মা অদ্ভুত এক অকৃত্রিম ভালোবাসার নাম, গতকাল আমার স্ত্রী পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে আমি ভিডিও কল করি ফোন রিসিভ করতেই তার চোখ ছলছল করে পরক্ষণে কান্না ই করে দিল, বারবার জিজ্ঞেস করছি কি হয়েছে তার স্বভাবজাত কারনে বলবে না মুখ বন্ধ চোখে অশ্রু, কান্নার কারন নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি জিজ্ঞেস করি আমাদের কলিজার ধন কই কেমন আছে..? তখন কান্নার বেগ হঠাৎ বেড়ে গেল আমি তখন কিছুটা ভয় শঙ্কায় উৎকন্ঠায় জিজ্ঞেস করি কান্না কি জন্য তখন সে বলল ছেলেকে বাসায় রেখে পরীক্ষা দিতে যেতে হচ্ছে তাই কষ্ট হচ্ছে,তা-ও দু-তিন ঘণ্টার জন্য, তখন আমার নিজের মায়ের কথা মাথায় চলে আসে, আমার মা আমাদের ছেড়ে দেশে আছেন আমরা জীবিকার তাগিদে যখন বছরের পর বছরের জন্য প্রবাসে আসি তখন আমার মায়ের কেমন লাগে..?
কতোটা কষ্ট নিয়ে বুকে ঝাপটে ধরে শুধু জানেন আমার মা।আমি যখন মায়ের পেটে আসি তখন আমার মায়ের হঠাৎ করে যক্ষা ধরা পড়ে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন বাচ্চা অর্থাৎ আমাকে নষ্ট করে ফেলতে কারন দুজনের একজন বাঁচবে কিন্তু মা কিছুতেই রাজি হলেন না, যদিও আমার বড় দুই ভাই এক বোন রয়েছে মা বললেন মরলে দুজন একসাথেই মরবো বাঁচলেও, আজকের করোনার মতো তখনকার অশিক্ষিত মূর্খ সমাজ যক্ষাকে ছোঁয়াচে রোগ মনে করতো যক্ষার প্রতি ছিল ভিষণ ভয়, আমার জন্ম হলো তথাকথিত আপন মানুষগুলো নিজস্ব রূপ দেখানো শুরু করলো, ঘরের কাজের জন্য মোটা বেতন দিয়ে মানুষ পাওয়া গেলেও আমার মাকে আমাকে দেখাশোনা করার মতো মানুষ পাওয়া যায়নি, আমার এক মামাতো বোনকে আনা হয় আমার মাকে দেখাশোনার জন্য তাকেও আপন মানুষগুলো কুমন্ত্রণা দিয়ে চলে যেতে একপ্রকার বাধ্য করে, তখন আমার আব্বা নিজেই আমাদের দেখাশোনা শুরু করেন, আমি আমার মায়ের দুধ পান করতে পারিনি ডাক্তারদের নিষেধের কারনে, আব্বার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো থাকার কারনে তখন পান করি বিদেশি বিভিন্ন ব্যান্ডের দুধ.. যা পরবর্তীকালে আমাদের ঘরের সান সাইডে সাজানো দেখেছি,আব্বা নিজেই দুধ বানিয়ে আমাকে খাওয়াতেন আমার মাকে দেখাশোনা করতেন, আমার জন্মের আগে আব্বা বাড়িতে তেমন থাকতেন না ব্যবসার কাজে সারাদিন বাইরে থাকতেন, আমি প্রায় ই অসুস্থ থাকতাম এলার্জি জনিত সমস্যা, এখনো স্পষ্ট মনে আছে তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি খুব জ্বর কাশি হয়েছিল কিন্তু অষুধ খাবো না, মা কোলে না নিলে তখন মা কোলে নিতে হয়েছে অষুধ খাওয়ানোর জন্য, বেশ দুষ্টামির পাশাপাশি আহ্লাদী ছিলাম.. আমাকে আব্বা আম্মা অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার কারন হচ্ছে আমি মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারিনি। আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখনো মা হাত পায়ের নখ কেটে দিতেন তাই এখনো হাত পায়ের নখ ভালো করে কাটতে পারিনা, মাথায় তেল দিয়ে চুল লেপ্টে আছড়ে দিতেন, এখনো সেভাবেই আছড়ায়, কাপড় ধোয়া রান্না শিখেছি বিদেশ আসার পর, বাসায় কাজের মানুষ থাকলেও আব্বা আর আমার কাপড় মা নিজেই ধুতেন, খাবার খেতাম আব্বার সাথে দস্তরখান বিছিয়ে, আব্বাকে নিয়ে লিখবো আরেকদিন, আজকে মায়ের কথা ই বলি, শীতকালে মায়ের গরম করা তোষক এখনো অনেক মিস করি, এতো ভারী তোষক মা ছাদে নিয়ে যেতেন শুধুমাত্র গায়ে দিতেই যেন একটু আরাম পাই আমরা, আরো কতো যে যত্ন লিখে শেষ করা যাবেনা, প্রথম থেকে এই পর্যন্ত যতোবারই বিদেশ এসেছি ততোবারই মা একেকটা রুমাল দিয়ে আমার অশ্রু মুছে দেন সেই রুমাল গুলো স্বযত্নে রেখেছি, আমার মায়ের কালো শাড়ি পছন্দ, সারাজীবন মাকে শাড়িতে দেখেছি, ২০১৬ সালে মায়ের অপারেশন হবে তাই আমার স্ত্রী কয়েকটি আলখাল্লা ধরনের পোশাক ম্যস্কি নিয়ে দিয়েছিল সেগুলো পরে মা আমাকে ভিডিও কলে দেখাচ্ছেন আর বলছেন তোর মেয়ের মতো লাগতেছে নাকি দেখ.. আমি বলছি জ্বি আপনি তো আমার মেয়ে ই.. আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমায় মাকে মেয়ের মতোই যত্ন নেওয়ার তৌফিক দিয়েছেন, সম্প্রতি আমার সন্তান সাফওয়ান আলিফের জন্মের পর মা আমাকে বললেন তুই এখন দুই সন্তানের পিতা তোর বড় মেয়ে আমি।
নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মায়ের চেহারার দিকে মায়ার নজরে থাকলে কবুল হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে সেই প্রতিদিন ও নেক আমল করার তৌফিক দিন। আমার জীবনে যতো রাগ অভিমান কষ্ট সব আমার মায়ের সাথে ভাগ করি, আমার মায়ের অপ্লুত ডাকটা এতো যে মধুর বলে বুঝানো অসম্ভব শুধুই অনুভব করা যায়, মা এখনো কথায় কথায় ব্যবহার শেখান কার সাথে কেমন চলতে বলতে হবে, কিন্তু পরিপার্শ্বিক কারনে অনুসরণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে কারণ মা আমার সহজ সরল দুনিয়াটা বেশ গরল, অশান্ত মন শান্ত করতে মায়ের সাথে কথা বলার কোন বিকল্প নেই আমার, আমার মা চালাক নন তবে বেশ বুদ্ধিমতী স্বশিক্ষিত, ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন উনার জীবনের কঠিন সময়গুলোতে, জীবনের ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে সাজিয়েছেন নিজের জীবন গুছিয়ে দিয়েছেন আমাদের জীবন, রোগ শোক কষ্টে মায়ের মুখের মৃদু হাসি কেড়ে নিতে পারেনি যেমনটা দেখতাম ছোটবেলায় এখনও ঠিক তেমনই, মা উজ্জ্বল ধ্যোর্তিময় ফর্সা বর্নের হওয়া স্বত্তেও শ্যামলা কালোকে অসম্মান করতে দেখিনি, দেখিনি কাউকে হিংসা করতে, নামাজ কোরআনে অভ্যস্থ আমার মা আমাদের পরিবারের সবার আদর্শ। আল্লাহ আমার মা বাবাসহ পৃথিবীর সকল বাবা মাকে ভালো ও শান্তি রাখুক, আল্লাহ সকল সন্তানদের বাবা মায়ের সেবা যত্ন করে দুনিয়া আখিরাত দুটোতেই সাফল্য অর্জন করার তৌফিক দান করুক আমিন।