• আজ- বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

হেমন্ত হাসে ভোরের ঘাসে

ফারুক আহম্মেদ জীবন / ২৪০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

add 1
  • ফারুক আহম্মেদ জীবন

শুভ্রদের প্রাইমারি স্কুলের ছুটির ঘন্টা বাজতেই শুভ্রসহ তার সহপাঠীরা আনন্দ উল্লাস হৈ-হুল্লোড় করতে করতে ক্লাস রুম থেকে সব স্কুলের বাইরে বেরিয়ে এলো। তারপর যে যার গন্তব্য মত বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
ছেলেমেয়েদের এতটা খুশির কারণ শুধু একটাই।
কালীপূজা উপলক্ষে পাঁচদিন বন্ধ দিয়েছে তাদের স্কুল। এইকয়দিন অন্তত পড়াশোনার কোন চাপ নেই। রঙিন প্রজাপতির মত সব মুক্ত মনে একটু এদিক-সেদিক যে-যার-খুশি মত তাদের নিজেদের কুটুমবাড়ি ঘুরতে পারবে।
স্কুল থেকে ফিরেই শুভ্র তার মা-মায়া রাণীর কাছে বায়না ধরেছে সে তার দাদুর বাড়ি বেড়াতে যাবে। এবছর কালীপূজা সে তার দাদু দিদার সাথে যশোরে গিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে করবে।তাদের গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা থানার দক্ষিণে বেজিয়াতলা গ্রামের হিন্দু পাড়ায়। মাত্র এক দেড়শো হিন্দু পরিবারের বসতি তাদের সেই ছোট্ট হিন্দু পাড়াটিতে। হিন্দু পাড়াটি গড়ে উঠেছে কপোতক্ষ নদের দক্ষিণ উপকূলের একেবারে তীর ঘেঁষে। তাদের কর্ম, জীবন-জীবিকা বলতে নদের মাছ ধরা গাঁয়ের হাটে বিক্রি করা। মাছ বিক্রির টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলে। তবে আজকাল কৃষি কাজের উপর অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে। আবার কেউ কেউ শিক্ষিত হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকুরি করছে। শুভ্রর বাবা নিলয় তেমন
শিক্ষকতার চাকুরির সুবাদে পরিবারসহ ঢাকার
উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। নিলয়ের বাবা- দাদারা যদিও একসময় সব বেশীরভাগ অক্ষরহীন অশিক্ষিত গণ্ডমূর্খ ছিল। তবে এখন নিলয়ের মত
তাদের হিন্দু পাড়াটিতে অনেকেই বেশ শিক্ষিত।
শুভ্ররা দুই ভাই এক বোন। অভ্র বড় ক্লাস এইটে পড়ে। বোন ঊর্মি ক্লাস সিক্স এ পড়ে। আর শুভ্র এ বছর প্রাইমারিই ক্লাস থ্রিতে পড়ছে। অভ্র ঊর্মিদের স্কুলও পূজার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে।
যাহোক শুভ্রর যেকথা সেই কাজ শুভ্রর বাবা নিলয় স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আসতেই শুভ্র দৌড়ে এসে বললো বাবা- বাবা- আমাদের না স্কুল বন্ধ দিয়েছে। চলো না সবাই কালীপূজা উপলক্ষে এই হেমন্ত ঋতুতে গ্রামের বাড়িতে বেড়িয়ে আসি।
আমাদের যখন স্কুল বন্ধ তোমাদের তো বন্ধ তাইনা বাবা? নিলয় হেসে উঠে বললো হুম বাবা ঠিক বলেছ আমারও বন্ধ। তখন মায়া রাণী রান্না করছিল কুকিং রুমে। সে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে স্বামী নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বললো এসেছ? তারপর বললো দেখো তোমার ছেলে কি
বলছে। সেই স্কুল থেকে এসে আমায় পাগল করে
দিচ্ছে দাদু-দিদার সাথে পূজা করবে তাই। নিলয়
বললো, শুভ্র ঠিকই বলেছে মায়া চলো সকলেই
ঘুরে আসি। মায়া রাণী কথাটা শুনে যেনো মনেমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আসলে সেও
ইট পাথরের শহুরের পরিবেশে একঘেয়েমি ভাবে সংসারের ঘানি টানতে টানতে যেনো হাঁপিয়ে গেছে। স্বামী নিলয়ের যাওয়ার সম্মতি শুনে মনেমনে সে খুশি হলো। বললো হুম চলো ছেলেটা
যখন এতো করে বলছে। অভ্র ঊর্মিও যে-যার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বললো সত্যি তাহলে আমরা যাচ্ছি বাবা? নিলয় হেসে বললো হুম, আর কাল সকালেই যাচ্ছি। তারপরের দিন সকালে যশোরের বাস ধরে সকলেই গ্রামের বাড়িতে আসে। শুভ্রর দাদু-দিদা একসাথে সবাইকে পেয়ে মহা খুশি। পূজার আনন্দে বেশ কাটতে লাগলো তাদের প্রতিটা দিন। শুভ্র, অভ্র, ঊর্মি বৈকালে কাকার সাথে গাঁয়ের কাকাতো ভাইবোনদের সাথে নৌকায় চড়ে ঘুরেঘুরে কপোতাক্ষ নদী দেখলো। কি সুন্দর কপোতাক্ষ নদীর রূপ। নদীর দুই তীরে মানুষের বসবাস। নদীর জলের উপর কলমিলতা শাক, কলমি ফুল। আর শ্যাওলা ফুলে ফুলে যেনো এক অন্য রকম শোভা বাড়িয়ে তুলেছে নদীটিকে। পাতিহাঁস, আর রাজহাঁস মনের আনন্দে সাঁতার কাটছে নদীর জলে। আর মাঝেমধ্যে কিছু অতিথি পাখি বালিহাঁস, পানকৌড়ি উড়ে এদিকওদিক উড়ে যাচ্ছে। এককথায় গোধুলির পড়ন্ত বেলায়
কি-যে মনোমুগ্ধকর লাগছে সবমিলিয়ে নদীটির
রূপ। খুব আনন্দ পেলো তারা এসব দৃশ্য দেখে। পরেরদিন সকালে শুভ্র তার দাদু বলয়কে বললো আমিও তোমার সাথে মাঠে যাবো ফসল দেখতে। বলয় বললো ঠিক আছে চলো দাদু দুই দাদু ভাই মাঠ দেখে আসে। মাঠে চারদিকে কেউ ধান কাটছে। কেউ ধান বাঁধছে। আবার কেউ কেউ গাড়িতে ধান সাজায় বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র বললো দাদু এটা কি ধান? দাদু বললো এটা আমনধান। এখন আউশধানও মাঠে আছে দাদু। এখন তো হেমন্ত ঋতু।এসময় এই কার্তিক অগ্রাহায়ন মাসে এসব ধান পাকে। এই ধানের চালের গুঁড়া দিয়ে নানান রকম পিঠা তৈরি হয়।
এজন্য এই হেমন্ত ঋতুটাকে নবান্ন উৎসবের ঋতু
বলা হয়। শুভ্র বললো তুমি দিদাকে বলবে
পিঠা বানাতে আমি পিঠা খাবো। আচ্ছা ঠিক আছে দাদু তোমার দিদাকে বলে তোমাকে সব
রকম পিঠা বানিয়ে খাওয়াতে বললো। ততক্ষণে
চাকচিক্য রৌদ্রের কিরণ পড়তে শুরু করেছে। শুভ্র বললো দাদু দাদু দ্যাখো ঘাসের উপর সূর্যের কিরণ লেগে কেমন চিকচিক করছে। দাদু বলয়
হেসে উঠে বললো এই হেমন্ত ঋতুর আমটি আমটি শীতের রাতে। সারারাতভর যে ঝিরিঝিরি কুয়াশা পড়ে দাদু।সেই বিন্দু বিন্দু শিশির কণা জমে ঘাসে, রৌদ্রের কিরণ পেয়ে হাসে। শুভ্র বললো কি সুন্দর দাদু পল্লী গ্রামের রূপ বৈচিত্র্য।
দেখলে যেনো প্রাণ জুড়ায় যায়। আমি আবার আসবো দাদু সবুজ সোনালী ফসলের মাঠ প্রান্তর খালবিল পুকুর নদীর ঘাট এসব দেখতে। এসো
যখন মন চাই স্কুল ছুটি দিলে বেড়াতে এসো দাদু।
তারপর শুভ্র দাদুর সাথে বাড়ি ফিরে এসে তার
দাদা অভ্র আর দিদি ঊর্মি সাথে চোখ জুড়ানো
ভোরের গাঁয়ের মাঠের প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা দিতে লাগলো। তারপর একসময় কালীপূজা শেষ হতেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবারো ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (বিকাল ৫:১৬)
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ১১ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT