বেলা প্রায় ৩টা। হলে যাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। রাস্তায় উঠর ঠিক হাত ৫০ এক দূরে যখন, দুটি সিএনজি গেল। প্রথমটিতে জায়গা নাই। দ্বিতীয় টিতে জায়গা আছে চিন্তা করলাম হাত উঠাই,উঠালামও কিন্তু কাজ হলো না। চলে গেল। এবার রাস্তায় উঠে দাড়ালাম ২৫ মি. হয়ে গেছে, কিন্তু কোন গাড়ি নাই। একটা সিএনজি এলো ৫ জন আছে, তারপরও বলল ভাই বসুন; আমিও চিন্তা করলাম গাড়ি পাইকিনা সন্দেহ আছে, উঠে পরি। চাপাচাপি করে ছয় জনে বসলাম। মাইলখানেক পড়ে একজন নেমে গেল। আমার গায়ে পাঞ্জাবি ছিলতো, তাই ড্রাইভার বলল,” হুজুর পিছনে বসেন আপমি।” বসলাম ৪৫ মিনিটের পথ পথে তিনজন নেমে গেল, একজন উঠলো তিনজনকে নিয়েই ব্যেচারা গাড়ি চালালো। ড্রাইভার মহাশয় আক্ষেপ করে বলল হুজুর আজ তিনটাদিন রাস্তায় কোন যাত্রী নেই।কি করনা ভাইরাস আসলো সবাই আতঙ্কিত, কেউ রাস্তায় নামে না। আমিও দেখলাম সত্যিই, তাই। হাতেগনা পঞ্চাশ জন লোকও নেই রাস্তায়। মাঝপথে যিনি উঠেছিল, তিনি ছিল একজন ইমাম। তিনি বলে হুজুর কি বলব, প্রথম প্রথম যখন করোনার কথা সবাই শুনল, মসজিদে নানাজির সংখ্যা বাড়তে লাগল। কিন্তু যখনই সৌদিতে মসজিদ বন্ধ করে দিল, তখন থেকে হাতেগনা দশবার জনের বেশি মুসল্লী আসেনা।
আমিও একটু বললাম,”” হুজুর, উত্তরবঙে তো শীত বেশী, তো একদিন শৈতপ্রবাহ; এক ইমাম মসজিদে গেল দেখে কোন মুসল্লী নাই। ইমাম এবার মুয়াজ্জিনকে খুজতে হুজরাখানায়গেল। দেখে মুয়াজ্জিন সাহেব কম্বলের নীচে। হুজুর বলল, আপনি এখনো ঘুমান? নামাজ পড়বেন না? আজান দিয়েছেন? এবার মুয়াজ্জিন বলে ;” হুজুর, পছন্দ শীতে আর উঠিনা, কম্বলের নীচে থাইকাই আজান দিয়ে দিছি। সবাই একদম হাসলো।
সিএনজি থেকে নেমলাম।যে ব্রিজের গোড়ায় আসলেই চলে টানাটানি করে, “এই লঞ্চ ঘাঠ, কলেজ গেট, বাসস্ট্যান্ডে “। সেখানে ও আজ কোন চিল্লাপাল্লা নাই। রাস্তায় শুনেছিলাম লঞ্চ নাকি, চলে না, কিন্তু এখানে এসে দেখি, একমধ্য বয়সি লোক ডেকে ডেকে বলছে, কই যাবেন, লঞ্চ ঘাট আসেন। আমি বললাম না। আটতে উঠলাম, তারও একই অবস্থা। যাত্রী নাই। যেকজন আছে সবার মুখেই মাক্স। বাজারের দিকে তাকালাম, তাও প্রায় ফাঁকা। কমেকটা মহিলা আছে আর দুএকটা পুরুষ।
এবার হলে আসলাম। প্রথমেই নজর গেল ২০৯ এর দিকে। রুমের সামনে একটা লুঙ্গি। বুঝলাম একজনই আছে। ১০৮, ১০৯, ১০৫, ১০১, ১০২ নীচতলার এ রুমগুলোতে তালা ঝুলছে। ১১০ এর পরের রুমগুলো ভিতরে বইলা নজর দেইনা। ১০৬ এ সভাপতি আছে, ১০৭ এ প্রক্তন সভাপতি আছে। বাকীরা কেউ নাই। তালা দেখলাম ১০৩ আমার রুমেতেও। খুললাম।বেগটা রাখলাম বলি উপরে যাই দেখি কেকে আছে। ২০৫এ আনিস ভাই আছে। ২০১-১০৯ পর্যন্ত দেখলাম ২০৭ নম্বর রুম শুধু খোলা, বুঝতে বাকী হলোনা বাকীরা কেউ নাই। ২০৯ এর পরের রুমগুলোও দেখা হলোনা।
ভালো লাগেনা, যেকাজে আসলাম, কাজ সারলাম রওনা হলাম বাড়ির দিকে, নজর করলাম, জিয়া ছাত্রাবাস ফজিলাতুন্নেছা ও শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাস এর দিকে। বুঝাগেল গড়ে ২০-২৫ জন এর মতো আছে বটে। আরেকটু এগোলাম কালীবাড়ি রেলওয়ে মসজিদের পাশে, যেখানি সারাদিন ই ড্রাইভাররা ডাকে,”” এই, বড় স্টেশন, বড় স্টেশন। সেখানে আজ এক বুড়ো ইজিবাইক নিয়ে চুপটি করে বসে আছে। ফিরে যাবার সময় দেখলাম একজন কে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। লোকজন বলাবলি করতে লাগল।
এ নিশ্চয়ই বিদেশ থেকে পরীক্ষা না করে চুরি করে এসে পরছে। এজন্য ই ধরছে। ব্রিজের উপর উঠতে না উঠতেই শুতে পাইলাম সতর্ক বার্তা জানাচ্ছে মাইক দিয়া।
আর বুঝতে বাকি হলোনা, আল্লাহ কত মহান; একটা সামান্য ভাইরাস দিয়া, পুরো দেশ, শুধু দেশ না, গোটা বিশ্বকে আল্লাহ অচল করতে বেশি সময় লাগেনা; নিশ্চই আল্লাহ কিয়ামতের দিনেরও মালিক।