• আজ- শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন

অম্বরের শোভাম্বরী ও ঐতিহাসিক পটভূমি

মনিরুজ্জামান মুন্না / ৩৫৪ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

add 1

কেউ বলে থাকেন- মান্ধাতা তনয় অম্বরীশ এর নাম অনুসারে এ শহরের নাম অম্বর। আবার কেউ বলেন- অম্বর রাজকুল কছোয়া রাজপুত নামে পরিচিত হয়ে এ অঞ্চলে অবস্থান করাটাও অম্বর নামের কারণ হতে পারে। কছোয়া শব্দটি কূশের অপভ্রংশ। কূশ তথা রামচন্দ্রের মারফত কছোয়াকুলের উৎপত্তি হওয়ায় এরা খাঁটি সূর্যবংশী। নাম বিবর্তনের এ লোকশ্রুতি ও কিংবদন্তী কতখানি সত্য আর কতখানি কল্পনা তা যাচাই করা আজ আর ততটা সহজ নয়। কারণ- দূর অতীতের প্রান্তে ইতিহাস যেখানে পথ হারিয়েছে পৌরাণিক উপাখ্যানের কুয়াশায় এসব কাহিনীর জন্ম সেখানে। সুতরাং কিছু বিশ্বাস করার আগে ঐতিহাসিক নজির দাবি করা যাদের রীতি এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা নিবৃত করার মত হাতে-নাতে প্রমাণ দাখিল করার কোন সুযোগ একালে আর সেভাবে নেই। তবে এ বিষয়ের কিছু মৌলিক পুস্তিকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সে জিজ্ঞাসা নিবৃত্তির অন্যতম অনুষঙ্গ হতে পারে।
ইতিহাসের সেই প্রত্যূষকালে কছোয়াদের প্রথম আবাস বিহারের সাহাবাদ জেলার রোহতাসগড় পাহাড়ে। অযোদ্ধা থেকে তখন তাদের সেখানে আসাটা একেবারে অসম্ভব ভাবা যায়না। ‘শোন নদী’ তীরবর্তী এই সমতলশীর্ষ পাহাড়টির চূড়ায় বহু পুরাতন এক দূর্গ প্রাচীরের ভগ্নাবশেষ দেখা যায়। তারপর কোন মহতী বিনষ্টি এড়াবার জন্যে তাঁরা এলেন নারওয়ারও নিকটবর্তী গোয়ালিয়রে, মহাভারতে যাকে ‘নিষাদ দেশ’ বলা হয়েছে। ভবভূতির ‘মালতীমাধব’ নাটকের পটভূমিও এই দেশ। এখানে এদের আধিপত্যের অবসান উত্তরভারতে মুসলমানদের আবির্ভাবের সম-সাময়িক। আধিপত্য বিনষ্টের পূর্বাহ্ণে এরা দুটি শখায় বিভক্ত হয়ে যায়। যার অপেক্ষাকৃত দুর্বল (অপ্রধান) শাখাটি দুঃখ-সুখের নানা টানাপোড়নে আঠারো শতকের প্রায় শেষ অবধি নারওয়ারে টিকে থাকে। তারপর সে রাজ্য পুরোপুরিভাবে আয়ত্তে নেয় প্রবলপ্রতাপী সিন্ধিয়া। অপর শাখাটি পালিয়ে বহুদূর পশ্চিমে এসে অবস্থান নেয় রাজপুতনার ধোন্ধরে। ধোন্ধরে তখন শক্তিশালী মীনা আদিবাসীদের বাস। তাদের পরাস্ত করে আগন্তুকেরা (কছোয়ারা) যে রাজধানীর পত্তন করে তাই ‘অম্বর’। সেই থেকে ইতিহাসের ধূলা-মলিন-কুয়াশাছন্ন পথের যাযাবর বৃত্তির অবসান হল। ইতিহাসের সেই ভর পেয়ে পায়ের তলায় শক্ত মাটির আশ্রয়ে কছোয়া রাজপুতরা এ রাজবংশের ফুল ফোটানের ফল ফলানোর কার্যক্রম শুরু করে। যা নিশ্চিত নিরুদ্বিগ্ন শান্তিরই সমর্থক। সম্মৃদ্ধি আর উন্নয়নশীল পরিবর্তনের শোভায় শোভিত হয় অম্বর। পাজুন, ভগবানদাস ও মানসিংহের মত অসামান্য রণকূশল সেনাপতি, মির্জা রাজা জয়সিংহের (১ম জয়সিংহ) মত স্থাপত্য-ভাষ্কর্যের রসজ্ঞ পৃষ্ঠপোষক এবং সওয়াই জয়সিংহের (২য় জয়সিংহ) মত রাজনীতিজ্ঞ ও জ্যোতিষবিজ্ঞানী এ রাজবংশেরই সে সব ফুল-ফল। যাদের কর্ম নিদর্শন ও সৃজনশীল সৃষ্টি সম্ভারে আভিজাত্য, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয় অম্বর।
কছোয়া রাজপুতদের বাড়-বাড়ন্তের দিনে অম্বরের খ্যাতি-প্রতিপত্তির প্রভাবের এক প্রভা সর্বত্র দৃশ্যমান ছিল। তবে তারও বহু পূর্বে পৌরাণিক যুগে মৎস্যদেশ নামে এ অঞ্চল মহাভারতে উল্লেখিত হয়েছে। তাই অনুমান করা যায় যে অভিমন্যু-উত্তরার বিবাহ, কীচক বধ ইত্যাদি ঘটনা হয়তো এর কাছেপিঠে কোথাও ঘটে থাকবে। তাছাড়া অম্বর থেকে আনুমানিক পঞ্চাশ মাইল দূরে বৈরাট নামে যে লুপ্তনগর মাটি খুড়ে আবিষ্কার করা হয়েছিল, ধারনা করা হয় তা সম্ভবত পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের আশ্রয় বিরাটপুরীরই ভগ্নাবশেষ। প্রত্নবিদেরা অন্তত এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ যে বৈরাটের সাবেক সভ্যতা; হরপ্পা কিংবা মহেনজোদারোর থেকে কম প্রাচীন নয়। সম্রাট অশোকের আদেশে নির্মিত একটি বৌদ্ধ মঠ ও তার একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, বৈরাট সে সময়েও বিশেষ সম্মৃদ্ধশালী ছিল। তারপরে মীনা আদিবাসিদের প্রতাপের যুগেও ধোন্ধর রাজ্যের খ্যাতি-প্রতিপত্তি কম ছিল না। যদিও সে কালের খুঁটিনাটি ঐতিহাসিক বিবরণ মোটেই সহজলভ্য নয়। তবে তৎপরবর্তীকালে ভাসা-ভাসা তথ্যের ধোঁয়াশায় যে নৃপতির নামটি বিশেষ স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তিনি কছোয়ার কূলপতি পাজুন। পাজুন দিল্লীশ্বর পৃথ্বীরাজের ভাগিনীকে বিয়ে করেন এবং ভারতবর্ষে প্রথম মুসলমান রাজ্য বিস্তারের বিরুদ্ধে গ্রহণ করা সকল প্রচেষ্টার একনিষ্ঠ সহায়ক হন। পাজুন গজনীর সুলতান মাহমুদ এর আক্রমণের বিপক্ষে একাধিকরাব অস্ত্রধারন করেন।
একবার খাইবার গিরিবর্তে সাহাবুদ্দিন ঘোরীর বাহিনীকে এমন শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন যে, অল্প সংখ্যক অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে কোন মতে বেগতিকভাবে গজনীতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান ঘোরী। কনৌজকুমারী সংযুক্তা হরণের কাহিনী সর্বজনবিদিত। পৃথ্বীরাজ যে আগে-পিছে কিছুমাত্র চিন্তা না করে এই অসমসাহসিকতায় ব্রতী হয়েছিলের এমনটি ভাবার কোন অবকাশ নেই। কারণ অনুসরনকারী কনৌজসৈন্যদের মহড়া দেওয়ানোর ভার পাজুনের বিশ্বাসী তরবারির ওপর ন্যস্ত ছিল। পাজুন যুদ্ধে জীবন দিয়ে সে বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করেন। সদর্পে তরবারি চলানোরত অবস্থার এক পর্যায়ে পাজুন শত্রুপক্ষের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। অশ্বারোহী শত্রুসৈন্য তার মৃত দেহ দলিত করে যখন পুনরায় অগ্রসর হতে উদ্যত হয় সংযুক্তা-পৃথ্বীরাজ তখন বিপদ সীমানার বাইরে। পাজুনের পাড়ে অম্বরকূলের কৃতী নৃপতির নাম করতে হলে প্রায় পঁচশো বছর পার হয়ে এসে আকবরের সমসাময়িক মহারাজা মানসিংহের সময়ে পৌঁছাতে হয়। কারণ কার্যত গোটা পাঠান আমলে কছোয়া রাজবংশে উল্লেখযোগ্য একটিও সৈনিক বা শাসকের উত্থান হয়নি। আবার মোগল আমলের শেষ দু’শো বছরে একই গোষ্ঠী থেকে বিশেষ ব্যবধানে মানসিংহ, মির্জা রাজা জয়সিংহ, সওয়াই জয়সিংহ প্রভৃতির মত বিরাট ব্যক্তিত্ব যে একের পর এক আবির্ভূত হয়েছেন ইতিহাসে তা যেন এক দুর্বোধ্য লীলা। তাই নিরপেক্ষ বিচারে এরাও অম্বরকূলের অমিত বৈভব, ঐতিহাসিক সম্মান ও মূল্যায়নের আওতায় পড়েন। যাঁদের অসামান্য রাজনীতিজ্ঞান, অপরাজেয় রণ-নিপুণতা একাদিক্রমে প্রায় দু’শো বছর মোগলের তাবেদারিতে নিঃশেষিত হয়েছে।
অম্বরকূলের দুর্লভ প্রতিভার সে দাসত্বগ্লানির মনস্তাপ ক’য়জনকেইবা আহত করে? ক’জনইবা মোগল সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসের সে নেপথ্যের খবর রাখে? তবুও প্রসঙ্গক্রমে অলস কল্পনায় এটুকু বলে যাই- মানসিংহের পিতামহ ভাঁড়মল বা পালক পিতা ভগবান দাস যদি স্বার্থের বিরুদ্ধে মোগল পক্ষে যোগ না দিত, তবে সমসাময়িক ভারত-ইতিহাসে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সম্ভব হত কিনা সন্দেহ। এছাড়া আকবরের বিস্তৃত সাম্রাজ্যের বনিয়াদ পাকাপোক্ত করার কাজে মানসিংহের অসামান্য সমরপ্রতিভা নিয়োজিত না হয়ে যদি তা প্রতিপক্ষ ব্যবহারের সুযোগ পেত তবে মোগল সাম্রজ্যসৌধ অক্ষত থাকার নিশ্চয়তা বিতর্কিত হত। কারণ- রাণা প্রতাপের দৃঢ়তার সঙ্গে মানসিংহের সৈনাপত্য যুক্ত হলে শুধু রাজস্থান কেন সমগ্র মোগলবিরোধী শিবিরে যে উদ্দীপনার স্রোত বইত তার প্লাবনী-শক্তির সামনে মোগল-বৈভবের পরিণাম প্রশ্নবিদ্ধ হত। যাহোক, সে অসংঘটিত-অবাস্তব কল্পনাপ্রসূত ধারণার কথা বাদ দিয়ে আগের কথায় ফিরে আসি। অম্বরকূলের এ এয়ী সে যুগে নিজ-নিজ ক্ষেত্রে যে এক একজন দিকপাল ছিলেন সেটা আন্দাজ করার মত কিছু নজির নিশ্চয়ই রেখেছে। তাছাড়া এদের বীরত্বগাঁথা অবলম্বনে উপন্যাস-নাটক বাংলা ভাষায় এখন অপ্রতুল নয়। সেগুলির মাধ্যমে রাজস্থানসহ মোগল সাম্রাজ্যবাদের ক্রমবিকাশে এরা সহ অন্যান্য হিন্দু সমরসেনারা কতটা আস্থাশীল ও বিশ্বসভাজনতার পরিচয় বহন করেছে তা বাঙালি পাঠকের কাছে আজ আর অজানা নয়। গুজরাট-দাক্ষিণাত্য, বাংলা-বিহার, পাঞ্জাব, কাবুল প্রভৃতি রাজ্যপ্রাঙ্গণে মোগলশক্তির অস্তিত্বের বৈজয়ন্তীতে মানসিংহের অপরাজেয় বাহিনীর বিজয় গৌরব বহন করে। তাছাড়া আকবরের দরবারে এ রণনায়কের অমিত সম্মান সহজে অনুমান করায় যে, ভারত-ইতিহাসের যে কোন যুগে মানসিংহের মত অসামান্য প্রতিভাশালী সেনাপতি আর জন্মায়নি।
মির্জা রাজা জয়সিংহের সমরখ্যাতি পিতার মত দিগন্তবিস্তিৃত না হলেও তিনিই একমাত্র মোগল সেনাপতি যিনি সম্মুখযুদ্ধে শিবাজীকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। পরাজিত শিবাজী অসহাত্বর মিনতিতে জয়সিংহের কাছে তার প্রাণভিক্ষা ও নিরাপদ কোন আশ্রয়ের অধীনস্তে রাখার প্রার্থনা জানালেন। প্রার্থনা মঞ্জুরের লক্ষ্যে তখন বিষয়টি ঔরঙ্গজেবের সাথে পরামর্শ করলে ঔরাঙ্গজেব বন্দীদশা ছাড়াই শিবাজীকে তাঁর অধিনস্তে রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। জয়সিংহ সে প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে বিশ্বাসভরে শিবাজীকে দিল্লী প্রেরণ করেন। কিন্তু ওয়াদা ভঙ্গ করে ঔরঙ্গজেব সেখানে শিবাজীকে পেয়ে আরও পাকাপোক্তভাবে বন্দী ও নির্যাতন করতে শুরু করে দেন। বিষয়টি বিবেকের দংশনে জয়সিংহের আত্মসম্মানে আঘাত হানে। মোগলের বশ্যতা স্বীকার করলেও পরাজিত আশ্রিতের প্রতি এ দুর্ব্যবহার তাঁর নীতিতে বরদস্ত করল না। ফলে নানান কস্ট-ক্লেশ ও সুনিপুণ কৌশলে আত্মগোপন করে মোগল কারাগার থেকে শিবাজীকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এতে তাঁর বিবেকের দায়মুক্তি ঘটলেও ঔরঙ্গজেবের হীন ষড়যন্ত্রের নব আগ্রাসনের জাল থেকে আত্মরক্ষা করতে পরেননি নিজেকে।
বিরুদ্ধাচরনের এ মানবিক ঘটনার পরিণামে উন্নতচরিত্র রাজপুত নৃপতি জয়সিংহ ঔরঙ্গজেবের কুটিল আগ্রাসনের রোষে গুপ্ত হত্যায় ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রাণ হারান। জয়সিংহ প্রখর রাজনীতি জ্ঞান, উদার মহানুভবতা, আদর্শের মহত্ব এবং সমরকুশলতার সঙ্গে গণিত ও নক্ষত্র-বিজ্ঞানে যে অসামান্য বুৎপত্তির অধিকারী ছিলেন তার দৃষ্টান্ত সমগ্র ভারত ইতিহাসে বিরল। তাই মনীষার ক্ষেত্রে মহারাজা জয়সিংহকে অম্বরকূলের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা বললে হয়তো ভুল বলা হবে না। যার নিদর্শনে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর কয়েক বৎসর আগে অর্থাৎ গুপ্ত হত্যা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ১৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অম্বর সিংহাসনে আরোহন করেন। ইতিহাসে তাঁর মৃত্যুর এ তারিখটি এজন্য বিশেষ তাৎপর্য্যপূর্ণ যে, কার্যত এ সময় থেকে শিথিলভিত্তি মোগল সাম্রাজ্যসৌধ টুকরো-টুকরো হয়ে ভেঙে পড়তে আরম্ভ করে। দিল্লীর চারপাশে তাঁর নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রবিপ্লবী জাঠ, শিখ, মারাঠা প্রভৃতি গোষ্ঠীর শক্তিগুলি ক্রমশই প্রবল হয়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু সমসাময়িক যুগসন্ধিক্ষণে অর্থাৎ মির্জা রাজা জয়সিংহের মৃত্যুর কিছুকাল পূর্ব থেকে উত্তরসূরী হিসেবে সওয়াই জয়সিংহ অন্যান্য কাজের পাশাপশি রাজ্যশাসনের বিষয়গুলিতে সম্পৃক্ত হতে একটু একটু করে রাজ্যতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। তাই জয়সিংহের ঐ আকস্মিক আপঘাতী মৃত্যুতে ক্ষমতার বংশীয় ধারা সংরক্ষণে কোন বিপর্যয় ঘটেনি। সওয়াই জয়সিংহ পূর্বসুরীদের মত ততটা যুদ্ধবাজ, রাজনীতি ও সমরজ্ঞ না হলেও অত্যন্ত জ্ঞানী, চৌকোষ, বিজ্ঞানমনস্ক এবং শিল্প ও স্থাপত্যকলায় পারদর্শী ছিলেন। জ্ঞান, অনুসন্ধিৎসু গবেষণাপ্রীতি ও স্থাপত্যনুরাগীর কারণে নির্ঝঞ্জাট, সৌখীন, নিভৃত ও আয়াসী জীবন-যাপন পছন্দ করতেন। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে, গণিত ও স্থাপত্য শিল্পকলায় সওয়াই জয়সিংহ অভূতপূর্ব সাফল্যের নজির রাখেন। তাঁর সময়কালে তিনি জয়পুর, দিল্লী, কাশী, মথুরা ও উজ্জয়িনীতে যে, পাঁচটি মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন সেগুলিতে মুগ্ধ হয়ে ‘অহহধষং ধহফ ধহঃরয়ঁরঃরবং ড়ভ জধলংঃযধহ’ গ্রন্থের লেখক কর্নেল জেমস টড সওয়াই জয়সিংহকে ‘ভারত ইতিহাসে এক অন্ধকার যুগের দীপবর্তিকা’ বলে বর্ণনা করেছেন। পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু’র ‘উরংপড়াবৎু ড়ভ ওহফরধ’ গ্রন্থেও সওয়াই জয়সিংহের এই আশ্চার্য প্রতিভা অনুরূপভাবে সমগুরুত্বে সমাদৃত হয়েছে।
অম্বর প্রসঙ্গে সওয়াই জয়সিংহের সে গণিতপ্রীতি ও স্থাপত্যকলার ঐশ্বর্যকে একটু খেদের সাথে স্মরণ করতে চাই। কারণ তাঁর সময়কালে নগর নির্মাণের যাবতীয় স্বকীয় প্রতিভাপ্রসূত পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন ও নবপ্রবর্তনের উদ্দেশ্যে অম্বরের আট মাইল দক্ষিণে নিজের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে জয়পুর শহরের গোড়াপত্তন করেন। সেখানে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রিয় জ্যামিতিক সিদ্ধান্তগুলি নির্ভূলভাবে বিন্যস্ত করে নব-নব আকর্ষণের ইমারত গড়েন। শুধু তাই নয়; অম্বর থেকে জয়পুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনায় একে একে স্থানান্তরিত করতে থাকে রাজধানী ভিত্তিক সকল প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোগত স্থাপনাও। সবকিছুই এক প্রকার ঢেলে সাজানোর মত সাজিয়ে নিয়ে ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ নভেম্বর চুড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয় রাজধানী। তারপর থেকে তাঁর ও অন্যান্যদের ভাবনা, আন্তরিকতা, আগ্রহ ও মনোযোগ নিবিষ্ট হলো জয়পুর কেন্দ্রিক। অর্থাৎ লোকজন, রাজ্যপাট সবই উঠে গেল জয়পুরে। ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি বছরের প্রথম দিন থেকে নতুন ঠিকানা ব্যবহার করে যাবতীয় প্রশাসনিক দাপ্তরিক কাজ শুরু হয় সেখানে। সেই থেকে কছোয়াকূলের আধুনিক রাজধানী জয়পুর – অম্বর নয়। কার্যত এই সওয়াই জয়সিংহ’র মৃতুর সাথে-সাথেই কছোয়াকূলবংশের অবসান ঘটে। সেই সাথে পরিসমাপ্তি ঘটে ইতিহাসের ঘটনাবহুল অর্জন, সৃজন ও কর্মযজ্ঞের একটি উজ্জ্বল সমীক্ষণ। পশ্চিমের তপ্ত মরুভূমি থেকে হা-হা করে ছুটে আসা দূরন্ত বাতাস যেন পরিত্যক্ত অম্বরের ভাঙ্গা পাঁজরে চাপা কান্নার আওয়াজ তোলে। কেউ একান্ত মনোযোগে কান পেতে শুনতে চাইলে বোবা নীরবতার বুক চিরে সে-হাহাকার যেন শুনতে পায়। অম্বরকূলের দূর্লভ প্রতিভার ও নিদর্শনের এই যে বিবর্ণ বিবর্তন বা রূপান্তর তা ঐতিহ্য পরম্পরার একটি বিপর্যস্ত অশনি সংকেত বহন করে। তাই ঘুরে-ফিরে ক্রমবিকাশের ইতিহাস হাতড়িয়ে উপেক্ষিত, অবহেলিত বিস্মৃতপ্রায় সেই দূরসময় পরবর্তী বেহাল দশার এবং অদৃশ্যের অনুসন্ধিৎসু কৌতূহলী আগ্রহের অম্বরের অবস্থা একটু জানাতে চাই।
পিতা মানসিংহের রেখে যাওয়া প্রতাপী পরাক্রমশালী বীরত্বে অর্জিত গৌরব গাঁথার আভিজাত্য, ঐতিহ্যবাহী সৃষ্টি ও নির্মাণশৈলীর সৌন্দর্যমহিমার সাথে সাজুয্যের সংযুক্তিতে নিজের প্রজ্ঞাপ্রসূত অলঙ্কৃত অহংকার ও কীর্তিমান মহাত্মকে সমন্বয় করতে সওয়াই জয়সিংহ রাজি ছিল না। ফলশ্রুতিতে এভাবে সৃষ্টির সতন্ত্রতা নির্দেশ করতে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ভালোলাগা খেয়ালী অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, সনাতনী ঐতিহ্যমণ্ডিত অম্বরের কৃষ্টি-সভ্যতার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা রক্ষা নিদারুণভাবে ব্যাহত হয়। কিংবদন্তীর ব্যবচ্ছেদের সে আত্মঘাতী হটকারি সিদ্ধান্তে অম্বরের পাশাপাশি কালের ধূলোয় চাপা পড়ে যায় কছোয়া কুলবংশোদ্ভূত আদি অস্তিত্ব, উত্থান ও পটভূমির একটি অধ্যায়। ইতিহাসের বাঁক-বিতণ্ডার মিথস্ক্রিয়ায় অম্বরের আদিমতা নব প্রজন্মের আড়ালে চলে যায়। যার সুযোগ নিয়ে দিল্লির মোগলীয় সাম্রাজ্যবাদী পুরোধারা তখন তাদের দীর্ঘদিনের লালিত ঈর্ষা চরিতার্থে এর অবশিষ্ঠ কিছু-কিছু বিচিত্র রঙ ও ঢঙের ক্ষত-বিক্ষত ইমারত সংস্কারের নামে, তার যথাযথ প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টার পরিবর্তে ঢালাও ভাবে সাদা (চুন) ও কালো (আলকাতরা) রঙের প্রলেপ দিয়ে কারুকার্যখচিত টেরাকোটা ও বর্ণিল পাথরের দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক সৌন্দর্যশৈলীকে চিরতরে ঢেকে ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত অম্বরে যে আশ্চর্য ভঙ্গুর রাজপ্রাসাদটি বিস্ময়ের উদ্রেক করে, সেটি মির্জা রাজা জয়সিংহের বহুমুখী প্রতিভার একটি নিদর্শন। স্থাপত্যের বলিষ্ঠতায় ও ভাস্কর্যের নৈপূণ্যে দিল্লী আগ্রার অতুল বৈভবের সঙ্গে এ প্রাসাদ অনায়াসেই পাল্লা দিতে পারতো। বিশপ হেবার থেকে আরম্ভ করে অল্ডাস হাস্কলি অবধি বিদেশি পর্যাটকদের জনে-জনে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে এই অনুপম স্থাপত্যকীর্তিটির। এর সুউচ্চ তোরণটির অভিনবত্ব, দেওয়ান-ই-আমের কারুকার্য, ত্রয় শীষমহলের টুকরো কাঁচের নিখুঁত প্রতিস্থাপনের সৌন্দর্য ও ডালিম বাগানের রঙের অজস্রতায় সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে কেউ পারতো না। বস্তুত এমন সুসজ্জিত পরিপাটি ও দৃষ্টিনন্দন রাজপ্রাসাদ উত্তর ভারতের আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। পরিবর্তিত দশার অম্বরের মর্ম উদঘাটন করে রুডিয়ার্ড কিপলিঙ এর একটি চমৎকার বর্ণনা আছে। ‘স্বচ্ছ এক সরোবরের তিন দিক ঘিরে পাহাড়ের কোনে দূর বিস্তৃত অম্বর শহর। প্রত্যূষের তরল অন্ধকারে আশা জাগে, বেলা বাড়লে ঘুমন্ত অম্বর বুঝি জেগে উঠবে। কুয়াশায় ঢাকা শীতল ঊপত্যকায় সূর্যের আলো এসে পড়ে; পথিকের মনে এ-প্রতীতি বেদনার মত বাজে- অম্বরের এ ঘুম কোন দিন কি আর ভাঙবে না’? সেই সোনার ফসল আর উৎকর্ষের দিনগুলি অম্বরের স্মৃতিকে দুঃস্বপ্নের মত পীড়িত করে। বহুদিনের পুরানো রাজপীঠের গৌরব-আভরণগুলি একে একে খসে ধুলায় মিশতে থাকে। শুধু রাজপ্রাসাদসহ গুটিকয়েক সুললিত মন্দির শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকে। কালের প্রবাহে অবসন্ন অম্বর শঙ্কিত-যত্নে স্তিমিত নয়নে দগ্ধ আকাশের নীচে অতীত স্মৃতির স্বপ্নজালে সেগুলিকেই পরম মমতায় আগলে থাকে টিকে রাখার বাসনায়। যেন ব্যবচ্ছেদের বিরহ যাতনায় এক কালের বিস্ময়ী বিস্ময় অবাক তাকিয়ে কয়, জয়পুর আজ ভরপুর হলো, আমি হলাম অসহায়।
অম্বর প্রাসাদের অদূর থেকে নিচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে আঁকা-বাঁকা সুরক্ষিত প্রশস্ত পথ বাগান পার হয়ে শেষ হয়েছে বিশালকার প্রবেশ তোরণের সামনে। গ্রানিট ভিত্তিমূল থেকে প্রাসাদের দেওয়াল খাঁড়া উঠে গেছে বলিষ্ঠ ঋৃজুতায়। পুরানো হাতির দাঁতের চেয়েও ম্লান রঙ সে দেওয়ালের। অনাদরে শ্যাওলার ছোপ আর বিক্ষিপ্ত লতা গুল্মের উদ্ভব ঘটেছে সেখানে। যেন তা প্রকৃতির স্বাভাবিক বিন্যাস ও বৈচিত্রের এক লহমায় আধুনিক সভ্যতা থেকে বিচ্যূত হয়ে জমকালো সামন্ততান্ত্রিক যুগের স্বপ্নীল স্বাক্ষ্য হয়ে জন্মেছিল। দিগন্ত মোড়া নীল আকাশে হলুদের ভাঙা-ভাঙা ছায়া হ্রদের তরঙ্গকে শিহরিত করতো। তার পাশে একফালি বাগানের মধ্য দিয়ে প্রাসাদে উঠবার পথ। শ্বেতপাথরে বাঁধানো ফোয়ারা, বাহারি ঝাউগাছ আর সবুজ ঘাসের গালিচামণ্ডিত কিছু জমিন। ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে নিচের উপত্যকায় বিগত গৌরব অম্বরের সম্যক শহর নজরে পড়ে। অধিকাংশ ভগ্নবাড়ির টুকরো-টুকরো অংশ ছড়িয়েছে এদিক-সেদিক। যেন তা পরিহাসের মত ধূলায় লুটিয়ে থাকে অম্বরের অতীত পরিচয় রক্ষার সাাক্ষী হয়ে। ভারি পাথরের ফলাকাটা দেওয়াল ফিকে নীল পাহাড়ের গা বেয়ে উঠা-নামা করে মিলে গেছে দূর নীলিমার তামাটে প্রান্তে। ফটক পার হতেই বিস্তীর্ণ অঙ্গনের বাঁহাতি কিনারা দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে ‘যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে’। এইখানেই সেই বিখ্যাত প্রতিমা যা বঙ্গ বিজয়ের পর মানসিংহ বাংলাদেশ থেকে অম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন। এমন সুঠাম, জীবন্ত মূর্তির তুলনা গোটা ভারতবর্ষেই বিরল। উগ্র যশোরেশ্বরী সম্বন্ধে জনশ্রুতি আছে যে, সাবেক কালে দেবীর তুষ্টি কামনায় এখানে নরবলি প্রথা প্রচলিত ছিল। তবে মানবহিতৈষী সুরুচিসম্পন্ন রাজা মানসিংহ বা মির্জা রাজার সে সময়কালেই এ বর্বরতার লৌকিক কাহিনীকে অতিরঞ্জিত ও অন্ধভক্তির লোকাচার ভাবা হত। তাই সর্বজনসিদ্ধ ছাগল বলির প্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল। যশোরেশ্বরী মন্দিরের পূর্বদিকে পাথর বাঁধানো বিস্তৃত চত্বরের একপাশে ‘দেওয়ান-ই-আম’। পিছনে জাফরি-কাটা অলিন্দ, এর পাশেই অম্বর প্রসাদের প্রবেশদ্বার ‘সওয়াই তোরণ’। কিছু দূরে সুসজ্জিত ‘বিলাস প্রকোষ্ট’- যেখানে সৈনিক বেশে অন্যান্য সৈন্য-সামন্তদের সাথে নিয়ে স্বল্প অবকাশ যাপনের জন্য কতবার ফিরে এসেছেন রাজা মানসিংহ। পুনরায় প্রয়োজনের নিদারুন বাস্তবতার হাতছানিতে ছুটেছে কাবুল, কান্দাহার, দাক্ষিণাত্য, বাঙলায়…..। প্রাসাদের কাছাকছি অবস্থিত ‘মীরাবাঈ মন্দির’। অনাদৃতা চিতোর রাজকূলবধূ মীরাবাঈ যখন চিতোর পরিত্যাগ করে পদব্রজে বৃন্দাবন যাত্রা করেন তখন পথিমধ্যে অম্বরে পৌছে কিছুদিন বিশ্রাম করেন। তাঁরই স্মৃতিরক্ষায় এ মন্দির নির্মিত। দেবালয়টি যেন ভগবৎ প্রেমর নিষ্কম্প দীপশিখায় উৎসারিত হয়ে স্তব্ধ হয় পাষাণ কায়ায়। একথা সত্য যে, অম্বরের সাবেক কীর্তিমান অবকাঠামোর কৃতিত্ব খ্যাতি প্রতিপত্তি একতরফাভাবে রাজা মানসিংহের। জয়সিংহ শুধু সেগুলিতে মাঝে-মধ্যে উপযুক্ত সংস্কার ও রঙচড়িয়েছিলেন। আর সওয়াই জয়সিংহ তো এসব থেকে এক রকম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। যাহোক সবমিলিয়ে অম্বর তখন যেন হিন্দু স্থাপত্য-রীতির এক অনন্য বিরল ও সর্বোৎকৃষ্ট আলোক নিকেতন। অল্ডাস হাক্সলি তাঁর ‘জেসটিং পাইলেট’ গ্রন্থে অম্বর প্রাসাদের উচ্ছ্বসিত প্রসংশা করেন।
এত হতাশা, ক্ষোভ ও নৈরাশ্যের ঘটনা প্রবাহের মধ্যে আশার কথা এই যে, অম্বরের সে সময়কার সেই ভগ্নদশার কিছু নিদর্শন স্থায়ীভাবে হারিয়ে যায়নি। গতিশীল কালের খেয়ায় পাড়ি দিতে-দিতে একটা সময়ে এসে ভারতের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধতন আধিকর্তাদের বিষয়টি নজরে আসে। তাঁরা অপেক্ষাকৃত কম ভঙ্গুর পূরার্কীতির দর্শনীয় নিদর্শনগুলিকে পর্যটন জোনের আওতায় নিয়ে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তবে এখন আর তা অম্বরের নয়, জয়পুরের পরিচয়ের সাথেই তার পরিচয়। রাজস্থান যেমন ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ প্রদেশ; অম্বরের সংযুক্তিতে এর রাজধানী জয়পুরও তেমনি সবচেয়ে বড় শহর। বর্তমান যার দর্শনীয় নিদর্শনের বহরে যুক্ত হয়েছে- জলমহল, লক্ষ্রীনারায়ণ মন্দির, এলবার্ট হল মিউজিয়াম, হাওয়া মহল, যন্ত্রর-মন্ত্রর প্রভৃতি। তবে ইতিহাসের সুদূর অতীত আঁধার ঘেঁটে-ঘেঁটে নিবন্ধটি প্রস্তুত হওয়ায় এর বেশকিছু বিষয়বস্তু, ঘটনার তথ্য-উপাত্ত, পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতা, সময়, অবস্থা ও অবস্থানের সাথে বর্তমানের মিল নাই। তাই এখনকার পর্যটকরা অনেককিছু দেখলে বা জানলেও অদেখা ও অজানায় থেকে যাবে আরও কিছু। অর্থাৎ তাদের পক্ষে এখন আর সেখানে অম্বরকে আলাদা করে এত সুন্দর বর্ণনায় দেখা, শোনা ও জানার সুযোগ নেই। মূলত: সে ঘাটতি পুরনের প্রচেষ্টায় এ প্রয়াস। তাই লেখাটি পড়ে নিয়ে কখনো কেউ এ পূর্ণভুমির আঁচল তলে বেড়াতে গেলে জ্ঞান, মুক্তি আর আনন্দ সাধনের অন্বেষণে খুঁজে পাবে আত্মঅস্তিত্ব উন্মোচনের পথ। যে পথ ধরে চলতে চলতে প্রাকৃতিক পৃথিবীর নশ্বর ঐতিহ্যের মায়াডোরে একাত্ম ও আত্মলীনে ভেঙ্গে যাবে বন্ধাত্বের যত স্তম্ভ।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT