• আজ- বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন

ভারতের সাথে সুসম্পর্কের স্বার্থে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান

লেখক : / ২৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪
সাহিত্য
কলম

add 1

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ইতিহাস এবং বাস্তবতা বহুস্তরীয় ও জটিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য স্পষ্ট হলেও, সেই সহযোগিতার ব্যাখ্যায় ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের কিছু দাবি এবং দ্বিচারিতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকারের মর্যাদাকে আঘাত করেছে। একদিকে তারা আমাদের স্বাধীনতাকে স্বীকার করলেও, অন্যদিকে বিজয়কে নিজেদের অর্জন হিসেবে প্রচার করছে, যা আমাদের জন্য অপমানজনক।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সীমিত ভূমিকা থাকলেও, মূল লড়াইয়ে ছিলেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছিল, স্বাধীন করেনি। স্বাধীনতা অর্জনের মূল লড়াই আমরা নিজেরাই করেছি এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদেরই নেতা মেজর জিয়াউর রহমান। ইতিহাস সাক্ষী, প্রবাসী সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় বাহিনীকে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শেষের দিকে মাত্র কয়েকদিন ভারতীয় সেনাবাহিনী যুক্ত হয়। অথচ বর্তমান ভারতীয় প্রপাগান্ডা সেই ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের বিজয় হিসেবে প্রচার করছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছিল যেমন, তেমনি ফ্রান্স আমেরিকাকে স্বাধীন করতে সহযোগিতা করেছিল। ফ্রান্স কোনোদিন আমেরিকাকে নিজেদের অধীনস্ত হিসেবে দাবি করেনি বা তাদের স্বাধীনতার উপর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। এ ছাড়া চীনের দীর্ঘকালীন শাসনের অধীনে থাকা সত্ত্বেও, চীন ভিয়েতনামের প্রতি এমন মনোভাব দেখায়নি। কিন্তু ভারত সেই একই ধরনের সহযোগিতা দিয়ে বাংলাদেশকে তোষামোদের মধ্যে আবদ্ধ করার প্রয়াস পাচ্ছে, যা ভ্রাতৃত্ব বা সহযোগিতার মূল স্পিরিটকে আঘাত করে।

বাংলাদেশের জনগণ একটি সুস্পষ্ট অবস্থান চাইছেন: ভারতের সাথে সম্পর্ক এমন হতে হবে, যেখানে উভয় দেশ পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান করবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে অভিহিত করা বা ১৬ ডিসেম্বরকে নিজেদের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা—এসব কাজ থেকে ভারতকে বিরত থাকতে হবে। পাকিস্তানের কাছ থেকে লুন্ঠিত সম্পদের মূল্য বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত। ভারতের এমন প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি দরকার যে, ভবিষ্যতে তারা আর বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না।

বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, এবং মর্যাদাকে বজায় রাখতে ভারতের সঙ্গে একটি ন্যায়সংগত ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য এই সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের পেছনে থাকবে বাংলাদেশের বিশাল জনসমর্থন, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো এবং দেশের আপামর জনসাধারণ। ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে যেন আমাদের জাতীয় অর্জন ক্ষুণ্ণ না হয়, তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে ন্যায়ের ভিত্তিতে তা হতে হবে। কোনো চাপ বা অন্যায় প্রভাব এই সম্পর্কের ভিত্তি হতে পারে না। ভারতের সঠিক এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য সংরক্ষণ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (সন্ধ্যা ৭:৪৯)
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২৩ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ১১ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT