নাম হোসেন মুহাম্মদ বিএসসি গনিতের শিক্ষক তিনি। আমাদের বিদ্যালয়ের একজন নম্র ভদ্র এবং অভিজ্ঞ। সবাই তাকে হোসেন স্যার বলে ডাকতো আমিও ডাকতাম স্যার কখনো ক্লাসে বেত নিয়ে আসতেন না এমনকি কাউকে মারতেন ওনা। সাদামাটা চিকন লম্ব শ্যামলা চেহারা তার সবসময় মুখে হাসির ঝলক লেগেই থাকতো। আমি গনিত বুঝতে পারতামনা কিছুতেই মাথায় ঢুকতো না। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে স্কুলের দেয়াল টপকে পালিয়ে যেতাম। একদিন স্যার আমাকে দেখে ফেলে আমি দেয়াল বেয়ে পালিয়ে যাচ্ছি সেদিন স্যার আমাকে কিছুই বলেনি এভাবে তিনি লক্ষ্য করলেন আমি তার ক্লাসে প্রায়ই থাকি না। স্যার একদিন তার ক্লাসের আগেই আমাকে ডেকে বললেন তুমিতো একদিনও আমার ক্লাস করোনা আজ একটা দিন কষ্ট হলেও আমার ক্লাসে থাকবা এটা আমার অনুরোধ স্যারের মুখে দিকে তাকিয়ে আমি খুব লজ্জা বোধ করলাম। যাহোক সেদিন আমি স্যারের কথামতো ক্লাসে বসে রইলাম পিছনের বেঞ্চে কিছুক্ষণ পর স্যার আসলেন এসেই চোখ ঘুরিয়ে আমাকে খুঁজ করতে লাগলেন দেখলেন আমি পিছনের বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছি স্যার আমাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন তুমি সামনে আসো। আমি ভয়ে ভয়ে সামনে এসে বসলাম। স্যার বললেন আমি তোমাদের নই বন্ধু ভাবতে পারো কারণ আমরা শিক্ষক ছাত্র বন্ধু তোমরা নির্ভয়ে আমাকে প্রশ্ন করতে পারো আমি বন্ধু মনে করে উত্তর দিবো, যদি তোমরা আমার পড়া একবার না বুঝো বারবার বোঝাবো যাতে একবারও হলেও তোমাদের মাথায় বিষয় টা ঢুকে। স্যারের কথা গুলো শুনে আর কখনো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পালাই না, ক্লাসে মনোযোগ দিয়ে স্যারের কথা গুলো শুনি আস্তে আস্তে গনিতের মজা মাথা ঢুকতে শুরু করলো। একদিন স্যার আমাকে বললো তুমি গনিতের সূত্র গুলো বুঝতে হবে চিনতে হবে তাহলেই গনিত সোজা একদম পানির মতো তবে মুখস্ত করা যাবেনা বুঝতে হবে কারণ গনিত মুখস্ত করার বিষয় নয় বরং বুঝার বিষয় একবার ব্রেইনে ঢোকাতে পারলে তোমাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। স্যার আমাকে ফ্রী প্রাইভেট পড়ালেন দুই মাস তারপর আমি গনিত বুঝতে সক্ষম হয়েছি। একদিন আমি পরিক্ষা ভালো রেজাল্ট করে স্যার কে বললাম স্যার আপনার দিকনির্দেশনা পেয়ে আমি আজ সফল হয়েছি এবং লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ ও সাধ খুঁজে পেয়েছি আপনার অক্লান্ত পরিশ্রম আর প্রচেষ্টাই আমাকে বদলে দিয়েছে। স্যার হেসে বললেন দেখেছো চেষ্টা মানুষ কে সুন্দর সফলতা এনে দেয় আজ আমিও স্বার্থক হয়েছি তোমাকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করতে পেরে। সত্যি স্যার আপনার সুন্দর উপদেশ ও আদেশ বদলে দিয়েছে আমার জীবন আপনার মতো একজন আদর্শবান শিক্ষক এর জন্য শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রইল, ভালো থাকবেন প্রিয় হোসেন মুহাম্মদ বিএসসি স্যার।
আমার লেখা গল্প স্থান পাওয়া আমি আনন্দিত আপ্লূত ও অনুপ্রাণিত হলাম কৃতজ্ঞতা জানাই সম্পাদক মহোদয় কে।