(পিতাকে নিয়ে সন্তানের হৃদয়ের কালিতে লেখা একটি স্মৃতিগদ্য)
আব্বু। বলা যায়, জীবনের প্রারম্ভ থেকেই হররোজ জীবন যুদ্ধের তিক্ত ময়দানে লড়ে যাওয়া এক মানব। নিজেকে সময় দেওয়া, নিজেকে নিয়ে ভাবা— এই কাজগুলো করা তাঁর পক্ষে কিছু কালের জন্যও সম্ভব হয়নি। পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন স্বজনদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টায় থেকে। হৃদয় ভেঙ্গে দু’টুকরো হওয়ার উপক্রমও যখন হয়েছে, তখনও বলেননি যে, আমি ব্যর্থ। আমার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়।
আব্বুর জীবনের মানেটাও যখন বোঝা হয় নি, তখন দাদা মারা যান। আব্বু বাবা হারানোর বুক ভরা ব্যথা নিয়ে নামেন জীবন সংগ্রামে। পড়া-লেখা করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্নগুলোকে হত্যা করেন গলা টিপে।
আব্বু পরিবারের বড় সন্তান। পরিবার সদস্য দশ জন। ওদেরকে দেখবে কে? দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ওদের মুখে কে তুলে দিবে? দাদা মারা যাওয়ার কিছু কাল পরই সিদ্ধান্ত হলো আব্বুকে প্রবাসে পাঠানো হবে। বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে আব্বু পারি জমান প্রাবাসে। স্বজনদের সুখে দিন কাটানো দেখে এক মুঠো ভালো লাগায় ডুব দিতে। পরিবারের ছায়া হয়ে দাঁড়াতে।
দিবা-নিশী কাজে ব্যস্ত থেকে, মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে, আব্বুর নিত্য কাটছে। দিন শেষে ক্লান্তির পর ভালো না লাগা গুলো নিজের মতো করে বলার জন্যও কাউকে পাচ্ছেন না কাছে। বাড়িতে এখন সবাই ঠিক-ঠাক চললেও আব্বুর হৃদয়ের হাহাকার কে দেখে? আপনজনদের কেউ নেই সেখানে; যদিও উনার সুহৃদ আপন মামা একজন কাছে আছেন। তবুও প্রবাস তো প্রবাসই। মায়ের ভালোবাসা, বাবার আদর, ভাই-বোনের খুনসুটি— সব কিছু থেকেই তো একজন প্রবাসীর জীবন সম্পূর্ণ বঞ্চিত।
পরবর্তীতে আব্বুর জীবনে খানিকটা সুখ ধরা দিলেও, তাঁর জীবন যুদ্ধ সম্পূর্ণটা থামেনি মুহূর্তের জন্যও।
নিজ ফ্যামিলি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেলেও, ছোট ভাই-বোনদের জীবনের প্রতিটা ঝড়-ঝাপটা মুকাবেলার প্রধান কাজ তাকেই আঞ্জাম দিতে হয়েছে। এই কাজগুলো করতে গিয়ে কখনো বা হৃদয় মুচড়ে গেছে। আবার কখনো মুচড়ে যাওয়া সহ্য করতে না পেরে কেঁদেছে। কখনো আবার হৃদ ব্যথায় ব্যথিত হয়ে চোখ জোড়াও ঝরিয়েছে অশ্রু।
আব্বুর এই সব বেদনারা তাঁর দিল ভেঙ্গে টুকরো করার পরও সমাপ্তি টানেনি। এখনো তাকে জড়িয়ে আছে তাঁর এই সব দুঃখ। জানিনা, মালিক আব্বুর এই সব দু:খের খানিকটা মুছে দেওয়ার তাওফিক আমাকে দিবেন কি-না! তবে হ্যাঁ— চেষ্টা করবো প্রাণপণ। আব্বুর এই সব কষ্টকে একটুখানি সুখের রূপ দিতে। রব আব্বুকে যেনো এ-পারে না দিলেও, অপারে তাঁর এই সব ত্যাগের সুন্দর বিনিময় দান করেন। আ-মী-ন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com