ধর্মপাতা: হাশর আরবি শব্দ। হাশর অর্থ একত্র হওয়া, জড়ো হওয়া ইত্যাদি। তবে হাশরের দিনের বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- ইয়াউমুল হিসাব বা হিসাবের দিবস, ইয়াউমুল জাযা বা প্রতিদান দিবস, ইয়াওমুল মিয়াদ বা প্রতিশ্রুত দিবস, ইয়াওমুল জামেই বা একত্র হওয়ার দিবস, ইয়াওমুল মাহশার বা সমাবেশ দিবস ইত্যাদি। যে মাঠে সমাবেশ ঘটবে, তাকে বলা হয় ময়দানে মাহশার বা সমাবেশের স্থল। পরকালে বিচারের জন্য কবর থেকে উত্থিত হয়ে সব প্রাণী এ মাঠে দণ্ডায়মান থাকবে। পৃথিবীই হবে হাশরের মাঠ। হাদিসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীর উপরিভাগে একটি চাদর রয়েছে, একে পার্শ্ব ধরে টান দেওয়া হবে। ফলে গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সাগরে পতিত হবে। অতঃপর সমতল হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর আমি জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৮)
হাশরের ময়দানের অবস্থা
হাশরের ময়দানের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মানবজাতিকে লাল-শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
হাশরের ময়দানের ভূমি সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘(বিচার দিবসে) আল্লাহ জমিনকে এমন সমতল মসৃণ ধূসর ময়দানে পরিণত করবেন যে, তুমি তাতে কোনো বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না।’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১০৬-১০৭)
কেয়ামতের দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান (মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৮৩)
হাশরের ময়দানে সুপারিশ
হাশরের ময়দানে একটু সুপারিশের জন্য সবাই একে অন্যের কাছে ঘুরবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হাশরের ময়দানে মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর কাছে গিয়ে বলবে, আপনার সন্তানদের জন্য সুপারিশ করুন, তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তোমরা ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাও, কারণ তিনি আল্লাহর বন্ধু। অতঃপর মানুষ ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা মুসা (আ.)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। অতঃপর তারা মুসা (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি রুহুল্লাহ। অতঃপর মানুষ তাঁর কাছে আসবে। তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও। অতঃপর মানুষ তার কাছে আসবে, তিনি তখন বলবেন, হ্যাঁ, আমি এর যোগ্য, আমি সুপারিশ করব।’ (কুরতুবি, ১০ম খণ্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা)
কেয়ামতের দিন মহানবী (সা.) হবেন আদমসন্তানের নেতা। মহানবী (সা.) বলেন, ‘বিচার দিবসে আমি হব আদমসন্তানের নেতা। এজন্য আমার কোনো গর্ব নেই, আমার হাতে থাকবে প্রশংসার পতাকা, এজন্য আমি গর্বিত নই। আদম (আ.)সহ সব নবী আমার পতাকার নিচে থাকবেন।’ (কুরতুবি, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৭)