• আজ- শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন

উপমহাদেশের বরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ সুর স্রষ্ঠা, সেতার ও সুর বাহার বাদক ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ

লেখক : / ৩২৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

add 1
  • বিধান চন্দ্র দাশ

ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ’র নাম আমরা কম বেশি সবাই জানি। তবুও তার সম্পর্কে একটু আলোচনা না করলেই নয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার শিবপুর গ্রামে সঙ্গীত পরিবারেই তার জন্ম। তিনি ১৮৮৪ সালে ২৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সবদার হোসেন খাঁ (সদু খাঁ)। তিনিও ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁনের বড় দুই ভাই ফকির আফতাব উদ্দীন খাঁ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ। আরেক ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দীন আলী খাঁ সম্পর্কে কিছুই বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ। তার সম্পর্কে আমি বিগত সংখ্যায় আলোচনা করেছিলাম। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ মাত্র ১০ বছর বয়সে বড় ভাই ফকির আফতাব উদ্দীন খাঁর নিকট সঙ্গীতে ৭ বছর সরগম ও রাগরাগিনীর তালিম নেন। তারপর তিনি মাইহারে তার বড় ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দীন আলী খাঁর নিকট চলে যান। সেখানে তিনি সেতার ও সুরবাহারের তালিম নেন। এর কিছুদিন পর ওস্তাদ আলাউদ্দীন আলী খাঁ সাহেবের গুরু সুর সম্রাট মিঞা তানসেনের বংশধর ওয়াজির খাঁর নিকট সঙ্গীত শিক্ষার জন্য রামপুরা রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ওয়াজির খা ছিলেন রামপুরা রাজ্যের রাজ সভাবাদক। সেখানে ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ ১৩ বছর তালিম নেন। বিশুদ্ধ রাগ সঙ্গীতের প্রসারে তিনি কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দীন মিউজিক কলেজ নামে ২টি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। মাইহারে থাকাকালীন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ’র তত্ত্বাবধানে প্রাচ্য দেশীয় বাদ্যযন্ত্র দিয়ে অর্কেস্ট্রা দল গঠন করেন। তারা দুই ভাই প্রমাণ করে দেখান, এদেশীয় কনসার্ট পশ্চিমা অর্কেস্ট্রার চেয়েও কোন অংশে কম নয়। ১৯৩৫ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ শান্তিনিকেতনে যান। এখানে কবির অনুরোধে বিশ্বভারতীর যন্ত্র সঙ্গীত বিভাগের প্রধান পদে যোগদান করেন। এরই মধ্যে ২ ভাই অর্থাৎ ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ ও ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ মিলে আলম ব্রাদার্স নামক একটি বাদ্যযন্ত্রের কারখানা স্থাপন করেন। তারা সরোদ বাদ্যযন্ত্রের আধুনিক রূপ প্রদানের পাশাপাশি চন্দ্রসারাং, মন্ত্রনাদ ও মনোহরা নামে নতুন বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন করেন। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ’র রচিত রাগ রাগিনীর মধ্যে বরিষ, হেমন্তিকা, আওলকান্ড, ওমর সোহাগ, বসন্ত, ভেরো, শিবসোহাগ সহ আরো অনেক রাগ রাগিনী সৃষ্টি করেন। জীবনে বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার যন্ত্র ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জন্য তামঘা’ই ইমতিয়াজ খেতাব প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক মরণোত্তর পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অবশেষ ১৯৬৭ সালের ২রা এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পরিবার সম্পর্কে একটু না বললে যেন অসম্পন্ন থেকে যায়। তার স্ত্রীর নাম উমারুন্নেছা। তিনিও ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয়। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ’র ৬ সন্তান। ৩ পুত্র ও ৩ কন্যা সন্তান। (১) মোবারক হোসেন খাঁ, (২) আবেদ হোসেন খাঁ, (৩) বাহাদুর হোসেন খাঁ (শেখ সাদী খাঁ), কন্যা- (১) আম্বিয়া, (২) কোহিনুর ও (৩) রাজিয়া। এরা সবাই ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ। তারপুত্র মোবারক হোসেন খাঁ ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী থেকে প্রকাশ করেন তার প্রথম সঙ্গীত বিষয়ক বই। পরবর্তীতে তিনি সঙ্গীত ও শিশুবিষয়ক ৫০টি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব হিসেবে ১৯৮৬ সালে ২১শে পদক পান। ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। আমি বিগত সংখ্যায় লিখেছিলাম বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বদরবারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌছে দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তেমনি এই পরিবারটি সঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পৌছে দিয়ে দেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তাদের জন্মস্থানের পৈত্রিক ভিটাটি বাংলাদেশ সরকার যেন সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং একটি মিউজিয়াম স্থাপন সহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কারণ পরিবারটির কাছে আমরা সবাই ঋণী। তার বড় ভাই ওস্তাদ আলাউদ্দীন আলী খাঁ ও মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী জন হ্যারিসন কনসার্ট করে যে অর্থ উপার্জন করেছিলেন সেই উপার্জিত অর্থ মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের জন্য দান করেছিলেন। এই জন্য আমরা এই পরিবারটির কাছে সবাই ঋণী।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT