গভীর রাত। একরকম নষ্ট সিলিং ফ্যানের ঘট-ঘট শব্দ শুনা যাচ্ছে শুধু। বাহিরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো-সখনো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মাহিন কাঁথা মুড়ি দিয়ে স্মার্টফোনে বই পড়ছে । হঠাৎ একটা মেয়ের ছোট্র বাক্যের ম্যাসেজ আসলো— ‘আই লাভ ইউ মাহিন।’ মাহিন তখন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো। কী করবে - না করবে ভেবে পেলো না। এমন পরিস্থিতিরর কবলে পড়ে এভাবে মাহিনকে কখনো হতভম্ব হতে হয় নি; তাই তার ভ্যাবাচেকা খাওয়াটা স্বাভাবিক।
শয়তানের মায়া জালে আটক হয়ে সভ্য-ভদ্র আদর্শ ছেলে মাহিন খানিক পর মেয়েটির কথার শুদ্ধ মন্তব্য না করে, অসভ্য ছেলের মতো সেও ম্যাসেজ রিপ্লাই করলো —‘আই লাভ ইউ টু।’
যে মাহিনকে নিয়ে তার মা-বাবার স্বপ্ন আকাশচুম্বী।
মাহিন একদিন বড় হবে, পড়াশোনা শেষে সমাজের কর্ণধার হবে, ভুল রাহের রাহীদের শুদ্ধ-সত্য পথ পানে ডাকবে , সে মাহিনই আজ ভুল পথের পথিক হতে যাচ্ছে।ছোট-খাটো একটি ভুলই যে ডাল-পালা গজাতে-গজাতে এক সময় তার জীবনের মসৃণ পথ যাপনের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে, সেটা তার ভাবনায় এখন একদমই আসছে না।
প্রভাত এখন। ঘরির কাঁটা ৬ টার ঘরে। মাহিন ভাবতেই পারেনি রাত থেকে নিয়ে সকাল পর্যন্ত একটি অচেনা মেয়ের সাথে, কোন রকম অস্বস্থি বোধ ছাড়াই কথা বলতে পারবে। তবে সে আনন্দ অনুভব করছে। সাময়িক আনন্দ। যে আনন্দ একদিন তার জীবনে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আসবে।
এখন ঐ মেয়েটার সাথে মাহিনের নিত্য কথা হয়। কখনো ম্যাসেঞ্জারে, কখনো ভয়েস কলে। আবার কখনো ভিডিও কলেও। মাহিনের ভাবনাজুড়ে এখন শুধু ঐ মেয়েটিই। ঐ মেয়েটির নাম ফাহিমা। ফাহিমাদের ফ্যামিলির প্রতিটা সদস্য আধুনিক মাইন্ডের। কোন একবার মাহিনের সাথে কথার ফাঁকে ফাহিমা বললো, ‘আচ্ছা, তুমি তো জানো আমার পরিবারের সবাই একটু আধুনিকতার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে চায়; তারা যদি সময়মতো আমাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তখন?’
মাহিন দ্বিধাহীন ফাহিমার কথার উত্তর দিলো— ‘তখন আমরা কোথাও পালিয়ে যাবো।’ এ-কথার বলার আগে একবারও মাহিন ভাবলো না মায়ের কথা, বাবার কথা, ছোট ভাই-বোনদের কথা। অথচ সেই তার মা-বাবার প্রথম সন্তান এবং আদরের সন্তান। অবৈধ প্রেম নামক জীবন ধ্বংসাত্মক ব্যধি তখন তার ভাবনার আড়াল হয়ে দাঁড়ালো।
কিছুদিন পর তাদের উভয়ের পরিবারে সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে, উভয় ফ্যামিলির সবাই তাদেরকে খুব কঠিন ভাষায় সতর্ক করে দিলো, যেনো একজন অপরজনের সাথে চুল পরিমাণ সম্পর্ক না রাখে।
এমন মূহুর্তে তারা এক জায়াগায় পালিয়ে গেলো। পালিয়ে বিয়ের কাজ সারলো। দাম্পত্য অধ্যায় শুরু হলো তাদের। খুব আনন্দ-পুলকের মধ্য দিয়ে তাদের দাম্পত্য অধ্যায়ের এক মাস যাপন হলো।
মাস যাপনের পরেই শুরু হলো মনোমালিন্য। তাদের সব প্রেম-ভালোবাসা যেনো উড়ন্ত পাখির মতো আস্তে-ধীরে কোথাও উড়ে যেতে লাগলো। একদিন নেমে আসলো উভয়ের জীবনে দুর্বিষহ এক ঝড়। রিতিমতো কোন এক ঝগড়ার ফাঁকে মাহিনের মুখ থেকে তিন –তিনটি বার ‘তালাক’ শব্দটি নির্গত হলো উভয়ের জীবনের জন্য এক পাহাড় দুঃখ নিয়ে। ভেঙে চুরমার হলো তাদের আবেগের উপড় ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রেম। ডানা ভাঙা ডাহুকের মতো উড়ে যেতে লাগলো তাদের সব সুন্দর স্বপ্ন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com