আদুর বাবার প্রবল প্রীতির সংসার। তারা সংসার জীবনে মুক্ত পাখির মত সুখী। সুখের ঘরে আগমন অতিথি আদুর। আদু জন্মের পরে সুস্থ থাকলেও মা কিন্তু রক্ত শূন্যতায় ভুগতে ছিল। শেষ পর্যন্ত ও নেগেটিভ রক্তের অভাবে ঐ পারে চলে যায়। আদুর বাবার কাঁদে এসে পড়ে আদুকে লালন-পালন করার দায়িত্ব। আদুকে বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট পর পর দুধ খাওয়ানো। দশ থেকে বিশ মিনিট পর পর কোলে অথবা বিছানায় প্রস্রাব করলে সেটা সাথে সাথে পরিবর্তন করা। রাতের পর রাত জেগে থাকা সে যেন এক রাত জাগা পাখি। শত সাধনা করতে করতে আদু বড় হয়ে উঠছে। আদু নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। আদুর বাবার কাজ করতে যেতে হয় কারণ কাজ না করলে খাবে কি? আদুকে ঠিক সময়ে খাবার দিতে পারে না। স্কুলে ঠিক সময় পৌঁছে দিতে পারলেও ঠিক সময়ে আনতে পারে না। আদুকে নিয়ে তার মাথায় যত চিন্তা। কখন কি করে বসে। আদুর চাচি আদুদের ভাত কত দিন রেঁধে দিবে? আদুর বাবা আবার দ্বিতীয় বিবাহ করতে রাজি না। আদু এখন কলেজের ছাত্র। আদুর বন্ধু বান্ধবী অনেক। যদি তারা বাড়ি আসতে চাই কে তাদের যত্ন করবে। তারা গিয়ে কলেজে বদনাম করলে আদুর আর কলেজে যাওয়া হবে না। এই কথা তার বাবাকে বলল। তার বাবা আদুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিবাহ করতে বাধ্য হয়। বাবা আর সৎ মাকে নিয়ে তাদের সংসার বেশ চলছিল। হঠাৎ একদিন এক মহিলা বলিল আদু তোর মাকে তোর বাবা মেরে ফেলেছে। আদু তার কথা হাসতে হাসতে উড়িয়ে দিল। আদু এক লাবণ্যময় শান্ত প্রকৃতির মেয়ে কে পছন্দ করেছে। আদু তার হৃদয়ের কথা স্বপ্নের রানী কে বলবে বলবে বলে বলতে গিয়ে বার বার ফিরে আসে। দীর্ঘদিন তার পথ চেয়ে থাকে। একদিন আদু তার সাথে একটি ছেলে কথা বলছে দেখে সে কি রাগান্বিত। ছেলে টির সামনে গিয়ে বলিল আমি তোমাকে পছন্দ করি এবং ভালবাসি। সে বলিল তোমার বাবা তোমার মাকে যদি মেরে ফেলতে পারে তুমি যে আমাকে মেরে ফেলবে না এর প্রমাণ কি? হঠাৎ সেই মহিলার কথা মনে পড়ে গেল। চিন্তায় সে নেশাগ্রস্ত হতে বাধ্য হয়। বাড়ি ফিরে মাকে মারধর করতে তার বাবা ঠেকাতে যায়। তাকে ও আঘাত করে। পুলিশ এসে আদুকে ধরে নিয়ে যায়। আদু কে কিছু সময় থানায় নিয়ে রাখলে তার নেশা কেটে যায়। আদু ওসি কে বলে, আমি থানায় কেন? ওসি সব খুলে বলে। আদু তার বাবার স্মৃতি মনে করতে চিৎকার করে কাঁদতে লাগে। চিৎকার করে কাঁদছো কেন? স্যার! যে বাবা আমার জন্মের পর থেকে, বাবা হয়ে মায়ের মত ভালবাসা দিয়ে বাজার থেকে দুধ এনে খাওয়ায়ছে, প্রস্রাব করেছি পায়খানা করেছি সব পরিষ্কার করেছে, গোসল করিয়েছে, রাতে ঘুম পাড়িয়েছে, জ্বর হলে সারা রাত জেগে জেগে জল পটি দিছে, নিজে না খেয়ে আমাকে খাওয়ায়ছে সেই বাবার গায়ে হাত দিছি স্যার। এই মুখ কি করে দেখাবো ? আমাকে আপনি মেরে ফেলেন। এর মধ্যে আদুর মা বাবা থানায় মামলা করতে উপস্থিত। ওসি কে বলিল স্যার আদুর নামে মামলা করতে এসেছি। ওসি বলিল সত্যি মামলা করবেন ? হ্যাঁ স্যার! মামলা করে কি সাজা দিবেন? ও সারা জীবন যেন কারাগারে থাকে। বড় সাজার ব্যবস্থা করে দিব? কি? ওকে এমন ধারায় ফেলায় দিব যে এক সপ্তাহের মধ্যে ফাঁসির রায় কার্যকর হবে। এই কথা শুনে সাথে সাথে কেঁদে বলিল স্যার, আপনি আমার ছেলে কে ছেড়ে দেন। আমি ওকে মাফ করে দিছি।