একজন দীনের দা‘ঈ’র কাজ তখনই প্রকৃত সার্থকতা অর্জনে সক্ষম হয়, যখন তা একজন পথ হারা পথিকের হৃদয় শুদ্ধ পথের দিকে টেনে আনার মাধ্যম হয়। হোন না সেই দা‘ঈ নিম্ন থেকে নিম্ন কোন অঙ্গনের। বড় কারো দৃষ্টিতে তার কাজ না পড়ুক—অসুবিধা কোথায়? তাঁর মাকবুলিয়্যাত তো এখানে নয়; বরং মাকবুলিয়্যাত তাঁর ঐ প্রকৃত দাওয়াহ’র মাধ্যমে ধরা দিবে, যা দ্বারা সে পাপের সাগরে ডুব দেওয়া হৃদয়কে প্রশান্তির নগরের রহমের বারিধারায় ভেজাতে সক্ষম হবে।
বর্তমান সময়ে ইসলামী নাশীদ অঙ্গন অনেকটাই বিতর্কিত। অবশ্য এমন হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। যা সবারই দৃষ্টিগোচর হয়। তবে এ-অঙ্গনের কিছু কাজকে দেখেই অপরাপর প্রকৃত মুগান্নী ভাইদের স্বচ্ছ-সুন্দর কাজগুলোকে ছুড়ে ফেলা মোটেও ঠিক নয়। যা অনেকের বেলায়ই হয়ে থাকে; বরং আপনি যদি সঠিক বিবেকের মানুষ হোন—তবে তাঁর কাজটা আপনি দেখতে বাধ্য হবেন যে,সে কী শুদ্ধতায় আছে, না-কি শুদ্ধতার সারি থেকে বিচ্যুত। সে কী প্রকৃতপক্ষেই রবের পথে আহ্বান করছে, না-কি দুনিয়াবী শান-মান হাসিল করা উদ্দেশ্য।
আমি নাশীদপ্রেমী মানুষ। সবার নয়, তবে ( আমার ধারণা অনুযায়ী) দু-তিনজন মুখলিস মুগান্নীর। যাদের গাওয়া আমাকে শুদ্ধ পথে ফিরে আসার যথেষ্ট অনুপ্রেরণা দিতে পারগ হয়। দিল কাঁদায়।চোখ অশ্রুতে ভেজায়। গোনাহের পথকে দূর-বহুদূর ঠেলে দেওয়ার তাগাদা দেয়। দিন কয়েক আগে একজন প্রকৃত মুগান্নীর নাশীদ শ্রবণ অনুভূতি নিয়ে লিখেছিলাম কিছু কথা। যা থেকে যে কারো একটু হলেও অনুমিত হবে যে, নাশীদ অঙ্গনের সবার কাজ বৃথা নয়; বরং প্রকৃত কামিয়াবির চেয়েও বেশী কিছু তাঁর এই পুণ্য কাজের মাধ্যমে অর্জন হয়।
শ্রবণ অনুভূতিটি ছিলো এমন—সুপ্রসিদ্ধ নাশীদ ‘ইয়া মুজিরু’। রমজানের নাশীদগুলোর মধ্যে আমার সবচে’ প্রিয় নাশীদ। নাশীদটি যদিও রমজানের, তবুও শুনা হয় সারা বছরই। খুব দরদ মাখা গলায় গেয়েছেন গানটি — আমার অত্যধিক প্রিয় কোন এক মুগান্নী হাফিযাহুল্লাহ। ‘ইয়া মুজিরু’ যখনই শুনা হয়, তখনই হৃদয়ে অসামান্য প্রশান্তি অনুভব করি। বিশেষ কোন মুহূর্তে যখন শুনা হয়, তখন মনে হয় যেনো আমি রবের খুব কাছে আছি। হৃদয়াশ্রু মাখিয়ে তাঁর দরবারে চাচ্ছি—গোনাহের মার্জনা, ইবাদাতের মাকবুলিয়্যাত, আর একাধিকবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং চির সুখের ঠিকানা ‘জান্নাত’। হয়তো প্রত্যেক শ্রোতারই এমনটা মনে হয়। অথবা তার চেয়েও বেশী কিছু। হবেনাই বা কেনো! আমার বিশ্বাস, এটা যিনি গেয়েছেন—তিনি খুউব খুলুসিয়্যাত নিয়েই গেয়েছেন। যার ফলেই, নাশীদটি অসংখ্য শ্রোতার রবকে স্মরণের মাধ্যম হয়। রবের স্মরণে চোখের পাপড়ি ভেজানোর মায়াময় পথ হয়। বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ রাতে কিংবা শীতের হিম শীতল-ঠান্ডা রাতে অথবা গ্রীষ্মের প্রচন্ড কড়া গরম রাতে, যখনই আমি দিল দিয়ে নাশীদটি শুনি— আমার দিল কাঁদে অনুশোচনায়। অসামান্য ভালো লাগা আসে হৃদয়ে। মাঝে -মধ্যে চোখ জোড়াও ভিজে ওঠে। তখন এক মুঠো প্রশান্তির পরশ পাই। আবারও হারাই সেই প্রশান্তিতে। দিল দিয়ে আবারো শুনি নাশিদটি। এভাবেই কতো শত বার শুনা হয় নাশীদটি তার কোন ইয়ত্তা নেই! রব আমাদের প্রকৃত এই মুগান্নী ভাইকে ভাইকে আমাদের মাঝে বহু বছর বাঁচিয়ে রাখুন! তাকে কালজয়ী নাশিদ— ‘ইয়া মুজিরুর’ মতো আরো নাশিদের সৃজক হিসাবে কবুল করুন!
আলহামদুলিল্লাহ সাহিত্যপাতা পত্রিকা কে আমার অন্তর থেকে মোবারকবাদ জানাই। আমার প্রিয় ভাতিজার প্রবন্ধ গুলো প্রকাশ করার জন্। আল্লাহ আপনাদের উত্তম বদলা দান করে।