স্কুলের পাশেই একটি চায়ের দোকান। দোকানটি গাজনা বাজারের পূর্ব পাশে অবস্থিত। পাশে স্কুল থাকায় যুব শ্রেণির লোকেরা একটু লুকিয়ে, পান, চা বা অন্যান্য কিছু খেতে পারে। আমি চা, পান বিড়ি সিগারেট কিছু খাই না। বলতে পারেন টাকা দিয়ে কিনে খাইনা। কেউ রিকুয়েষ্ট করলে না করতে পারি না। এভাবেই চলছে আমার চা খাওয়ার দিন গুলো। চায়ের দোকানে খুব একটা বসা হয় না। ও দিকে যাওয়াও হয় না। যদি কেউ জোরপূর্বক নিয়ে যায় স্কুলের পাশের দোকানে তবে যাই।
সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো। সারাদিন টুপটাপ বৃষ্টি পড়তেই ছিলো। স্কুলেই ছিলাম। কেন জানি চা খেতে ইচ্ছে হলো। ইচ্ছাটা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েই বাড়তে ছিলো। মন এক ধরণের দ্বিধায় ছিলো। আমি চায়ের দোকানে যাই না। এবং চা কিনে ও খাই না। এই বিষয়টি সবার জানা। চায়ের দোকানে দেখলে কে কি বলবে সেই চিন্তা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। তারপর যদি দেখে চা খাচ্ছি কি ভাববে এমন নানান কিছু ভাবনা ছুটছাট দৌড়াচ্ছিলো মনের ভিতর।
ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশ। শৈত্যপ্রবাহের মতো। বৃষ্টির ঘুরঘুরাণি শব্দ। এই সময় এক কাপ গরম চা বেশ হবে ভেবেই স্কুলের অফিস সহকারীর ছাতাটি নিয়ে চায়ের দোকানে রওয়ানা দিলাম।
পকেটে বেশি টাকা নেই। সর্বসাকুল্যে কুড়ি টাকা হতে পারে। খুব একটা পকেট খরচ নেই। সেই জন্য পকেটে বেশি টাকা রাখা হয় না। যা হোক চায়ের দোকানে কেউ নেই। চায়ের দোকানদার আর আমি। ভালোই লাগলো। খুশি হলাম বেশ। বললাম নন্দন বাবু এক কাপ চা দিও তো। চিনি একটু বেশি দিও। নন্দন আমাদের ছাত্র ছিলো। বেশি দূর লেখাপড়া করেনি। দারিদ্রতা পড়াশোনাকে ঘ্রাস করেছে।
কিছুক্ষণ পর গণিত স্যার এলেন, বললেন নন্দন আমাকে এক কাপ লাল চা দিও। পরক্ষণেই বিজ্ঞান স্যার এলেন, বললেন নন্দন আমাকে এক কাপ দুধ চা দিও। ক্রমে ক্রমে প্রায় সকল স্যার এলেন বললেন, নন্দন, আমাকে এই চা, সেই চা দিও। সবাই আমার মুখের দিকে তাকান। মুখ টিপে হাসেন। সবাই বলল, কম্পিউটার স্যার তো চা খুব একটা খান না,
চা উনাকে পরেই দাও।
নন্দন তাই দিতে লাগলো। আমি নির্বাক চেয়ে রইলাম।
একবার সব স্যার চা খেয়ে চলে যেতে লাগলেন। আর বলে গেলেন, নন্দন কম্পিউটার স্যারের কাছ থেকে বিল নিও। আমি পকেটের দিকে তাকালাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম দশটাকার দুটি নোট আছে। কি এক মহা সমস্যায় পড়ে গেলাম। মনে মনে ঘামতে ছিলাম আর অবাক হয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখতে ছিলাম। ইতিমধ্যে নন্দন কোনো রাগ ঢাক না করে বলল, স্যার
আজ না হয় বিল না দিলেন কাল চা খেতে এসে দিয়েন। আমি তো অবাক নন্দন ও আমার পকেটের করুণ অবস্থা জানে?
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com