ইন্টারভিউ বোর্ড বসেছে। একদিকে সংস্থার চিফ অ্যাকাউনটেন্ট বিশ্বপতি দাশগুপ্ত, রয়েছেন অজয় বিশ্বাস, গনপতি হাজারি, সুভাষ ভট্টাচার্য, আরেকদিকে তুলিকা সরকার। বেসরকারি সংস্থা শিবশঙ্কর এন্টারপ্রাইজের অস্থায়ী পদে একজন রিসেপশনিস্ট নিয়োগ হবে সেই জন্যেই এই ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা। তুলিকা বীরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হয়েছে। দেখতে বেশ সুন্দরী, গায়ের রঙ ফরসা বয়স সবে কুড়ি পার করেছে। তুলিকা বিবাহিতা। ওর প্রেমের সম্পর্ক ছিল আনন্দের সঙ্গে, আনন্দ সাধারণ একটা চাকরি করে বেসরকারি সংস্থায়, বেতন স্বল্প। এই কারণে তুলিকার বাড়ি থেকে ওর বাবা মা আনন্দের সঙ্গে সম্পর্ক কোনোভাবেই মেনে নেয়নি। বাবা একটা জিমের ট্রেনার, সেই আয় থেকেই ওদের সংসারটা চলে। তুলিকা নিজেও কিছু টিউশন করে নিজের খরচটুকু চালিয়ে নেয় এমনকি নিজের চেষ্টায় স্নাতকস্তরের পড়াশোনাটাও করেছে ওর টিউশনের টাকায়। বাবার পক্ষে ওর পড়াশোনা চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি, সুন্দরী হবার কারণে বহু ছেলে ওর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছিল কিন্তু ও কোনোরকম পাত্তা দেয়নি তাদের। এমনকি ওর বাবা মাও চেয়েছিল যে ওদের মেয়ে যেন কোনোরকম অনিশ্চিত জীবন বেছে না নেয়,কারণ যার সঙ্গে সম্পর্ক তার আয় একটা সংসার চালানোর পক্ষে যথেষ্ট নয় আর ওদের কাছেও মেয়ের জন্যে ভালো ভালো সম্বন্ধ এসেছিল, এর মধ্যে শহরের একজন বিশিষ্ট মানুষের ছেলেও ছিল যাকে বাবা মায়ের যথেষ্ট পছন্দ ছিল কিন্তু তুলিকার পছন্দ ছিল না কারণ ও কোনোভাবে জেনে গিয়েছিল যে ছেলেটির স্বভাব চরিত্র মোটেও ভালো ছিল না, নানারকম মহিলা ঘটিত অভিযোগ ছেলেটির বিরুদ্ধে ছিল সেটা জেনেও ওর বাবার কোনো আপত্তি ছিল না। ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা মা ওর বিয়ের জন্য সেই ছেলেকেই ঠিক করার কারণে বাড়িতে চরম অশান্তি হয়, আর সেইজন্যেই একদিন বাড়ি থেকে সোজা বেরিয়ে আনন্দর কাছে চলে যায় তুলিকা। আনন্দকে তখনই ওকে বিয়ে করার জন্য রাজি করিয়ে মন্দিরে গিয়ে বিয়েও করে ফেলে। কিন্তু হঠাৎ করে পরিকল্পনাহীন এই বিয়ে কেউ মেনে নেয়নি, ওর বাবা মা তো আছেই এমনকি তুলিকার শ্বশুরবাড়িতেও এজন্যে অনেক সমস্যা তৈরি হয় আর তাই নিয়ে অনেক ঘটনাও ঘটে যায় দুই পরিবারের মধ্যে। স্বামীর পরিবারে এসে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে তুলিকা, একে স্বামীর আয় কম তার উপরে তুলিকার বয়সটাও সবে মাত্র উনিশ পেরিয়েছে, ওর কয়েকটা টিউশন মাত্র সম্বল। এই দিয়ে কোনোরকমে সংসারটা সামাল দেবার চেষ্টা করে যায় তুলিকা। সেইসঙ্গে একটা চাকরির জন্যেও আপ্রান চেষ্টা করে। এইভাবে বছরখানেক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে চলার পর পরিচিত একজন শুভানুধ্যায়ীর মাধ্যমে খবর পেয়ে শিবশঙ্কর এন্টারপ্রাইজে চাকরির জন্যে আবেদন করে রিসেপশনিস্ট পদে। সেই অনুযায়ী ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে হাজির তুলিকা। বোর্ডের সদস্যদের নানা প্রশ্নের উত্তর যথারীতি নিজের মতো করে দেয় তুলিকা। ইন্টারভিউ বোর্ডের এক সদস্য অজয় বিশ্বাস আবার অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মচারী সেই সঙ্গে কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি।অফিসে রিসেপসনিস্টসহ বেশ কিছু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল অজয় বিশ্বাস। তিনি ওকে পছন্দ করায় শেষ হয় অবধি চাকরিটা পেয়ে যায় তুলিকা। চাকরিটা পাওয়ার পর ভীষণ নিশ্চিন্ত বোধ করে ও, তখন ওর চিন্তা চাকরিটা করে কিভাবে সংসারটাকে সচল রাখবে। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অফিস হবার কারণে তুলিকার পক্ষে চাকরি করাটা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল।হেঁটেই অফিসে যাতায়াত করার কারণে অনেকটা পয়সা আর সময়টাও বাচে ওর।যথারীতি অফিসে জয়েন করে ও খুব মন দিয়ে কাজ করতে থাকে, অফিসের কর্মীরাও ওর কাজে খুব খুশি। চল্লিশোর্ধ অজয় বিশ্বাস ওকে খুব স্নেহ করে ওর কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে। আস্তে আস্তে এভাবে অনেকেরই মন জয় করে নেয় তুলিকা ওর সুন্দর ব্যবহার দিয়ে, অফিসের কর্মচারীরা ওর কাছে কেউ কাকা বা কেউ দাদার মতো তাই ওনাদের সবাইকে এইভাবেই সম্বোধন করে ও। অফিসের পরিবেশে খুব সুন্দরভাবেই মানিয়ে নেয় তুলিকা। এইজন্যে সহজে কামাইও করতো না কখনো, এমনকি বাড়ির কারুর অনুষ্ঠান থাকলেও ওর কাছে অফিস সবার আগে ছিল, এইভাবেই চলছিল দিন। কিন্তু সবার অলক্ষ্যে বিধাতা বোধহয় হাঁসছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই অজয় বিশ্বাস যিনি কর্মচারী সংগঠনের নেতা তিনি একটু হঠাৎ করেই তুলিকার প্রতি বিশেষভাবে নজর দেওয়া এবং শাসন করা শুরু করে। এটা নয় ওটা করো ওটা নয় এটা করো এসব বলে অযাচিতভাবে তুলিকার কাজে নাক গলানো শুরু করেন। প্রথমে তুলিকার মনে হয়েছিল বড় দাদা হয়তো বোনের ভালোর জন্যে এভাবে শাসন করছেন কিন্তু ওর মনে কেমন যেন কু ডাকতে থাকে। ইদানিং অজয়কে একটু অন্যরকম মনে হয় তুলিকার। ও বসে ভাবতে থাকে অজয়ের আচার আচরণ নিয়ে, পরক্ষণেও ভাবে এটা হয়তো ওর মনের ভুল, অজয় বিশ্বাস ওর বড় দাদার মতো, হয়তো,,,,
কিন্তু নানা কাজের অছিলায় অজয় বিশ্বাস তুলিকার বসার চেয়ারের কাছে দিনের যে কোনো সময়ে খুশিমতো এসে বসে থাকে আর অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তুলিকার দিকে। তুলিকার অস্বস্তি লাগলেও ও ব্যপারটাকে সহজভাবে নেওয়ার চেষ্টা করে। মনে মনে ভাবে অফিসের উচ্চপদস্থ একজন কর্মচারী কিভাবে এসে বসে থাকতে পারে দিনের পর দিন আর কেনো? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেও খুঁজে পায়না তুলিকা। দিন এভাবেই কাটতে থাকে,তুলিকা নিজের মনকে বোঝায় হয়তো দাদার পারিবারিক কোনো সমস্যা আছে তাই হয়তো কিছুটা রিলিফের জন্য ওর কাছে এসে বসে থাকে। এভাবে একদিন এরকম ভাবেই হঠাৎ আসে অজয় বিশ্বাস, আর এসে যথারীতি বসে পড়ে তুলিকার পাশের চেয়ারে,
– কিছু বলবেন অজয়দা, আপনার শরীর ঠিক আছে তো?
– অ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে – উত্তর দেয় অজয়
– আচ্ছা দাদা আপনি তো খুব ব্যস্ত একজন মানুষ, তা এইভাবে বসে থাকেন কাজের অসুবিধা হয়না?
– অ্যাঁ হ্যাঁ না না আসলে এখানে এসে বসলে খুব ভালো লাগে তাই এসে বসি-কেমন অদ্ভুতভাবে তুলিকার দিকে তাকিয়ে বলে অজয়, কথাটা শুনে খুব বিরক্ত বোধ হয় তুলিকার, কিছু বলবে বলবে করেও বলতে পারে না তুলিকা।
এর মধ্যে একদিন তুলিকার জন্মদিন চলে আসে, কোনোভাবে জানতে পেরে অজয় তুলিকার কাছে এসে বলে – তোমার তো জন্মদিন তাই না, চলো তোমাকে কিছু উপহার কিনে দিই,
– না না দাদা আপনাকে কিছু দিতে হবে না, আপনি শুধু ছোট বোনকে আশীর্বাদ করবেন তাহলেই হবে,
– ঠিক, আমি আশীর্বাদ তো করবোই কিন্তু দাদা হিসেবে আমার তো একটা কর্তব্য আছে, তুমি বিকেলে রেডি থাকবে আমি তোমাকে নিয়ে যাবো অফিসের পাশেই একটা মার্কেট আছে সেখানেই।
অগত্যা কি আর করে তুলিকা, যেহেতু দাদার কর্তব্য করবে অজয় তাই আর তেমন কিছু না ভেবে অজয়ের সঙ্গে মার্কেটে যায়, প্রায় জোর করেই হালফ্যাশানের নানারকম জামাকাপড় কিনে দেয় অজয়। তুলিকা বা্রণ করলেও কোনো কথা শোনেনি।
যে শুভানুধ্যায়ী এই কাজের ব্যপারে তুলিকাকে পরামর্শ দিয়েছিল তাকে ফোন করে সবটাই জানায়, সেই শুভানুধ্যায়ী সব শুনে তুলিকাকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়।
এরপর থেকে অজয়ের ব্যপারটা একরকম বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে যেতে শুরু করে, যেসব কর্মচারীদেরকে সঙ্গে তুলিকার সম্পর্ক ছিল তাদের সঙ্গে বিনা কারণে চরম দুর্ব্যবহার করা শুরু করে দেয় অজয় এবং তাদের কে বলে কেউ যেন তুলিকার কাছে না আসে আর কথা না বলে, এসব কথা তুলিকার কানে এলে এই ব্যপারে অজয়কে বলে -কেনো এসব করছেন অজয়দা- অজয় সব শুনেও তুলিকার কথার কোনো গুরুত্ব দেয় না।
একদিন তুলিকা কাজে ব্যস্ত ছিল হঠাৎ করে অজয় এসে তুলিকাকে বলে দুপুরের দিকে কর্মচারী সংগঠনের অফিসে যেতে,অজয়কে কেমন উদভ্রান্ত লাগছিল কথাটা বলার সময়,তুলিকা জানে দুপুরের দিকে ওই সংগঠনের অফিসে কেউ থাকে না। ও প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করে অজয়ের কথা শুনে, সে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে অজয়ের কথা। অজয় কিছু না বলে চলে যায়, তুলিকা বুঝতে পারে ওর এভাবে প্রত্যাখ্যান করাটা ভালোভাবে নেয়নি অজয়।
একদিন দুপুরের দিকে হঠাৎ করে তুলিকার কাছে আসে অজয়,
– কিছু বলবেন অজয়দা?-তুলিকা বলে
– হ্যাঁ আমি তোমাকে আজ বলার জন্যেই এসেছি আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি তুলিকা, আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিতে পারবে না,
– কি বলছেন অজয়দা, আপনি আমার পিতৃতুল্য মানুষ আপনি কি বলছেন বুঝতে পারছেন তাছাড়া আমি বিবাহিতা আর আপনি একজন গনমান্য লোক আপনি নিজেকে সংযত করুন?
-খুব রেগে গিয়ে কথাটা বলে তুলিকা,
– দেখো আমার প্রস্তাবে তোমাকে রাজি হতেই হবে, তোমার যা যা প্রয়োজন সব তুমি পাবে,বেতন বেড়ে যাবে যখন খুশি তুমি অফিসে আসবে কেউ কিছু বলবে না কিন্তু আমার প্রস্তাবে রাজি না হলে এখানে কাজ করাই তোমার পক্ষে মুশকিল হয়ে যাবে, আমার কথা অমান্য করলে তার ফল ভালো হয়না, দেখলে তো কেউ তোমার কাছে আসেনা তোমার সাথে কথা বলেনা, আমাকে অমান্য করবে এমন কেউ জন্মায়নি।আজ না হোক কাল তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে – বলেই সেখান থেকে বেরিয়ে যায় অজয়, আর হতভম্ব হয়ে চুপচাপ নিজের চেয়ারে বসে থাকে তুলিকা। ওর কিছু ভালো লাগছে না, ইদানিং অফিসের কর্মচারীরা যারা তুলিকার সাথে কথা বলত তারাও ওকে এড়িয়ে চলতে থাকে, কেউ কথা বলতে চায়না, এরমধ্যে একজন বয়স্ক কর্মী অমলবাবু হঠাৎ তুলিকার কাছে আসে, সে আগে খুব কথা বলতো কিন্তু অজয় তাদেরকে কথা বলতে বারণ করার পর থেকেই তিনি আর আসেননা, চারদিক ভালো করে দেখে নিয়ে নীচু স্বরে বলেন – তুলিকা তুমি আমার মেয়ের বয়সী তুমি সাবধানে থেকো তোমার ওপর অজয়ের কুনজর পড়েছে যে কোনো মূল্যে ও তোমাকেই চায়, ও খুব ভয়ঙ্কর ও তোমাকে পাবার জন্যে যা করার সবটাই করবে আর আমি যে বললাম এটা তুমি কাউকেই বলোনা তাহলে আমার খুব অসুবিধা হয়ে যাবে,
– ঠিক আছে দাদা আপনার কথা আমি মনে রাখবো ,
অমলবাবু ঘর থেকে চুপচাপ বেরিয়ে চলে যান।
তুলিকা ওনার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়, ভাবে এভাবে চাকরি করবে কি করে, আতঙ্কের মধ্যে দিনের পর দিন কাটানো ওর পক্ষে খুব যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠেছে, আর চাকরিটা ছেড়ে দিলে ওর চলবে কি করে এসব নানা কথা ভেবে কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায়না তুলিকা। অফিস থেকে বেরিয়ে ফোনটা বের করে সেই শুভানুধ্যায়ী দাদাকে ফোন করে সবটাই জানায়, তিনি এ ব্যপারে অজয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। রাতেরবেলা ঘরে বসে নানান কথা ভাবছিল তুলিকা, হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে, স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই শুভানুধ্যায়ী দাদা, সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা ধরে-
– হ্যালো
– আমি অজয়ের সাথে কথা বলেছি কিন্তু ও বলেছে এরকম কোনো কথাই ও নাকি বলেনি,আর বলেছে তুমি যদি ওর কোনো কথায় ভুল বুঝে থাকো তবে ও ক্ষমা চেয়ে নেবে, দেখো অফিসে গিয়ে ও কি করে, উল্টোপাল্টা কোনো ব্যবহার করলে আমাকে ফোন করে জানাবে,
– ঠিক আছে দাদা– ফোনটা ছেড়েই তুলিকা ভাবতে থাকে এ আবার কি হলো, কোনো কিছুই বুঝে উঠতে পারে না তুলিকা,
পরের দিন যথারীতি অফিসে গিয়ে বসে নিবিষ্ট মনে কাজ করতে থাকে তুলিকা, হঠাৎ অজয় এসেই ওর হাতটা ধরে বলতে থাকে- যাকে দিয়েই ফোন করাও আর যাই করাও তোমাকে আমি ছাড়বো না, তুলিকা চমকে উঠে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে–অজয়দা আপনি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যান নয়তো আমি লোক ডাকবো,
– সে তুমি যাই করো আমার কথার কোনো নড়চড় হবে না,বলেই বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যায় অজয়,
হতভম্ব হয়ে আবার সেই শুভানুধ্যায়ীকে ফোন করে এই ব্যপারটা জানায় তুলিকা,
– ঠিক আছে তুমি এক কাজ করো বিকেলে অফিস ছুটির পরে এলাকার বিশিষ্ট সমাজকর্মী সনাতনবাবুর অফিসে গিয়ে ওনার দেখা করে অজয়ের ব্যপারটা সব জানাও,আর উনি ভালো লোক তাছাড়া ওদের কর্মী সংগঠনের মাথাও উনি, উনি এর একটা বিহিত করে দেবেন ঠিক।
অফিস ছুটির পরে সনাতনবাবুর অফিসে গিয়ে ওনার সাথে দেখা করে সবটাই জানায় তুলিকা, উনি সব শুনে পার্শ্ববর্তী থানায় অজয়ের নামে একটা ডায়রী করতে বলেন, তারপর যা দেখার উনি দেখবেন আর তুলিকাকে আস্বস্ত করে বলেন– তুমি তোমার মতো চাকরি করো, কেউ তোমাকে কিছু করতে পারবে না যতক্ষন আমি আছি, আর একটা ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন এটা তুমি রাখো আর থানায় কি হলো আমাকে ফোন করে জানিও, তুলিকা সনাতনবাবুর কথা শুনে নিশ্চিন্ত বোধ করে তারপর ওনাকে নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে এসে সোজা থানায় চলে যায় তুলিকা।
থানার কর্তব্যরত আধিকারিককে সব জানিয়ে জেনারেল ডায়রীতে অজয়ের বিরুদ্ধে সবটাই লিপিবদ্ধ করিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এসে সোজা ফোন করে সনাতনবাবুকে জানিয়ে দেয়, পরের দিন যথারীতি অফিসে যায় তুলিকা, গিয়ে শোনে সনাতনবাবু অজয়কে ডেকে ভীষণ বকাঝকা করেছেন আর ওই অফিস থেকে ওকে অন্য জায়গায় বদলী করিয়ে দিয়েছেন, শুনে ভীষন নিশ্চিন্ত হয় তুলিকা,ভাবে যে সনাতনবাবু সত্যিই মহান মানুষ, ওনাকে ফোন করে একটা ধন্যবাদ জানাতেই হবে।
সনাতনবাবুকে তুলিকা ফোন করে ধন্যবাদ জানায়, প্রত্যুত্তরে সনাতনবাবু রাত আটটার পরে ওকে দেখা করতে বলে ওনার বাড়িতে গিয়ে, শুনেই একটু চমকে যায় তুলিকা,রাতেরবেলা কেনো দেখা করতে বলেছেন উনি? কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে তুলিকা তারপর সেই শুভানুধ্যায়ীকে সনাতনবাবুর সাথে রাতেরবেলা দেখা করতে যাওয়ার কথাটাও জানায়, সেই শুভানুধ্যায়ী শুনে তুলিকাকে বলেন কোথাও যাবার দরকার নেই তুমি তোমার মতো অফিস করবে।নিশ্চিন্ত হয়ে তুলিকা বলে ঠিক আছে।
এরপর কয়েকটা দিন ভালোভাবেই কেটে যায় অফিসে, তুলিকার মনের মধ্যে থেকে অজয়ের আতঙ্কটাও আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে, রোজ এসে অজয়ের অসভ্যতা করা থেকে বোধহয় মুক্তি পেয়েছে, ভাবে তুলিকা,
বিকেলবেলায় কাজ শেষে ব্যাগ গুছিয়ে যখন বাড়ি যাবে তুলিকা তখন হঠাৎ একজন এসে ওকে একটা খাম দিয়ে চলে যায়, খামটা খুলে দেখে একটা চিঠি, সঙ্গে একটা চেক, সঙ্গে সঙ্গে চিঠিটা খুলে পড়ে দেখে চিঠিতে লেখা আছে “কাজে গাফিলতির কারণে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো, যেহেতু অফিস ওকে অব্যাহতি দিয়েছে তাই নিয়মানুযায়ী আগাম তিনমাসের বেতনের চেক দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলে তুলিকা, সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানায় সেই শুভানুধ্যায়ীকে, তিনি সব শুনে অবাক হয়ে বলেন দেখছি কি হয়েছে এরকম তো হবার কথা না, তাছাড়া সনাতনবাবুর কথা অগ্ৰাহ্য করে মিথ্যা কারণ দেখিয়ে অফিস ওকে বিতাড়িত করবে এরকম ঘটনা হওয়াই অসম্ভব, তিনি ওকে সনাতনবাবুকে ফোন করে এটা জানাতে বলেন, কাঁদতে কাঁদতে অফিস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় অনেকেই ওকে সান্ত্বনা দেয় কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনা এক অজানা ভয়ে। শুভানুধ্যায়ীর কথা অনুযায়ী সনাতন বাবুকে ফোন করে জানালে তিনি -দেখছি পরে করো- বলে ফোনটা কেটে দেন, পরের দিকে ফোন করলে কেউ একজন ধরে বলে -দাদা ব্যস্ত আছে পরে করুন – পরে আরো কয়েকবার ফোন করলেও সনাতন বাবুকে আর পায়নি তুলিকা, প্রায় তিন বছর ভালোভাবে কাজ করার পর মিথ্যা অভিযোগে কাজটা চলে যায় তুলিকার। সেই শুভানুধ্যায়ী তুলিকাকে কাজের খবর দেওয়া থেকে আরম্ভ করে তুলিকার যে কোনো সমস্যায় এগিয়ে এসে সমাধান করার চেষ্টা করে গেছে তার এই ব্যপারটায় খটকা লাগে, তিনি তখন খোঁজখবর করে জানতে পারেন যে যেদিন তুলিকার চাকরিটা চলে যায় তার আগেরদিন অফিসের কয়েকজন কর্মচারীকে ডেকে সনাতনবাবু পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এই মেয়েটিকে চাকরিতে রাখা যাবেনা, তখন একজন কর্মী বলে- স্যার মেয়েটি খুব ভালোভাবে কাজ করে, ওর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই কোনো কামাই করেনা তাকে চাকরির নিয়মানুযায়ী এইভাবে বরখাস্ত করা যায়না। সেটা শুনে সনাতনবাবু প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে বলেন -বেশি কথা বললে আপনার বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেবো, আমি যা বললাম সেটাই করবেন, আমি একটি মেয়েকে পাঠাবো তাকে ওই মেয়েটির জায়গায় চাকরিতে রাখবেন এর কোনো অন্যথা হলে খুব একটা ভালো হবে না কারুর পক্ষে, সততার সঙ্গে কাজ করা সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগে কাজটা কেনো চলে গেলো সেটা নিয়ে আজও ভাবতে থাকে তুলিকা।