আদিব ও আদিবা একই স্কুলে পড়ে। আদিবের বাবা একজন দিনমজুর, পরের ক্ষেত খামারে কাজ যা পায় তা দিয়েই কোন রকম সংসার চলে। মাঝে মাঝে আদিব তার বাবার সাথে কাজ করে ডবল পয়সা পায় তাই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেও একটা কিছু করার চেষ্টা করে। আদিব পড়াশোনা খুবই মেধাবী তাছাড়া নম্র ভদ্র প্রকৃতির ছেলে। আদিবা একজন ধনী পরিবারের মেয়ে তার বাবার ব্যবসা আছে। খুবই সাজগোছ করে চলে আদিবা। বাবা-মার একমাত্র আদরের মেয়ে। আদিব ও আদিবার বাড়ি একই গ্রামে। প্রায় সময়ই আদিবের বাবা আদিবার বাড়িতে কাজকর্ম করে দেয় এমনকি তাদের বাজার সদাই-পাতি করে দেয়। একদিন আদিবার বাবা আদিবের বাবা কে বললো, রহিম উদ্দিন তুমি তো অনেক পরিশ্রম করো তাতে কী তোমার সংসার চলে? রহিম উদ্দিন বললো কী আর করবো কোনরকম চলে তাছাড়া পোলাডা স্কুলে পড়ে তার খরচ জোগাতে একটু হিমশিম খেতে হয়। আদিবার বাবা গ্রামের মাদবর। মাদবর সাহেব বললো, রহিম উদ্দিন তুমি একটা কাজ করতে পারো যদি পোলাডারে তোমার সাথে কাজে নিতা তাহলে তো তুমি ডবল পয়সা পাইতা। না,না, মাদবর সাহেব এমন কথা বলবেন না আমি আমার পোলাডারে অনেক স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করাইতাছি, সে একদিন বড় হইয়া আমাগোর দুঃখ কষ্ট গুলো মুইছা দিবো আর আমার পরের ক্ষেতে কাজ করা লাগবো না। মাদবর সাহেব, আরে রহিম উদ্দিন আমি কথাটা এভাবে বলিনি এর অর্থ এটা না-যে তুমি তোমার পোলার পড়াশোনা বন্ধ করে কাজ করতে হবে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তোমাকে একটু সাহায্য করলো আর কী। তা মন্দ বলেননি মাদবর সাহেব, তবে আমি আমার পোলাডারে কাজের কথা কইতে পারুম না। ঠিক আছে রহিম উদ্দিন তুমি যাও কাল আমার ক্ষেতে একটু কাজ করে দিও সকাল সকাল আইসো। আসবো মাদবর সাহেব, এখন আমি আসি। দুজনেই চলে গেলো। পরের দিন আদিব স্কুল থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় দেখলো তার বাবা মাথায় করে ধানের পোজা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। আদিব দৌড়ে এসে বাবার পোজাটা নিজের মাথায় নিলো। আদিব তুই একি করছিস তুই পোজা টানতে পারবিনা বাফ। বাবা তুমি যদি পারো আমি কেন পারবোনা কার বাড়িতে নিয়ে ফেলতে হবে তুমি বলো? মাদবর সাহেবের উঠোনে। ঠিক আছে বাবা চলো। আদিব পোজাটা আদিবাদের উঠোনে রাখলো। আদিবা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো আদিব স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পোজা টানছে। আদিবা হাসছে আদিব দেখতে পেলো। আদিব বললো, বাবা আমি যাই তুমি আসো। ঠিক আছে বাফ তুই যা আমি আইতাছি মাদবর সাহেবের কাছ থেকে আজকের কামের টাহাডা নিয়া আই। পরের দিন আদিব স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আদিবা এসে বললো, আদিব কাল তোমাকে কৃষকের ভূমিকায় খুব মানিয়েছে। আদিবার বান্ধবী জিজ্ঞেস করলো কিসের ভূমিকার কথা বলছিস? জানিস আদিব শুধু ভালো ছাত্রই না ভালো কৃষক ও বটে। তাই নাকি! হ্যা কাল আমাদের বাড়িতে আদিব কৃষকের কাজ করেছে। আদিব বললো, শোন ,তোমার কাছে আমি হাসির পাত্র হতে পারি কিন্তু বাবার কাছে আমি কৃষক রাজা তাছাড়া আমি কাজকে কখনো ছোট করে দেখি না কারণ কাজ হলো পুরুষের অলংকার। বাহ বাহ সুন্দর ডায়লগ ও পারো দেখছি। রমজান চাচা ঘন্টা বাজিয়ে দিল বুঝিয়ে দিলো ক্লাসের সময় হয়ে গেছে সবাই ক্লাসে যেতে হবে। এভাবেই খুনসুটির মধ্যে তারা এসএসসি পাস করে। দুজনে একই কলেজে ভর্তি হলো। একটা সময় এলো আদিব যেন আদিবাকে ভালোবেসে ফেলছে। তাকে যতই দেখে ততই যেন ভালো লাগে। আদিবা না দেখলে খারাপ লাগে অবুঝ মনকে বুঝানো যায় না কিন্তু আদিবা আদিব কে এমন কিছুই মনে করে না। আদিব আদিবাকে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু মুখ ফোটে বলতে পারে না কারণ বলার সাহস হয়না। আদিব তার না বলা ভালোবাসা নিজের মাঝেই পোষে রাখে কিন্তু তা প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দেয় বুকের মাঝে। দেখতে দেখতে তারা দুজনেই বিএসসি কমপ্লিট করে ফেললো। দুজনেই মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পরিপূর্ণ বয়স তাদের তারা নিজেরা নিজেদের ভালো মন্দ বুঝতে অসুবিধা হয় না। একদিন আদিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুল বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর অপেক্ষা করছে কখন আদিবা আসবে এ পথে। কিছুক্ষণ পর আদিবা এলো। আদিব ভীরু চোখে তাকিয়ে বললো আদিবা শোনো। আদিবা মুচকি হেসে বললো, কিছু বলবা। আদিব কাছে এসে সাহস করে হাতটা ধরে বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি। একথা শুনে আদিবা রাগে নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে জোরে কষিয়ে একটা থাপার বসিয়ে দিলো আদিবের গালে। আদিব কিছু না বলে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিবা বললো, তোমার আর আমার মাঝে রাতদিন তফাৎ, তুমি কী আর আমি কী কখনো আয়না নিজের চেহারাটা দেখেছো, তোমার বাবা আমাদের বাড়ির কাজের লোক তুমি নিজেও কাজ করেছো সুতরাং তোমার সাথে আমার যায় না, ভবিষ্যতে আর কোনদিন আমাকে ভালোবাসতে আসবানা মনে থাকে যেন। সত্যি সত্যিই “মানুষ প্রেম করে না, প্রেম হয়ে যায় “। আদিব পাগলের মতো আদিবাকে ভালোবাসে কিন্তু আদিবা অর্থ আর বৃত্তের দম্ভে নিজেকে হিংসার চাদরে মুড়িয়ে অহংকারের আবরণে ডেকে রেখেছে। কিছুদিন পরেই তাদের লেখাপড়া শেষ হয়ে যায়। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরপরই ভালো চাকরির খুঁজে শহরে চলে যায় আদিব। কথায় আছে চেষ্টা কখনো বিফলে যায় না, সফলতা আসবেই। আদিব ভালো একটা কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে জয়েন করলো। বেতন প্রতি মাসে ৭০,০০০ হাজার টাকা। আর দিকে আদিবা পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতেই বসে আছে। আস্তে আস্তে আদিবের সংসারে দুঃখের গ্লানি মোচন হতে শুরু করলো। রহিম উদ্দিন খুবই খুশি আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বলে, হে আল্লাহ তুমি আমার দিকে মুখ করে তাকিয়েছো, আমার স্বপ্ন গুলো বিধায় যায়নি পূরণ হয়েছে তার জন্য তোমার দরবারে শতকোটি শুকরিয়া জানাই,আলহামদুলিল্লাহ। এরই আদিব একদিন ঢাকা থেকে বাড়ি আসে আদিবার সাথে দেখা করার জন্য তাদের বাড়িতে যায়। আদিব আদিবা কে দেখে বললো কেমন আছো তুমি? আদিবা বললো, ভালো আছি। আমি তোমাকে আজও মনে প্রাণে ভালোবাসি, তুমি শুধু একবার সম্মতি দাও আমাকে ভালোবাসো তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার বাড়িতে নিয়ে যাবো। ভাঙা ঘরে থেকে চাঁদের স্বপ্ন দেখো না, আমি তোমার মতো অযোগ্য লোককে কখনোই বিয়ে করবো না ভালোবাসবো না, কতো টাকা বেতন পাও তুমি আমার কসমেটিকস এর দাম দিতে গেলে তোমার সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে এসেছো আমাকে ভালোবাসতে আদিবা বললো । আদিবার কথা শুনে আদিব রাগ করে চলে গেলো। কিছুদিন পর আদিবার বাবা আদিবাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেয়। আদিবা স্বামীর ঘরে সুখের সংসার করছে। আদিবা স্বামীর সাথে ঢাকা থাকে। একদিন কোম্পানির পিকনিক স্পটে তাদের দেখা হয়। আদিবা আদিব কে দেখে বললো, আরে আদিব তুমি এখানে! হ্যা, কেমন আছো আদিবা? ভালো আছি, জানো আদিব আমার বিয়ে হয়েছে, এখানে আমি আমার স্বামীর সাথে এসেছি সে বড় অফিসার। একটু পরেই আদিবার স্বামী এলো। আরে স্যার আপনি আদিবা কে চিনেন নাকি? আদিব মুচকি হেসে বললো হ্যা চিনি আমরা একসাথেই পড়াশোনা করেছি। ও তাই ভালোই হলো। আরে তুমি তাকে স্যার বলছো যে! আদিবা তুমি জানো না, উনি আমার অফিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমার চেয়ে অনেক বড় কর্মকর্তা তাছাড়া স্যার অনেক বড় মনের মানুষ ভালো মানুষ ও বটে কিছুদিন আগে স্যারের রিকোয়েস্টে আমার ইনক্রিমেন্ট হয় বলতে পারো স্যার আমার অবিভাবক, সব সময় আমার খুজ খবর রাখেন আদিবার স্বামী হিমেল বললো। হিমেলের কথা শুনে আদিবা কেঁদে দিয়ে বললো, সত্যিই আদিব তুমি অনেক বড় এবং মহত মনের মানুষ তোমার তুলনায় তুমি নিজেই, পরিস্থিতি কখনো স্হায়ী হয়না পরিবর্তন ও হয়, তোমার সফলতার গল্পে তুমি এক মহা নায়ক। সত্যিকার অর্থে যারা মনে প্রাণে ভালোবাসে তারা কখনো হারে না বরং তারাই হেরে যারা মিথ্যে অহংকারের দম্ভে অশক্ত হয়ে নিজেকে যোগ্য বলে কাউকে অযোগ্য বলে তাড়িয়ে দেয়।