সকালে সোনালী সূর্য যখন মিষ্টি করে হেসে উঠে, শীতল সমীরণে পরাণে প্রশান্তি নামে পাখির কূজনে চারিদিক মুখরিত এমন সময় মিতু আনমনে গেয়ে উঠে। “সবাই তো সুখী হতে চায়……তবু কেউ সুখী হয় কেউ হয় না….জানিনা বলে যা লোকে সত্যিই কি না কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।
গান শেষ না হতেই চোখের কোনায় জল গড়িয়ে পরলো, এভাবে আর কতদিন চার দেওয়ালের মাঝে নিজেকে বন্দী রাখবে এক্সিডেনের পর থেকে চোখের আলো হারিয়ে বুঝি জীবনের প্রদীপটা নিভে গেল।জ্বলে উঠেছে ব্যথার প্রদীপ তিলে তিলে মিতুকে পুড়িয়ে দগ্ধ করে দিচ্ছে।
মাষ্টার্স কমপ্লিট করতে পারেনি তার আগেই এই দূর্ঘনা।অনেক স্বপ্ন ছিল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে মুক্ত আকাশে যেমন পাখি ডানা মেলে সুখে সাগরে ভাসে তেমন সুখের সাগরের নিজেকে ভাসাতে চেয়েছিল।
বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে মিতু অনেক স্নেহ আদরে বড় হয়েছে,এখন বিবাহের প্রাপ্ত বয়স এ অবস্থায় কে বিয়ে করবে মিতুকে। বাবা মায়ের মনে হতাশা।বিয়ের প্রস্তাব আসে অনেক কিন্তু সবাই ফিরে যায় দৃষ্টিহীনতার জন্য। চেহারা অনেক সুন্দর চুল গুলো যেন কালো মেঘ।
কেঁদে কেঁদে মিতুর চোখে নিচে কালো দাগ পরে গেছে,তবু নিজেকে সামলে রেখে হাসি খুশি থাকে বাবা মায়ের সামনে।
মিতুর বুকে চাপা কষ্ট বাবা মায়ের জন্য কিছু করতে পারল না এখন বাবা মায়ের বোঝা হয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে।
একদিন মিতুর বাবার অফিস থেকে কিছু লোক আসলো মিতুর অসুস্থ্যতার কথা শুনে,মিতুকে দেখে সবাই আফসোস করল এমন সুন্দর রূপবতী গুণবতী মেয়ের ভাগ্যে এমন পরিনতি।
তাদের মধ্যে একজন নতুন জয়েন্ট করেছেন তিনি হলেন অফিসের প্রধান। দেখতে সুদর্শন যুবক খুব সরল মনের মানুষ।তিনি এক পলক মিতুকে দেখেই মুগ্ধ হয়েছেন।মিতুর মায়াভরা চাঁদের মত মুখে বিষন্নতার ছাপ,ঘন কালো মেঘ ছেয়ে আছে মিতুর হৃদয় অম্বরে।
রিসান মনে মনে ভাবে মিতুর হৃদয় অম্বরের সূর্য হবো আমি সমস্ত মেঘ কাটিয়ে ওর আঁধারে আলোর সাথী হবো আমি।
মিতুর বিষয়ে সমস্ত কিছু বুঝে শুনে তিনি মিতুর বাবাকে বললেন আপনাদের আপত্তি না থাকলে মিতুকে আমার জীবনসঙ্গিনী করতে চাই।
মিতুর বাবার যেন বুকের পাথরটা সরে গেল,চোখে জল টলমল করছে স্যার আপনি,,,, মিতুকে জীবনসঙ্গিনী করবেন এ তো আমাদের পরম সৌভাগ্য।
স্যার বলবেন না আমায় আমি আপনার পুত্রের মত আমাকে রিসান বললেই খুশি হবো।
মিতু তো কিছু দেখতে পায় না,আপনার পরিবার কি ওকে মেনে নিবে?
ও দেখতে না পেলে ক্ষতি নেই আমি তো দেখতে পাই। আমি যেটা করব পরিবারের তাতে কোন আপত্তি নেই।
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল মিতুর প্রতিবেশিরা বলাবলি করছে কি সুন্দর বৌ এনেছে রিসান মুখখানা চাঁদের মতন।
মাথা ভরা কেশ দেখতে মিষ্টি বেশ।
অন্যজন বলল মিষ্টি না ছাঁই, বেচারির চোখে দৃষ্টি নেই কিচ্ছু দেখতে পায় না। মেয়ের পরিবারের লোক গুলোও চালাক এমন অন্ধ মেয়েকে কেউ বিয়ে দেয় নাকি?
রিসান সরল বলে ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে মেয়েকে তুলে দিয়েছে,ছেলেটার জীবনটাই নষ্ট করে দিল।
রিসানের আম্মু প্রতিবেশীদের বলল তোমাদের এত কথা কেন বাপু,আমার রিসান বেশ করেছে এবং ঠিক করেছে। আজ যদি তোমাদের কিংবা আমার মেয়ের এমনটা হত তবে আমরা কি চাইতাম না মেয়েটা সুখে থাক ভাল থাক। উদারতা মানুষকে মহান করে তোলে, একটা নিভে যাওয়া জীবনে আলো জ্বালিয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর মাঝে হয়েছে প্রকৃত সুখ,আর সেই সুখের সন্ধান আমার ছেলে পেয়েছে।
সমস্ত কথা শুনে মিতুর বুকের ভেতরের জমে থাকা তুষের অনলটা যেন আস্তে আস্তে শীতল হয়ে যায়।রিসান মিতুর হাতটা চেপে ধরে আমি তো আছি তোমার আঁধারের বাতী,চির জনমের সাথী।মিতুর চোখে সুখের বন্যা বয়ে গেল,,,,,,,,,,,মিতু আনন্দে গেয়ে উঠল
“এ জীবনে যারে চেয়েছি আজ আমি তারে পেয়েছি তুমি আমার সেই তুমি আমার তোমারে খুঁজে পেয়েছি।