আরো কাছে আসতে লাগলো৷ ভাবতেছি! কি করলে বাঁচতে পারবো৷ ভয়ংকর আওয়াজ টা যখন কাছে এসে গেলো তখন কোনো কিছু আর না ভেবে,গাছের উপরে উঠে গেলাম। তখন ভয়ংকর প্রাণীটা গাছের নিছে এসে হাজির৷ প্রাণী টা শীতে কাঁপতেছে৷ তখন হঠাৎ গাছটা ভেঙে পড়লো। পড়ে গিয়ে আমি কান্না করতে লাগলাম। তখন হঠাৎ প্রাণী টা বলে উঠলো “এই গাছের উপর আমার বাসা, এখানেই আমি থাকতাম,তোমাকে থাকতে দিয়ে আমি নিচে শীতে কাঁপতেছি”। তোমাকে থাকতে দিলাম তাই তুমি আমার থাকার স্থানটা ভেঙে দিলা।বলে উঠলাম ” আমি কারো থাকার স্থান নষ্ট করি নাহ। আমার আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো। প্রাণীটি জিজ্ঞেস করলো! কি হয়েছে? বললাম”পানির পিপাসা আর ক্ষুধা। তখন প্রাণীটি কান্না করতে করতে বললো “আমি যে জায়গায় থাকতাম,সে জায়গার মানুষের কোনোদিন ক্ষতি করি নাই। তারা আমার স্থানে থাকা খাবার গুলো সেই মানুষ গুলো নষ্ট করেছে। এবং আমার থাকার স্থানটুকু তারা ভেঙে দিছে৷ এখন আমিও ক্ষুদার্ত। আমাকে কেউ খাবার দিয়ে সাহায্য করে নাই৷ আমার একটা স্থান ভেঙে দেওয়ার পর, এই স্থানে এসে দেখি আপনি আমার স্থানে। তারপর দেখি আপনি এই ঘরটাও ভেঙে দিয়েছেন। আমি চুপ করে বসে পড়লাম নিচে৷ সে কান্না করতেছে৷ শীতে কাঁপতেছে। হঠাৎ! গাছের একটা ঢাল তার মাথার উপর পড়ে।তার প্রচুর রক্তকরন হয়। এখানে মরুভূমি আর মরুভূমি ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে নাহ৷ আমার পরিহিত কাপড়টা খুলে তার মাথার রক্তকরনের জায়গাটা বন্ধ করলাম। এখানে কোনো ডাক্তার এর সাথেও আমার পরিচিত নাই এবং কোনো মানুষের দেখাও আমি পাচ্ছি নাহ৷ তারপরও! তাকে নিয়ে সামনে যাইতে লাগলাম।আমার ক্ষুধা আরো বেড়েই যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে হাঁপাই যাচ্ছি। একটু বেলা যখন হচ্ছে তখন একটু দূরে একটা সমুদ্র দেখতে পেলাম৷ দৃঢ় মনে এগিয়ে যাচ্ছি। সমুদ্রের পাশে বসলাম। একটু পানি পান করলাম। এবং পিপাসা মুক্ত করলাম। ক্ষুধা বেড়েই যাচ্ছে। প্রাণীটার রক্তকরন একটু কমেছে। সমুদ্র পাড়ি দেওয়াটা এত সহজ কথা নাহ৷ পানির উপর দিয়ে যাওয়াতো যাবেই নাহ। পানির একটু দূরে প্রাণীটিকে রাখলাম। আমিও একটু দূরে বসলাম। সমুদ্র পার করে দেওয়ার মতো কিছু নৌকা পায় কিনা তার সন্ধানে একটু সমুদ্রের মাঝখানে আসলাম। স্রোত বেড়েই চলছে। আমি কূলে চলে আসলাম। বসে আছি দুইজনেই৷ দুইজনের ক্ষুধা প্রকটভাবে বেড়েই চলছে৷ সমুদ্রের এপারে কোনো সিন্ধান্তেই পোঁছাতে পারতেছি নাহ৷ পানির স্রোতে আমাদের কাছেই আসতে লাগলো। ভাবতেছি”হাতাশ হওয়া যাবে নাহ” শক্ত মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার অবস্থানে আছি। হঠাৎ কাকে যেনো দেখা যাচ্ছে। ভাবতেছিলাম!মনে হয় এই এবার কিছু ঘটতে চলেছে। মানুষটা আমাদের দিকেই আসতেছে।আমি প্রাণীটাকে নিয়ে বসে আছি৷ এবার আক্ষেপ গোছানোর সময়৷ পথিকটা আসলো আমাদের এখানেই। তার আগ্রহ জানতে চাইলাম। সেও আমাদের মতো সমুদ্র পাড়ি দিবে। তার কাছে কিছুটা রুটি ছিলো আরও বেশ কিছু শুকনা খাবো ছিলো। তার কাছে এগুলো খাইতে চাইলে সে তার খাবারের কিছুটা অংশ আমাদের দেয়। এবং এগুলো খেয়ে আমারা হালকা ক্ষুধা নিবারন করি৷ এবং সমুদ্র থেকে পানি পান করে আমরা কিছুটা সতেজ। তাকে পেয়ে আমরা আরো মনে সাহস নিয়ে আসলাম৷ তার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো। সমুদ্রে ভাঁটা আসে নাহ। কয়েকদিন চলে যায়। কোনো নৌকার দেখা নাই। খাবারও শেষের দিকে। রাতে ঢেউ এর গর্জন। শরীর অসুস্থ। মনে হচ্ছে মৃত্যু সম্মুখীন হচ্ছি প্রতিনিয়ত। গভীর রাতে সমুদ্রের মাঝখানে এক মাঝিকে লাল বাল্ব দিয়ে মিটিমিটি আলো জ্বালিয়ে আসতে দেখা যায়। আমরাও অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি। মাঝিটা ভোরবেলায় কিনারার এসে পৌঁছালে তার কাছে এগিয়ে যায় আমরা। কথা বলতে লাগলাম!
মাঝি: কোথায় যাবেন আপনারা?
মানুষ: আমরা নদীর ওপারে যাবো৷ আমাদের ওপারে দিয়ে এসে একটু সাহায্য করবেন?
পথিক: আমরা অনেকদিন না খেয়ে আছি।আমাদের জন্য সাহায্যর হাতটা বাড়িয়ে দেন।
প্রাণী: মানুষটা কে সন্দেহ মনে হচ্ছে।
পথিক মানুষ: সন্দেহ করে লাভ নাই! আমাদের পৌঁছাতে হবে।
মাঝি: আমাকে টাকা দিতে হবে।
টাকার মধ্যে রাজি হয়ে গেলো। নৌকাতে ওঠে গেলো। স্রোতের বিপরীতে নৌকার চললাম, বেশ ভালো নাহ৷ মাঝি কাউকে কল দিয়ে নদীর মাঝখানে আসতে বললো। পথিক ভাই লক্ষণ ভালো দেখতেছে নাহ৷ সমুদ্রের মাঝপথে পৌঁছানোর আগেই তুফানের গতিবেগ এবং সমুদ্রের ঢেউ চলমান নৌকাকে উল্টো করে ফেলার মতোই। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, তুফান বাড়তে থাকলো। নৌকাকে স্থির করলেন মাঝি। এর মধ্যে আরেকটা নৌকা আমাদের ঘিরে ধরেছে। ডাকাত দল আমাদেরকে মারতে চাচ্ছে।প্রাণী টা নৌকায় আছে। আমি আর পথিক নদীতে সাঁতার কাটতেছি।তুফান আর ঢেউ আমাদের দুমড়ে মুচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরও কুল কিনারার আশায় আমরা স্থির নয়। সাঁতার কাটতে কাটতে একটা জায়গায় ডুবন্ত ট্রলার পাইছি। এটাতে দাডায় থেকে বলছি “আমরা বাঁচতে চায়”। তুফান, বৃষ্টি যখন থামলো আমরা সাঁতার কাটতে কাটতে এক পর্যায়ে একটা কিনারা খুঁজে পায়। উঠে বসলাম এখানে। প্রণীটি নিখোঁজ ছিল।কয়েকটা বসবাসের স্থান দেখলাম।এবং দুইটা চায়ের দোকান আর একটা ভাতের হোটেল। ক্ষুধায় মৃত্যু যন্ত্রণা পাওয়ার মতোই অবস্থা। এই স্থানের লোকজন গুলোর সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।তাদের কাছে সব কিছু খোলে বলি। তারা আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে৷ খাওয়ার পরে আমদের গন্তব্যর উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা আবার বের হয়েছি৷ হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্য খুজতে পথের পথিক।রাস্তায় জীবন-যাপন ; মোবাইল নাই, পরিচিতরা নিখোঁজ। একসময় গন্তব্য খুঁজে পাইলে পরিবারের দিকে যখন যাবো, তখন শুনি” আমাকে খোঁজার জন্য তারা বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে এক সপ্তাহ আগেই”।কেউ নাই পরিবারে।পরিবার শূন্য; ক্লান্ত শরীর নিয়ে তাদের সন্ধানে বের হলে, তিন দিন তাদের কোনো খোঁজ পাইনি। চার দিন পেরিয়ে যাওয়ার সময় গভীর রাতে রাস্তায় নিন্দ্রা যাপন এর সিন্ধান্ত নিলাম। রাস্তার পাশে একটা নারকেল গাছের নিচে রাত টা শেষ করলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখলাম,আমার পরিবার আমার পাশে শুয়ে আছে। জীবিত অবস্থায় নয় মৃত অবস্থায়। তাদের শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে নিজেকে দোষী মনে করলাম৷ তারপরও তাদের একটু বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাইতে বের হলে, রাস্তার মাঝ-পথে নিখোঁজ প্রাণীটি গাড়ির চাপা পড়ে মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়। এবং তখনই আমার পরিবারের মৃত্যু নিশ্চিত করে বাড়ির পথে নিয়ে যায়৷ এবং সে সময় আমার বাডিতে পুলিশ চলে আসে৷ ওই প্রাণীটিকে রাস্তায় এক্সিডেন্ট এর অপরাধে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এবং সেখানে আমার চিরতরে বাসস্থান ঠিক করা হয়। একসময় বিচারক আমাকে ফাঁসির আদেশ দেয়। আমি তাদের সবকিছু বলার পরেও আমাকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সময় একটা বাক্যই উচ্চারণ করেছি “আমি অপরাধ করে নাই, এই ফাঁসির মঞ্চ আমাকে নিষ্পাপ প্রমানিত করবে”। একসময় জেলখানা থেকে বের হয়ে, আমি রাস্তায় বের হলে শীরেরর নানান জায়গায় সমস্যা দেখা দিলি আমি হাসপাতালে যায়। তখন মৃত্যুর কঠিন মূহুর্তে আমার ভাই আমাকে হাসপাতালে দেখতে আসে। তখন আমি আমার ভাই এর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। সে সময় তার ভাই বলে উঠলো ; আমার ভাই এই কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে তার এই পৃথিবীর সময় সে চিরতে ত্যাগ করেছে৷ সে তার জেলখানা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পেয়ছে৷