যুক্তরাজ্যের উইভেনহো শহরের নদীতীরবর্তী গ্রামে থাকতেন জয় ফক্স। ২০ বছরে বয়সে তাঁর বাগ্দান হলেও বিয়েটা ভেঙে যায়। বিয়ে ভাঙায় ভাঙা হৃদয়ে বিশ্ব ঘুরে দেখার মনস্তির করে ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে বেরিয়ে পড়লেন। এর আগে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহেই কেটে গেছে এক দশক। তবে মায়ের মুখে মিসর, চীন আর ভারতের বিভিন্ন গল্প শুনেছিলেন। জয়ের বাবা রয়্যাল স্কটসের বাদ্যদলের প্রধান বাদক হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন মা আর ভাই। বড়ভাই অ্যালানের কাছে গল্পে শোনা ভেনিস শহরের বিভিন্ন জায়গা তিনি নিজের চোখে ঘুরে দেখতে চেয়েছেন। প্রথমবার ঘর থেকে বের হওয়ার সে গল্প শোনা যাক জয়ের ভাষ্যেইÑ ‘প্রথমে বাগ্দানের আংটি বিক্রি করে দিয়ে গ্রাম থেকে ডোভারে গেলাম। তারপর ট্রেনে করে ঘুরলাম ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড আর ইতালি। সেই শুরু থেকে এই ৮৯ বছর বয়সেও প্রথম দিনের মতেই বিশ্বের নানা প্রান্ত ঘুরে দেখতে চাই।’
ইতালিতে গিয়ে জয়ের লুইজির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। দুজন মিলে ঘুরলেন পোর্টোফিনো, রাপালো, মিলানসহ অনেক শহর। জয়কে নিয়ে বিশ্বের সব গির্জা ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন লুইজি। কিন্তু জয়ই বিদায় নিয়ে ফিরলেন নিজের গ্রামে। বাড়িতে ফিরে নিজেকে এক ফুরফুরে নতুন মানুষ মনে হলো। কিছুদিন পর হাতে এল লুইজির পাঠানো তাঁদের যুগল ছবি। ঘুরে ঘুরে ভাঙা বিয়ের কষ্ট বিলিন করে ভুলে গেছেন সবই। একসময় জয়ের পরিবার ইংল্যান্ড থেকে কানাডায় চলে গেল দারুণ আনন্দের কানাডা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন জয়। সেখানে আরও এক পুরুষের সঙ্গে পরিচয় হয় যিনিও ঘুরে বেড়ান। অল্প সময়ের পরিচয়ে তাঁকে বিয়ে করে সংসার পাতলেন, তিন সন্তানের মা হলেন। আর সঙ্গী, সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
জয় বলেন, ‘আমার জীবনসঙ্গী আমাকে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে বলেছেন। তার সঙ্গে ঘুরে আমি অনেক রাষ্ট্র, নদী আর জলপ্রপাত দেখেছি। সন্তানেরা বড় হলো, তাঁদের আলাদা সংসার হলো। এর ফাঁকে ফাঁকেও একা একা ঘুরেছেন জয়, যার মতো আনন্দ তিনি আর কিছুতেই পান না। নিজের ৬৫তম জন্মদিনে একাই গেলেন তাঁর জন্মে। মাত্র তিন বছর বয়সে যেখান থেকে যুক্তরাজ্যে চলে এসেছিল তাঁর পরিবার। স্কটল্যাণ্ডের রয়্যাল স্কটস অব এডিনবার্গের ব্যারাকে জন্মের নির্ধারিত স্থান খুঁজে নিয়ে কিছুক্ষণ কাটান। জয় বলেন, ‘আমি আমাদের বাসাটার দিকে তাকিয়ে আছি। সন্ধ্যা নামল। এক বংশীবাদক বাঁশিতে বিলাপের সুর তুলতে লাগল। আমার ভেতর যে কী হয়ে গেল, কোনো ভাষায় তা বর্ণনা করা সম্ভব না। স্কটল্যান্ড সব সময়ই আমার প্রিয় দেশ। কেননা, সেখানেই আমার জন্ম।’
২০১৫ সালে জীবনসঙ্গী মারা গেলে আবারও একা হয়ে পড়েন জয়। ৮০ বছর বয়সে একাই ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে বের হলেন ইউরোপে। ৮৪তম জন্মদিন জয়ের সঙ্গী হয়েছিল মেরু জ্যোতি (নর্দান লাইটস), তখন তিনি ছিলেন নরওয়ে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরেছেন সারা দেশ। মাটরবোটে করে ডলফিনের সঙ্গে নদীতে ঘুরেছিলেন। সেটি তাঁর বিশ্বভ্রমণের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। জয় বলেন, ‘পানি আমি ভীষণ ভয় পাই। পুরোটা সময় আমি নিজের কণ্ঠনালি উজাড় করে দিয়ে চিৎকার করেছি। সে কী উত্তেজনা! ডলফিনরা মোটরবোটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ধরে ফেলতে চাচ্ছে। আমি শাঁই শাঁই করে বাতাস কেটে এগিয়ে যাচ্ছি। ভাগ্যিস, ভয়কে জয় করে পানিতে নেমেছিলাম!’ জয় জানান, তাঁর ‘ট্যুরিস্ট অ্যাকটিভিটি’র চেয়ে হৃদয়ে গেঁথে থাকার বিষয়গুলি ভালো লাগে। ৮৯ বছর বয়সে এখনো নিজে মোড়ের দোকানে গিয়ে স্যান্ডউইচ আর কফি অর্ডার করে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামা দেখে। পরের জন্মদিনে আবার ফিরতে চান আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে, ইতালির লেক কোমোয়, যেখানে বন্ধুত্ব হয়েছিল লুইজির সঙ্গে।
সুত্র: বিবিসি/প্রথম আলো।
https://www.youtube.com/watch?v=zOy7aoH0OUg
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com