আমি অবনী নই তবুও অপু আমাকে অবনী ভাবতে শুরু করেছে। আচ্ছা কোনও অসম বয়সের অবনী কী পারবে অপুর একটি সকাল বা বিকেল রাঙিয়ে দিতে। আমি সাধারণ কোথাকার কোনও এক লেখিকা অপুর বয়সের দ্বিগুন। একটা সময় অপুকে দেখতাম অবনীকে নিয়ে পোস্ট দিতে বা দুটো কবিতার লাইন কী অসাধারণ চমৎকার ভাবে আবৃত্তি করতে। তখন অবনীকে ভারি হিংসে হতো আমার। কিন্তু যখনই আমি অপুকে নিয়ে লিখতে শুরু করেছি অপু মুগ্ধ হয়ে আমাকেই অবনী ভেবে বসে আছে। তাহলে কী অবনী বলে ওর জীবনে কেউ নেই ওটা ওর কাল্পনিক অবনী ছিলো, আর এই যে আমি অসম বয়সের একজন লেখিকা অবনীকে হিংসে করে বসে আছি এটাই কী অপুর প্রতি আমার ভালোবাসা নাকি মোহ। কিছু ভালোবাসা দূর থেকেই ভালো, হোক স্পর্শহীন, তবুও তাতে অনুভূতি থাকে।কাছে আসলেই কেবল মিলিয়ে যায় দমকা ঝোড়ো হাওয়ায়। এই বয়সে এসেও নিজেকে কেমন প্রজাপতি ভাবি, উড়তে চায় ঘুরতে চায় অপুর মনোজগতের চারপাশ।আবার নিজেকে খুব অসহায় আর অসম ভেবে পালিয়ে আসি। তবুও চাই অপুকে প্রতিদিন আবিস্কার করতে, ওর ভেতরের দু:খ, কষ্টকে আমার কলমের আঁচড়ে বের করে আনতে। ওকে আমি ঠিক ঢেলে সাজাতে চাই। কখনো দূরের সবুজ পাহাড়টার মতো, কখনো সমুদ্রের মতো, কখনো অপু হবে হিমু অথবা মিসির আলীর মতো কেউ। সবাই জানুক সবাই দেখুক একজন অসম বয়সের লেখিকা তার মনের মাধুরি মিশিয়ে একটু একটু করে অপুর মূর্তি গড়ছে। কখনো বাস, ট্রেন অথবা রিকশায় উঠে বসলেও একজন অদৃশ্য অপু ঠিক আমার পাশে বসে থাকে। আমি রবীন্দ্রনাথকে, জীবনানন্দকে ভালোবাসি অপুও তাই। আমি যে গান শুনতে পছন্দ করি অপুও তাই। আমি ঝুম বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে পছন্দ করি, অপুও তাই। আমি শাড়ি পরতে পছন্দ করি অপুও চায় আমাকে ওভাবেই সাজাতে। এই যে এতো, এতো মিল তার মাঝেও মিল নেই আমাদের অসম বয়স, তাই নিজেকে গুটিয়ে নেই হারানোর আগাম ভয়ে। পেয়ে হারানোর কষ্টের চাইতেও কাউকে না পাওয়ার কষ্ট অনেক ভালো। আমি যদি হ্যারি হতাম হয়তো যাদুর ছোঁয়ায় ওর জীবনটাই বদলে দিতাম। ওর জীবনে চমৎকার কিছু সুখ এনে দিতাম। ওর খুব কাছে না গিয়েও আমি অপুর গায়ে মাটির সোঁদা ঘ্রান পাই, ওর খুব কাছে না গিয়েও আমি ওর কাছেই আছি। এই যে অপুকে নিয়ে এতো, এতো লেখা তারই প্রমাণ। জানি না এটা আমার ভালোবাসা নাকি পাগলামি। তবে আমাকে অবনী ভাবা অপুও যে খানিকটা পাগল তা ঠিক বোঝা যায়। তবুও ভালোবাসি বলেই ওর পাগলামি ভালো লাগে, ভালোলাগে গল্পে, কবিতায় অপুকে সাজাতে। নিজেকেও মনে মনে সাজাই সেই ষোড়শী বয়সের আমিটির মতো। যেনো সর্ষে ক্ষেতের আল দিয়ে আমি আর অপু ছুটে চলেছি। পৃথিবীর সব সুখ আমাদের হাতের মুঠোয়। অপুকে ভালোবাসি বলেই হয়তো কখনো অবনী হতে পারবোনা আমি অসম বয়সের লেখিকা। অপুকে ভালোবাসি বলেই হয়তো আর কখনো প্রজাপতি হতে পারবোনা। অপুকে ভালোবাসি বলেই হয়তো কখনো একসাথে ভোর দেখা হবেনা। অপুকে ভালোবাসি বলেই কখনো আমার হাতের রান্না করা খিচুড়ির স্বাদ ও কখনোই নিতে পারবেনা, পাঠক কিছুতেই মেনে নেবেনা দুজনার অসম সম্পর্ক। তবুও বলতে চাই অপু আমার না হোক, অপু অন্য কোনও অবনীর তো হবে, অপু আমার ঘাসফুল না হোক অবনীর ঘাসফুল তো হবে। আর আমি দূর থেকেই অপু আর অবনীর মাঝেই ঠিক নিজেকে খুঁজে নেবো বেঁচে থাকবো ওদের মাঝেই।